প্রতিশ্রুতিই সার! আশ্বাস থাকা সত্ত্বেও দুর্গাপুজোর সময়ে কলকাতা বিমানবন্দরের নতুন টার্মিনাল চালু হওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়ল। এ নিয়ে তিন বার লক্ষ্যপুরণ থেকে সরে এলেন বিমানবন্দর কর্তৃপক্ষ।
বিমানমন্ত্রী অজিত সিংহ মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে পুজোর আগে টার্মিনাল চালু করার আশ্বাস দিয়ে যান। বিমানবন্দর সূত্রের খবর, প্রাথমিক ভাবে তাই ঠিক হয়েছে মহালয়ার সময়ে আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হবে। তবে যাত্রীদের জন্য টার্মিনালের দরজা খুলতে লাগবে আরও দু’মাস। যদিও কলকাতা বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা এখনও আশাবাদী। মঙ্গলবার তিনি বলেন, “প্রতি মূহূর্তে পরীক্ষা চালিয়ে যাচ্ছি। এখনও চেষ্টা করছি পুজোর আগে অন্তত একটি সংস্থার উড়ান চালু করার।”
যে ১৮টি এরোব্রিজ (বিল্ডিং থেকে বিমানে ওঠার স্বয়ংক্রিয় বারান্দা) আসার কথা ছিল, পরিবর্তিত পরিস্থিতিতে তার সংখ্যাও কমে গিয়েছে। জানা গিয়েছে, আপাতত ১৪টি এরোব্রিজ আসছে। যার মধ্যে অগস্ট মাসে আসার কথা মাত্র ছ’টি। বাকি আটটি কলকাতায় পৌঁছবে ডিসেম্বর মাসে। জেট এবং ইন্ডিগোর কর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কর্তৃপক্ষ চাইছেন, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব নতুন টার্মিনাল থেকে নিয়মিত উড়ান চালু করতে। কিন্তু দুই বিমানসংস্থা জানিয়ে দিয়েছে, ন্যূনতম পরিকাঠামো ছাড়া তাদের পক্ষে নতুন টার্মিনাল থেকে উড়ান চালু করা সম্ভব নয়। |
নতুন টার্মিনালের পরিকাঠামো যে এখনও বিশ বাঁও জলে, তা কর্তৃপক্ষের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্তেই পরিষ্কার হয়ে গিয়েছে বলে বিমানসংস্থার কর্তারা মনে করছেন। মাসখানেক আগে নতুন টার্মিনালে পরীক্ষামূলক যাত্রী উড়ান চালায় ইন্ডিগো। মুম্বই থেকে আসা যাত্রীরা নতুন টার্মিনাল দেখে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেন। সে দিন বিমানবন্দরের অধিকর্তা বি পি শর্মা জানান, ১৫ দিনের মধ্যেই কোনও আন্তর্জাতিক উড়ানে আসা যাত্রীদের নতুন টার্মিনালে নামানো হবে। অগস্ট মাসে অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে শহর থেকে ছেড়ে যাওয়া দু’টি উড়ানের যাত্রীদের নতুন টার্মিনাল দিয়ে বিমানে তোলা হবে।
কিন্তু যেহেতু গত এক মাসে নতুন টার্মিনাল তার উপযোগী হয়ে ওঠেনি, তাই আবার অভ্যন্তরীণ ‘অ্যারাইভালেই’ পরীক্ষামূলক উড়ান চালানোর পরিকল্পনা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। প্রাথমিক ভাবে ঠিক হয়েছে ১৭ অগস্ট, শুক্রবার ইন্ডিগো, জেট এবং স্পাইসজেট তিনটি উড়ানের যাত্রীদের নতুন টার্মিনাল দিয়ে বার করে আনা হবে। তফাৎ শুধু একটাই। এক মাস আগে ব্যবহার করা হয়েছিল ‘ডিপারচার’ এলাকা। এ বার ব্যবহৃত হচ্ছে ‘অ্যারাইভাল’ এলাকা। অধিকর্তা বলেন, “একের পর এক উড়ান এনে আমরা এ ভাবে এখন পরীক্ষা চালিয়ে যাব।” প্রাথমিক ভাবে জেট ঠিক করেছে, তারা মুম্বই-কলকাতা উড়ান চালাবে। এক কর্তার কথায়, “ওই উড়ানে বিদেশি ও সেলিব্রিটিরা থাকেন। তাঁদের সামনে নতুন টার্মিনাল পরীক্ষায় উতরোলে তো ভালই!” অর্থাৎ, একই জিনিস দেখিয়ে আবার প্রশংসা কুড়িয়ে নেওয়া।
বিমান থেকে নামার সময়ে যাত্রীদের তল্লাশি করতে হয় না। তাঁদের মালপত্র সময় মতো কনভেয়ার বেল্ট মারফত পৌঁছচ্ছে কি না, তা দেখা হয়। তবে জুলাইয়ে সে পরীক্ষা যখন সফল হয়েছে তবে ফের একই পরীক্ষা কেন চালাবেন কর্তৃপক্ষ, প্রশ্ন উঠছে তা নিয়ে। বিমানসংস্থার কর্তাদের মতে, ডিপারচারের জন্য এক্স-রে মেশিন, চেক-ইন কাউন্টার, নিরাপত্তা বেষ্টনী, কনভেয়ার বেল্ট-এর মতো পরিকাঠামো দরকার। আন্তর্জাতিক উড়ানে আসা যাত্রীদের জন্য প্রয়োজন অভিবাসন ও শুল্ক দফতরের কাউন্টার। বিমানবন্দর সূত্রে খবর, নতুন টার্মিনালে সে সব ব্যবস্থা এখনও তৈরি হয়নি। |