জোটের পুরসভায় কংগ্রেস উপ-প্রধানকে অপসারণের দাবি জানালেন কুলটির ২০ জন কাউন্সিলর। পুরপ্রধানের কাছে এ ব্যাপারে যৌথ স্বাক্ষর করা দাবিপত্র দিয়েছেন ১৪ জন তৃণমূল ও ৬ জন নির্দল কাউন্সিলর। দাবি না মানা হলে পুরসভা অচল করার হুমকিও দিয়েছেন তাঁরা। উপপ্রধান বাচ্চু রায়কে পদ থেকে সরানো হলে আন্দোলনে নামার পাল্টা হুমকি দিয়েছে কংগ্রেসও।
কংগ্রেস-তৃণমূল জোট পরিচালিত এই পুরসভায় তৃণমূলের ১৫ জন, নির্দল ৬ জন ও কংগ্রেসের তিন জন কাউন্সিলর রয়েছেন। বামফ্রন্টের দখলে রয়েছে পুরসভার ১১টি আসন। সম্প্রতি পুরপ্রধান তথা কুলটির তৃণমূল বিধায়ক উজ্জ্বল চট্টোপাধ্যায়ের কাছে পাঠানো চিঠিতে ২০ জন তৃণমূল কাউন্সিলর অভিযোগ করেন, উপ-পুরপ্রধান বাচ্চুবাবু এমন কিছু সিদ্ধান্ত নিচ্ছেন যা নীতিগত ভাবে জোট বিরোধী। পরে সেই সিদ্ধান্তগুলি পুরবোর্ডের কাছে অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়াচ্ছে। ২৩ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর সুজিত রায়ের দাবি, “পুরপ্রধান, পারিষদদের সঙ্গে কোনও আলোচনা না করে বাচ্চুবাবু একতরফা ভাবে নিজের সিদ্ধান্ত কার্যকর করছেন। তার বিরূপ ফল হচ্ছে। সাধারণ মানুষের কাছে আমাদের জবাবদিহি করতে হচ্ছে।” ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর অজয়প্রতাপ সিংহ অভিযোগ করেন, এপ্রিলে বাচ্চুবাবুর নেতৃত্বে পুরসভার সামনে কংগ্রেস বিক্ষোভ-অবস্থান করে। কংগ্রসের তরফে সে দিন পুরসভায় দুর্নীতির অভিযোগ তোলা হয়। অজয়প্রতাপবাবু বলেন, “জোটে থেকে এবং পুরসভার উপপ্রধান থাকাকালীন বাচ্চুবাবু এই অভিযোগ তোলায় পুরসভার ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ হয়েছে। সাধারণ মানুষের কাছে আমরা অপদস্থ হয়েছি।”
পুরপ্রধান উজ্জ্বলবাবু বলেন, “দলের কাউন্সিলরদের এই চিঠি আমি দলের কুলটি ব্লক সভাপতির কাছে পাঠিয়ে দিয়েছি। এখন দল ঠিক করবে কাকে উপ-পুরপ্রধান পদে বসাবে।” তৃণমূলের কুলটি ব্লক সভাপতি মহেশ্বর মুখোপাধ্যায় জানান, পুরপ্রধানের কাছ থেকে চিঠি পাওয়ার পরে দলের কাউন্সিলরদের নিয়ে সভা হয়েছে। প্রাথমিক ভাবে ৬ জন কাউন্সিলরকে উপপ্রধান পদের জন্য বাছা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে এক জনের নাম এক সপ্তাহের মধ্যে চূড়ান্ত করা হবে। মহেশ্বরবাবুর অভিযোগ, “আমরা খোঁজ নিয়ে জেনেছি, পুরসভার মাস্টাররোল বিভাগে ভুয়ো শ্রমিকের নাম ঢুকিয়ে দুর্নীতি করছেন বাচ্চুবাবু। পুরসভার গাড়ি ব্যক্তিগত কাজে ব্যবহার করছেন। নিকট আত্মীয়দের অন্যায় ভাবে পুরসভার ঠিকা কাজ পাইয়ে দিচ্ছেন।” মহেশ্বরবাবুর আরও দাবি, পুরসভার ভাবমূর্তি স্বচ্ছ রাখতেই তাঁর দলের কাউন্সিলররা এই দাবি তুলেছেন। বাচ্চুবাবুকে পদ থেকে অপসারণের এই দলীয় সিদ্ধান্ত কংগ্রেস নেতৃত্বকে লিখিত ভাবে জানানোর কথাও জানান মহেশ্বরবাবু।
বাচ্চুবাবু অবশ্য তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা সমস্ত অভিযোগ উড়িয়ে দিয়েছেন। তাঁর দাবি, “মিথ্যা অভিযোগ তুললেই হবে না। তা প্রমাণ করে দেখাতে হবে। আসল কথা হল, তৃণমূলের একাধিক কাউন্সিলরের ভাবমূর্তি এখন সাধারণ মানুষের কাছে স্বচ্ছ নয়। এই ব্যর্থতা ঢাকতেই আমার দিকে আঙুল তোলা হয়েছে।” তাঁর আরও দাবি, ভোটের আগে সাধারণ মানুষকে দেওয়া প্রতিশ্রুতি ঠিক মতো পালন করা যাচ্ছিল না বলেই তিনি কংগ্রেস সদস্য-সমর্থকদের নিয়ে বিক্ষোভ দেখিয়েছিলেন। তৃণমূলের তরফে বাচ্চুবাবুকে অপসারণের সিদ্ধান্তের কথা জানানো হয়েছে বলে জানান কংগ্রেসের জেলা সম্পাদক চণ্ডী চট্টোপাধ্যায়। এ ব্যাপারে তাঁর বক্তব্য, “মিথ্যা অভিযোগের কোনও জবাব দিতে চাই না। তবে ওদের সিদ্ধান্ত কার্যকর হলে আমরা রাস্তায় নেমে আন্দোলন শুরু করব।”
পুরসভার বিরোধী দলনেতা সিপিএমের প্রিয়ব্রত সরকারের দাবি, “কংগ্রেস ও তৃণমূলের মধ্যে এ রকম নাটক আগেও হয়েছে। এ সবের ফলে পুর-পরিষেবা ব্যাহত হচ্ছে। ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন সাধারণ মানুষ।” |