দেড় বছরেরও বেশি সময় ধরে বেতন পাচ্ছেন না মঙ্গলকোট ও মাজিগ্রাম-সহ জেলার ১৪টি জলপ্রকল্পের অন্তত ৫০ জন কর্মী। চরম দুরবস্থায় দিন কাটাচ্ছেন তাঁরা। সম্প্রতি জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যয় মঙ্গলকোটের ব্লক অফিসে একটি অনুষ্ঠানে এলে ওই কর্মীরা মঙ্গলকোট পঞ্চায়েত সমিতির সভাপতি রেনুকা সরের মাধ্যমে মন্ত্রীর কাছে লিখিত অভিযোগ জানান। সুব্রতবাবু বলেন, “কর্মীদের সমস্যার কথা শুনেছি। বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দেখছি।”
১৯৮৭ সালে বিশ্ব ব্যাঙ্কের টাকায় ওই প্রকল্পগুলি নির্মাণ করে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। নব্বইয়ের দশকের গোড়া থেকেই কর্মীরা প্রতিদিন ২-৩ বার ওই প্রকল্পগুলি থেকে জল সরবরাহের কাজ করছেন। ১৯৯৫ সাল পর্যন্ত জলপ্রকল্পগুলি ঠিকাদার গোষ্ঠীর হাতে থাকলেও পরবর্তীতে তার দায়িত্ব নেয় জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর। ঠিকাদার গোষ্ঠীর কর্মীরাই ওই দফতরে অস্থায়ী কর্মী হিসেবে যোগ দেন। মঙ্গলকোট, মাজিগ্রাম শ্রীখণ্ড, অগ্রদ্বীপ, কান্দরা, কাইগ্রাম, বড়শুল-সহ ওই ১৪টি জল প্রকল্পের ওই কর্মীরা জানান, তারপরে বেশ কয়েক বছর নিয়মিত বেতন মিললেও ২০১১ সালের জানুয়ারির পর থেকে বেতন সম্পূর্ণ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। তাঁদের দাবি, ২০১১ সালের জানুয়ারি মাসে দফতর থেকে শেষ বেতন পেয়েছিলেন তাঁরা। মাঝে অবশ্য সংশ্লিষ্ট পঞ্চায়েত সমিতির তরফে খণ বাবদ নিজস্ব তহবিল থেকে কয়েক মাসের বেতন দেওয়া হয়েছে। চলতি বছরের জুলাই মাসে জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতরের জল সরবরাহ কর্মীদের একটি প্রতিনিধি দল মহাকরণে গিয়ে মন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন এবং প্রয়োজনীয় নথিও তুলে দেন বলে জানান তাঁরা। তাঁদের নেতা অশোক দাস বলেন, “মন্ত্রী সমস্যা মেটানোর আশ্বাস দিয়েছেন।” মঙ্গলকোট জল প্রকল্পের কর্মী সুব্রত মণ্ডলেরও বক্তব্য, “কী দুরবস্থার মধ্যে দিন কাটাচ্ছি,আমরাই জানি। মন্ত্রীকেও সমস্যার কথা জানিয়েছি।”
পঞ্চায়েত সমিতি সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কর্মীরা ১৭০০ থেকে ৩৭০০ টাকা পর্যন্ত বেতন পান। তাও আবার প্রতিমাসে মেলে না। জনস্বাস্থ্য কারিগরি দফতর থেকেই ৪-৫ মাস অন্তর জেলা পরিষদ বা পঞ্চায়েত সমিতির মাধ্যমে বেতন পান তাঁরা। ব্লক অফিস সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই কর্মীদের ঋণ বাবদ নিজস্ব তহবিল থেকে বেতন দেওয়া হয়েছে। ওঁরা বেতন পেলে সেই টাকা নিয়ে নেবে পঞ্চায়েত সমিতি। অন্য দিকে, কেতুগ্রাম ১ ব্লকের কান্দরা জল প্রকল্পের কর্মী আলোকর মল্লিকের ক্ষোভ, “পঞ্চায়েত সমিতিও আর সাহায্য করছে না।” পঞ্চায়েত সমিতির কর্তারাও জানান, তাঁদের পক্ষে আর বেতন দেওয়া সম্ভব নয়। এ দিকে, বেতন না মেলায় মানকরের কর্মীরা কাজ ছেড়ে দিয়েছেন বলে জানান ওই অস্থায়ী কর্মীরা। ফলে ওই জল প্রকল্পটিও মুখ থুবড়ে পড়েছে বলে দাবি তাঁদের।
শুধু বেতন নয়, ওই জলপ্রকল্পগুলি থেকে রাজ্য বিদ্যুৎ বণ্টন কোম্পানি বিল বাবদ কয়েক লক্ষ টাকা পাবে বলেও জানান কর্মীরা। তাঁদের আশঙ্কা, যে কোনও দিন বন্ধ হয়ে যেতে পারে বিদ্যুৎ সরবরাহ। কর্মী আবাসনগুলির অবস্থাও তথৈবচ। ছাদ ভেঙে পড়েছে, খসে গিয়েছে পলেস্তারাও।
এই অবস্থায়, ওই কর্মীদের একমাত্র ভরসা বলতে শুধুই মন্ত্রীর আশ্বাস। |