গায়ে আগুন দিয়েছিল মেয়েটি। মৃত্যুর আগে পুলিশকে জানিয়েছিল, স্কুল এবং প্রাইভেট টিউশনে যাওয়ার পথে তাকে উত্ত্যক্ত করত কিছু ছেলে।
বার্নপুরের রামবাঁধ আদর্শ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণিতে পড়ত মেয়েটি। নাম উজ্জ্বলা প্রসাদ ওরফে সোনি (১৫)। বাড়ি বার্নপুরেরই শ্যামবাঁধ এলাকায়। বাবা মনোজ প্রসাদ ইস্কোর ঠিকাকর্মী। সোমবার সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ বাড়িতেই সে গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দেয়। মঙ্গলবার সকালে বার্নপুরে ইস্কো হাসপাতালে সে মারা যায়।
সোনির বাবা পুলিশকে জানিয়েছেন, ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় উল্টে তাঁদেরই অপমান করা হয়েছিল। সোমবারই ন’জনের নামে সাধারণ ডায়েরি করেছিলেন তিনি। এ দিন নির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেন। পুলিশ চার জনকে গ্রেফতার করেছে। যদিও অভিযুক্ত যুবকদের মধ্যে এক জনের সঙ্গে সোনির প্রেমের সম্পর্কের জেরেই গণ্ডগোলের সূত্রপাত হয়ে থাকতে পারে বলে প্রাথমিক তদন্তের পরে পুলিশের অনুমান।
দ্বিতীয় শ্রেণির ছাত্রী পুষ্পা ঠাকুরের মৃত্যুর জেরে গত সপ্তাহেই অশান্ত হয়েছিল বর্ধমানের বার্নপুর। পুলিশের বিরুদ্ধে ‘নিষ্ক্রিয়তা’র অভিযোগ তুলে রাস্তায় নেমেছিল জনতা। এর পরে এই ঘটনায় পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ফের প্রশ্ন উঠছে। আসানসোল-দুর্গাপুরের এডিসিপি (পশ্চিম) সুব্রত গঙ্গোপাধ্যায়ের দাবি, “আগে অপরাধ ঘটলেও লোকে অভিযোগ জানাতে ভয় পেত। এখন সাহস করে পুলিশের কাছে আসছে। পুলিশ ব্যবস্থা নিচ্ছে।”
যে যুবকদের বিরুদ্ধে সোনিকে উত্ত্যক্ত করার অভিযোগ রয়েছে, গত শনিবার তাদের দু’জনকে চড়-থাপ্পড় মেরেছিলেন মনোজবাবু। পুলিশকে তিনি জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার স্কুলে যাওয়ার সময় কয়েক জন সোনিকে উত্ত্যক্ত করেছিল। শনিবার স্কুলে যাওয়ার সময় তিনি মেয়ের সঙ্গে বেরোন। সোনিই কয়েক জনকে দেখিয়ে দেয়। মনোজবাবুর কথায়, “আমি দু’জনকে চড়-থাপ্পড় মেরে ছেড়ে দিই।” থানায় যাওয়ার কথাও ভেবেছিলেন তিনি। কিন্তু এলাকার কিছু প্রবীণ বিষয়টি আপসে মিটিয়ে নেওয়ার পরামর্শ দেন।
পরের দিন, রবিবার বিকেলে পাড়ার হরিবোল মন্দিরে বৈঠক বসে। সোনিকে নিয়ে মনোজবাবু হাজির ছিলেন। তাঁর অভিযোগ, “ছেলেগুলো আর ওদের বাড়ির লোকজন আমায় কথাই বলতে দেয়নি। আমাদের ব্যাপক গালিগালাজ করা হয়। অভিযুক্তদের অন্যতম প্রদীপ ময়রা ও তার বাড়ির লোকজন দাবি করে, আমার মেয়েই প্রদীপের মোবাইলে বেশ কিছু এসএমএস পাঠিয়েছে। কিন্তু কী এসএমএস, তা তারা জানায়নি। এই এক তরফা আক্রমণ সহ্য করতে না পেরে আমরা বাড়ি ফিরে আসি।”
সোনির এই এসএমএস পাঠানোর ‘খবর’ পুলিশের কাছেও এসেছে। স্থানীয় সূত্রে পুলিশ শুনেছে, বাবার মোবাইল থেকেই প্রদীপকে এসএমএস করত সোনি। তা জেনে ফেলেই ক্ষিপ্ত হয়ে দু’জনকে মারধর করেন মনোজবাবু। যদিও তিনি তা অস্বীকার করেছেন। যাদের তিনি চড় মারেন, তাদের মধ্যে প্রদীপ ছিল কি না তা-ও তিনি নিশ্চিত করে জানাতে পারেননি। তাঁর মোবাইলে থেকে পাঠানো কোনও এসএমএস-ও ফোনের ‘সেন্ট মেসেজেস’-এ রাখা নেই বলে মনোজবাবুর দাবি। রাত পর্যন্ত প্রদীপ ময়রাকে পুলিশ ধরতে পারেনি। ফলে তাঁর মোবাইলও পরীক্ষা করা যায়নি।
পুলিশের একাংশের মতে, প্রদীপের সঙ্গে সম্পর্ক থাক বা না থাক, ইভটিজিংয়ের অভিযোগ লঘু হওয়ার সম্ভাবনা নেই। কারণ, মৃত্যুর আগে সোনি নিজেই অভিযোগ জানিয়ে গিয়েছে। আসানসোলের ভারপ্রাপ্ত মহকুমাশাসক প্রতুলকুমার ভুঁইয়া বলেন, “সোমবার হিরাপুর থানার পুলিশের উপস্থিতিতে এগজিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট সঞ্জয় পাল মৃত্যুকালীন জবানবন্দি নিয়েছেন।” পুলিশ জানায়, গোবিন্দ মাগার, বিপদ বাউরি, পঙ্কজ চৌবে ও রাকেশ খুশোয়া নামে চার জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে। |