এমু পাখির শক্ত পায়ে ভর করছে দশের স্বপ্ন |
রোজগার তো করতে হবে। কিন্তু তা হবে এমন কিছু, যা ঝুঁকির হলেও নতুন। আবার লাভও থাকবে।
সেই আশাতেই কাঁকসার পিয়ারিগঞ্জের জঙ্গলে জোরকদমে এমু পাখির চাষ শুরু করেছেন জনা দশেক যুবক। এ তল্লাটে তো বটেই, রাজ্যেই এখনও এমু পাখির খামারের সংখ্যা হাতেগোনা। খামারে পাখিরা বেড়ে উঠছে। কয়েক দিন বাদেই লাভের মুখ দেখবেন, সেই স্বপ্ন নিয়েই এখন দিন গুনছেন তাঁরা।
ওই যুবকেরা জানান, এমুর ডিম, মাংসই নয়, চামড়া এমনকী নখ ও পালকেরও চাহিদা রয়েছে। আর এমু প্রতিপালন করাও তেমন কঠিন নয়। শুধু নিয়ম মেনে খাবার ও জল দিতে হয়। সেই সঙ্গে নিয়মিত স্নান করাতে হয়। তেমন বাড়তি নজরদারির দরকার পড়ে না। রোগের হারও কম। এরা গড়ে ২৫ বছর পর্যন্ত বাঁচে। বছর দেড়েক বয়স হলেই ডিম দিতে শুরু করে। এরা সাধারণত শীতকালে ডিম পাড়ে। বছরে গড়ে ২৫টি করে ডিম দেয়। প্রতিটি ডিমের দাম প্রায় ১২০০ টাকা। এমুর মাংসে চর্বি ও কোলেস্টেরল কম থাকায় বিদেশে এর চাহিদা ভালই। ডিম দেওয়ার আগে পর্যন্ত এমুর মাংস প্রতি কেজি প্রায় ৬০০ টাকা দামে বিক্রি হয়। তবে ডিম পাড়া শুরু করলে মাংসের দাম ও চাহিদা দুই-ই কমে যায়। এমুর চামড়া থেকে ব্যাগ তৈরি হয়। হাড়ের গুঁড়ো থেকে ওষুধ, নখ ও পালক থেকে সাজগোজের সামগ্রী এবং মল থেকে মাছের খাবার তৈরি হয়। এমুর চর্বি থেকে তৈরি তেলও বহুমূল্য। |
তাঁদের দাবি, তবু এত দিন শুধু বিদেশেই এমু পাখির চাষ হত। কারণ এমুর ডিম ও মাংসের চাহিদা ছিল ওখানেই। ইদানীং এ দেশেও ধীরে ধীরে এমুর মাংস জনপ্রিয় হচ্ছে। বিদেশে এমুর ডিম, মাংস রপ্তানি তো হচ্ছেই। পাশাপাশি এ দেশের হোটেল, রেস্তোঁরা কর্তৃপক্ষও এমুর মাংস কিনছেন। ইতিমধ্যেই অন্ধ্রপ্রদেশ, মহারাষ্ট্র, গুজরাট প্রভৃতি রাজ্যেও এমু পাখির ব্যবসা শুরু হয়ে গিয়েছে। বছর তিনেক আগে থেকেই পশ্চিমবঙ্গে এমু পাখির চাষ শুরু হয়েছে। বাঁকুড়া, বীরভূম, হুগলি ও পশ্চিম মেদিনীপুরে খামার গড়ে উঠেছে।
উদ্যোগীদের পক্ষে রাজীব মণ্ডলের দাবি, “হিমাচল প্রদেশে তিনি ও তাঁর এক বন্ধু এমু পাখি চাষের প্রশিক্ষণ নেন। তার পরে ফিরে এসে নিজেরাই খামার গড়ার চিন্তাভাবনা শুরু করেন। দশ জন মিলে ৬ লক্ষ টাকা ব্যয়ে ব্যবসা শুরু করেছেন। তিন বিঘা জমিতে খামার গড়েছেন। মুম্বাইয়ের এক সংস্থা অস্ট্রেলিয়া থেকে ১০ জোড়া পাখি এনে দিয়েছে। প্রতি জোড়া পাখির দাম পড়েছে ৩০ হাজার টাকা করে।” তাঁর আশা, “সব কিছু ঠিকঠাক চললে প্রথম বছরেই আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত উঠে আসতে পারে।”
কাঁকসা পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি জনার্দন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “যদি ওই যুবকেরা সফল হন তাহলে এলাকার আরও অনেকে এমু চাষে উদ্যোগী হবেন। স্বনির্ভরতার নতুন পথ খুলে যাবে।” |