তখন সবে ভোরের আলো ফুটেছে। সল্টলেকে ‘সাই’ কমপ্লেক্সের পাঁচিলের পাশ থেকে সদ্যোজাতের ক্ষীণ কান্নার আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে গিয়েছিলেন প্রাতর্ভ্রমণকারীরা। শব্দের উৎসটা প্রথমে কেউই বুঝতে পারেননি। পরে বোঝা যায়, পাঁচিলের পাশে ঝোপ-জঙ্গল থেকে আওয়াজটা আসছে। মঙ্গলবার শেষ পর্যন্ত ওই ঝোপের মধ্যে থেকেই উদ্ধার হল এক-দু’দিন বয়সের একটি শিশু।
সোমবার রাতে ওই সদ্যোজাত পুত্রকে কেউ ফেলে গিয়েছিল ঝোপের মধ্যে। রাতে বৃষ্টি পড়েছিল। ঝোপে পোকামাকড়ের মধ্যে, বৃষ্টিতে ভিজে রাতভর একা পড়েছিল শিশুটি। ক্ষীণ স্বরে কাঁদা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তার। মঙ্গলবার সকালে শিশুটিকে দেখতে ভিড় জমে যায়। প্রত্যক্ষদর্শীদের একাংশ জানান, শিশুটির শরীরে সূচ ও ক্যাথিটার লাগানোর চিহ্ন ছিল। এই অবস্থায় সে যে বেঁচে রয়েছে, সেটাই আশ্চর্যের। যারা শিশুটিকে ফেলে গিয়েছিল, ওকে মেরে ফেলাই তাদের উদ্দেশ্য ছিল বলে অনুমান প্রত্যক্ষদর্শীদের। |
এই অমানবিক ঘটনার পাশাপাশি মঙ্গলবার উল্টো ছবিরও সাক্ষী রইল সল্টলেক। শিশুটিকে উদ্ধারের পরেই খবর যায় সাই কমপ্লেক্সের উল্টো দিকের ঝুপড়িতে। সেখানকার বাসিন্দা, পেশায় পরিচারিকা আরতি দে সঙ্গে সঙ্গেই শিশুটিকে নিজের কাছে রাখার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। কিন্তু খবর পেয়ে বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ এসে ওই শিশুটিকে নিয়ে যায় বিধাননগর মহকুমা হাসপাতালে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ জানান, শিশুটির বয়স এক বা দু’দিন। সে সেপ্টিসেমিয়ায় আক্রান্ত হয়েছে। তবে তাকে সুস্থ করার সব রকম চেষ্টা চলছে। হাসপাতালের এক নার্সও শিশুটির দায়িত্ব নিতে চান।
আরতিদেবী শিশুটিকে দেখতে হাসপাতালেও যান। তাঁর কথায়, “ওইটুকু দুধের শিশুকে কেউ ও ভাবে ফেলে যেতে পারে! ওকে আমি মানুষ করব।” যদিও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, শিশুটি সুস্থ হওয়ার পরে তাকে আইন অনুযায়ী সরকারি হোমে দেওয়া হবে। ফলে ওই শিশুটিকে মানুষ করার ইচ্ছা এখনই পূরণ হবে না আরতিদেবীর।
দু’দিন বয়সের ওই শিশুটি এখন বিধাননগর হাসপাতালের আকর্ষণের কেন্দ্র। নার্স থেকে কর্মী, সকলেই তাঁকে এক বার দেখে যাচ্ছেন। এ দিকে, বিধাননগর দক্ষিণ থানার পুলিশ ঘটনার তদন্ত করছে। কে বা কারা ওই শিশুটিকে ফেলে গেল, তা নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদ করছে পুলিশ। |