বিমানবন্দর আধুনিকীকরণে ‘দুর্নীতি’ |
সংসদে সিএজি রিপোর্ট শীঘ্রই, চিন্তিত কংগ্রেস |
প্রেমাংশু চৌধুরী • নয়াদিল্লি |
ফের সিএজি-র রিপোর্ট নিয়ে ঝড়ের মুখে পড়তে চলেছে ইউপিএ-সরকার।
কেন্দ্রীয় অর্থমন্ত্রী পি চিদম্বরম ঘোষণা করেছেন, সংসদের চলতি অধিবেশনেই কয়লা খনি বণ্টন এবং দিল্লি বিমানবন্দর আধুনিকীকরণের বরাত সংক্রান্ত সিএজি-র তিনটি রিপোর্ট পেশ হবে। এতেই অশনিসঙ্কেত দেখছে ইউপিএ সরকার তথা কংগ্রেস শীর্ষ নেতৃত্ব। কয়লা খনি বণ্টন নিয়ে ইতিমধ্যেই ‘টিম অণ্ণা’ প্রশ্ন তুলেছে। এ বার দিল্লি বিমানবন্দর নিয়েও প্রশ্নের মুখে পড়তে হবে সরকারকে। সরকারি সূত্রের খবর, দিল্লি বিমানবন্দরে বরাত দেওয়ার ক্ষেত্রে সিএজি (কন্ট্রোলার অ্যান্ড অডিটর জেনারেল) বড়সড় দুর্নীতির অভিযোগ তুলেছে। একটি বেসরকারি সংস্থাকে ‘সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার’ পাশাপাশি সরকারের বিপুল আর্থিক ক্ষতির কথাও বলা হয়েছে। সিএজি বলছে, বিমানবন্দর সংলগ্ন বিশাল পরিমাণ জমি ৫৮ বছরের জন্য ওই বেসরকারি সংস্থাকে মাত্র ১০০ টাকায় লিজ দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে ওই সংস্থা প্রায় ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা আয় করতে পারে। সরকার সেই আয়ের সুযোগ হারিয়েছে। সিএজি-র এই অভিযোগ খারিজ করে পাল্টা যুক্তি দিয়েছে বিমান মন্ত্রক। সিএজি চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করার সময় তাদের যুক্তিকে গুরুত্ব দেয়নি বলে বিমান মন্ত্রক লিখিত অভিযোগ জানিয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর সচিবালয়ের সবুজ সঙ্কেত নিয়ে তা করা হয়েছে।
সিএজি রিপোর্ট পেশের বিষয়টি এত দিন বিভিন্ন প্রক্রিয়ার জেরে ঝুলিয়ে রাখা হয়েছিল। কিন্তু সিএজি চূড়ান্ত রিপোর্ট জমা দেওয়ার পরে সংসদে তা সরকারকে পেশ করতেই হবে। তাই চিদম্বরম সিএজি-র রিপোর্ট সংসদে পেশ করবেন বলে ঘোষণা করায় অস্বস্তিতে পড়েছে কংগ্রেস। কারণ আখেরে বিজেপিই এর ফায়দা তুলবে বলে কংগ্রেস নেতৃত্বের আশঙ্কা। ঠিক যে ভাবে এর আগে টু-জি স্পেকট্রাম বণ্টন এবং কমনওয়েল্থ গেমসের দুর্নীতি সংক্রান্ত সিএজি-র রিপোর্টকে সরকারের বিরুদ্ধে অস্ত্র করেছিল বিজেপি। সিএজি-র এই রিপোর্ট নিয়ে চিন্তায় ইউপিএ-র শরিক এনসিপি-ও। কারণ প্রফুল্ল পটেল বিমানমন্ত্রী থাকার সময়ই দিল্লি বিমানবন্দর আধুনিকীকরণের বরাত দেওয়া হয়েছিল।
স্পেকট্রাম বণ্টনের ক্ষেত্রেও ইউপিএ সরকার যুক্তি দিয়েছিল, কোনও দুর্নীতি হয়নি। সে সময় সিএজি যে ১ লক্ষ ৭৬ হাজার কোটি টাকা ক্ষতির কথা বলেছিল, তা পুরোপুরি আনুমানিক বলে দাবি করেছিল সরকার। এ বার দিল্লি বিমানবন্দরের ক্ষেত্রেও সরকার ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা আয়ের সুযোগ হারিয়েছে বলে সিএজি-র দাবি। বেসরকারি নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে যৌথ উদ্যোগে তৈরি হয় দিল্লি ইন্টারন্যাশনাল এয়ারপোর্ট লিমিটেড (ডায়াল)। সিএজি-র খসড়া রিপোর্টে বলা হয়েছে, এই চুক্তির ফলে ওই সংস্থাকে কিছু কর ছাড় দেওয়া হয়েছে। যার জেরে সরকারের কর বাবদ প্রায় পৌনে চার হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হয়েছে। এ ছাড়াও দিল্লি বিমানবন্দরে ‘ডেভেলপমেন্ট ফি’ বসিয়ে বেসরকারি সংস্থাকে প্রায় সাড়ে তিন হাজার কোটি টাকা লাভ করার সুযোগও করে দেওয়া হয় বলে অভিযোগ তুলেছে সিএজি। বিমানবন্দর সংলগ্ন প্রায় আড়াইশো একর জমি ওই সংস্থাকে বাণিজ্যিক ব্যবহারের জন্য দেওয়া হয়। যা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে সিএজি।
মার্চ মাসে সিএজি-র খসড়া রিপোর্ট পাওয়ার পরেই এই সব প্রশ্ন খারিজ করে দেন বিমান মন্ত্রকের তৎকালীন সচিব নাসিম জাইদি। ২৬ জুন সিএজি বিনোদ রাইকে এ বিষয়ে চিঠিও লেখেন তিনি। চিঠিতে তিনি দাবি করেন, সিএজি যে সব আর্থিক ক্ষতির হিসেব দিচ্ছে, তাতে বড়সড় ভুল রয়েছে। এ ছাড়া বিমান মন্ত্রককে নিজের অবস্থান পুরোপুরি ব্যাখ্যা করার সুযোগ দেওয়া হয়নি। মন্ত্রকের বক্তব্য, তাদের সম্পূর্ণ যুক্তি না শুনেই চূড়ান্ত রিপোর্ট তৈরি করেছে সিএজি। মন্ত্রকের কর্তা এবং বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষের যুক্তি, সিএজি ধরে নিচ্ছে, বিমানবন্দর সংলগ্ন জমি থেকে ১ লক্ষ ৬৩ হাজার কোটি টাকা আয় একবারেই উঠে আসবে। কিন্তু এ জন্য ওই জমির উন্নয়ন বাবদ যে খরচ করতে হবে, তা ধরা হচ্ছে না। তা ছাড়া, সংশ্লিষ্ট সংস্থা শুধু নয়, ওই আয়ের প্রায় অর্ধেক অংশ জাতীয় বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষও পাবে। সংশ্লিষ্ট সংস্থাকে যে সব বাড়তি সুবিধা দেওয়ার অভিযোগ তুলেছে সিএজি, সেগুলো বরাত দেওয়ার আগেই ঠিক হয়ে গিয়েছিল বলেও বিমান মন্ত্রকের যুক্তি। মন্ত্রকের বক্তব্য, যে চুক্তি হয়েছে, তাতে মন্ত্রিগোষ্ঠী এবং কেন্দ্রীয় মন্ত্রিসভা অনুমোদন দিয়েছে। রাজনৈতিক সূত্রে বক্তব্য, নাসিম জাইদি ৩১ জুলাই অবসরের পরে তাঁকে নির্বাচন কমিশনার নিয়োগ করা হয়েছে। মন্ত্রকে দুর্নীতি হয়ে থাকলে তা করা হত না।
কিন্তু বিজেপি-সহ বিরোধী দলগুলি যে এতে কান দেবে না, তা ধরে নেওয়া যায়। সিএজি-র এই রিপোর্ট যখন মুরলীমনোহর জোশীর নেতৃত্বাধীন পিএসি তে আসবে, তখন বিজেপি এই নিয়ে আসরে নামার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তাতেই রক্তচাপ বাড়ছে মনমোহন সরকারের। |