ভরদুপুরে জমজমাট বাণিজ্যিক এলাকায় দুষ্কৃতীদের গুলিতে খুন হলেন এক লটারি বিক্রেতা। সোমবার বেলা সাড়ে ১২টা নাগাদ রায়গঞ্জে বারো নম্বর বড়ুয়া গ্রাম পঞ্চায়েতের কাশিবাটি এলাকায় ঘটনাটি ঘটে। পুলিশ এক জনকে গ্রেফতার করেছে।
নিহতের নাম মণিলাল বর্মন (৬০)। বাড়ি গোলুইসরা এলাকায়। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জেনেছে, তোলাবাজি ও সাট্টা-মদের আসরের দখল নিয়ে গোলমালের সময়ে এক দল দুষ্কৃতী বিপক্ষের লোকজনকে লক্ষ করে গুলি ছোড়ে। রাস্তার ধারে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের সামনে দাঁড়িয়ে লটারির টিকিট ফেরি করছিলেন মণিলালবাবু। তিনি গুলি খেয়ে লুটিয়ে পড়েন। এলাকার লোকজন রায়গঞ্জ জেলা সদর হাসপাতালে নিয়ে গেলে চিকিৎসকেরা তাঁকে ‘মৃত’ ঘোষণা করেন। |
রায়গঞ্জ থানার আইসি সমীর পালের দাবি, “দুষ্কৃতীদের এক পক্ষ অন্য পক্ষের দিকে গুলি ছোড়ে। তাতেই মণিলালবাবুর মৃত্যু হয়েছে। চার দুষ্কৃতীকে চিহ্নিত করা হয়েছে। এক জন ধরা পড়েছে। বাকিদের খোঁজে তল্লাশি চলছে।” কিন্তু এলাকার বাসিন্দাদের বড় অংশই পুলিশের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তাঁদের অভিযোগ, থানা থেকে কিলোমিটার সাতেক দূরে কাশিবাটি ও লাগোয়া এলাকায় দীর্ঘদিন ধরেই একাধিক তোলা আদায়কারী চক্র সক্রিয়। পুলিশের একাংশের সঙ্গে যোগসাজশ না-থাকলে তারা অস্ত্র দাপিয়ে বেড়ানোর সাহস পায় কী করে? আইসি অবশ্য এই প্রশ্নের জবাব দেননি। কোন দুই গোষ্ঠীর গণ্ডগোলে গুলি চলল, স্পষ্ট করে জানাতে পারেননি তা-ও।
ঘটনাচক্রে, মণিলালবাবু সিপিএমের দলীয় সদস্য ছিলেন। কিন্তু দল নির্বিশেষেই খুনিদের গ্রেফতার ও শাস্তির দাবি তোলা হয়েছে। সিপিএমের উত্তর দিনাজপুর জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অপূর্ব পালের মতে, “পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার কারণে রায়গঞ্জের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি যে ভেঙে পড়েছে, তা-ই ফের স্পষ্ট হল।” জেলা কংগ্রেস সভাপতি তথা রায়গঞ্জের বিধায়ক মোহিত সেনগুপ্তের অভিযোগ, “পুলিশের নিষ্ক্রিয়তায় রায়গঞ্জে বেআইনি আগ্নেয়াস্ত্রের কারবার ক্রমেই বাড়ছে। কিছু দিন আগে এক কাউন্সিলারের ছেলেকে খুন করা হয়। জুয়া-মদের আসরও বসছে।”
তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অসীম ঘোষ অবশ্য দাবি করেন, “বিক্ষিপ্ত কিছু ঘটনায় আইনশৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে বলে অভিযোগ তোলা ঠিক নয়। তবে খুনিদের গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জেলার পুলিশকর্তাদের সে কথা জানিয়েছি।” রাজনৈতিক দলগুলির তরফে দুষ্কৃতীদের গ্রেফতারের দাবি ওঠার পরে পুলিশ এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে এক যুবককে গ্রেফতার করে। কিন্তু তার সঙ্গে খুনের যোগসূত্র কী, তা স্পষ্ট করে জানানো হয়নি। রায়গঞ্জের ডিএসপি সালিমা লামা শুধু বলেন, “ধৃতকে জেরা করা হচ্ছে। সব কিছু দ্রুত স্পষ্ট হবে।”
রাজনীতি করলেও এলাকায় নির্বিরোধী মানুষ বলেই পরিচিত ছিলেন মণিলালবাবু। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী অরুণাদেবী ও পাঁচ ছেলেমেয়ে। বড় ছেলে মানস সম্প্রতি স্নাতকোত্তর স্তরের পরীক্ষায় পাশ করেছেন। মেয়ে মৌমিতা পড়ছেন স্নাতকোত্তর স্তরে। বাকি তিন ছেলে মনোজিৎ, তাপস ও জয়ন্ত যথাক্রমে একাদশ শ্রেণি ও কলেজের ছাত্র। অরুণাদেবী বলেন, “ওঁর লটারির ব্যবসার রোজগারেই সংসার চলত। এ বার কী হবে, ভাবতে পারছি না।” |