বালির অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূর ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণের ঘটনায় অভিযুক্ত শ্বশুর, শাশুড়ি ও দেওরকে সোমবার জামিন দিল হাওড়া আদালত। কন্যা ভ্রূণ হত্যার প্রতিবাদ করা মহিলাদের কাছে এই জামিন অত্যন্ত হতাশাজনক বলে দাবি রাজ্য মহিলা কমিশনের। পাশাপাশি, অভিযুক্ত ওই তিন জনের জামিন বাতিল করার জন্য হাওড়া পুলিশ এবং জেলা ও দায়রা বিচারকের কাছে মহিলা কমিশনের পক্ষ থেকে আবেদন করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনের চেয়ারপার্সন সুনন্দা মুখোপাধ্যায়।
গত ২ অগস্ট বালি শান্তিরাম রাস্তার বাসিন্দা অন্তঃসত্ত্বা গৃহবধূ রঞ্জনা প্রসাদ অভিযোগ করেন, তিনি অন্তঃসত্ত্বা হওয়ামাত্রই শ্বশুরবাড়ির লোকজনের তরফে গর্ভস্থ সন্তানের লিঙ্গ নির্ধারণ পরীক্ষার জন্য চাপ দেওয়া হত। আর সেই কথায় রাজি না হলেই চলত মারধর। শেষ পর্যন্ত সেই অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে প্রতিবাদ করেন রঞ্জনা। ওই রাতেই তাঁর স্বামী রবীন্দ্র প্রসাদ বালি থানায় বাবা-মা ও ভাইয়ের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেন। গত ৬ অগস্ট সেই অভিযোগের ভিত্তিতে গ্রেফতার হন রঞ্জনার শ্বশুর গোবিন্দ প্রসাদ, শাশুড়ি সাবিত্রী প্রসাদ ও দেওর রামযতন প্রসাদ। ওই দিনই তাঁদের হাওড়া আদালতে তোলা হলে বিচারক ৮ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দেন।
সুনন্দাদেবী বলেন, “কী করে জামিন সম্ভব হল, তা নিয়ে হাওড়ার জেলা জজ ও পুলিশ কমিশনারের সঙ্গে কথা বলেছি।” তিনি আরও জানান, পশ্চিমবঙ্গে এই প্রথম কোনও মহিলা ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ নিয়ে প্রকাশ্যে প্রতিবাদ করেছেন। সুনন্দাদেবী এ দিন দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, “রঞ্জনা আইনের পথেই এগিয়েছিলেন। কিন্তু আইন তাঁকে সুরক্ষা দিতে পারল না। এর ফলে এ হেন প্রতিবাদ আরও পিছিয়ে পড়বে বলেই আমাদের আশঙ্কা। এমনিতেই এ রাজ্যে কন্যা ভ্রূণ হত্যা বন্ধের চেষ্টা থমকে রয়েছে।”
মহিলা কমিশন সূত্রে খবর, রঞ্জনা পুলিশের কাছে অভিযোগে আরও জানিয়েছেন, ২০১০ সালেও তাঁর শ্বশুরবাড়ির লোকজন ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ করিয়ে জেনেছিলেন, কন্যা সন্তান। তাই জোর করে ইঞ্জেকশন দিয়ে অচৈতন্য অবস্থায় গাড়িতে তুলে হাওড়া ব্রিজ পার করে একটি জায়গায় নিয়ে গিয়ে তাঁর গর্ভপাত করিয়েছিলেন। এ বার অন্তঃসত্ত্বা হওয়ায় ফের একই চাপ দেওয়া হচ্ছিল তাঁকে। কিন্তু রাজি না হওয়ায় গত ২ অগস্ট রঞ্জনার উপরে শারীরিক অত্যাচার করেন শ্বশুরবাড়ির লোকেরা।
সুনন্দাদেবী বলেন, “রঞ্জনাদের অভিযোগের ভিত্তিতে বালি থানার তদন্তকারী পুলিশ অফিসার ঠিকই ধারায় মামলা দায়ের করেছিলেন। সেই ক্ষেত্রে কোনও কার্পন্য বা গাফিলতি ছিল না। তবে অভিযুক্তদের যে ধরনের শাস্তি হওয়া উচিত ছিল, তা হল না। প্রতিবাদী মহিলাদের কাছে এটা অত্যন্ত হতাশার।” তিনি আরও বলেন, “সুযোগ পেয়েও ১৯৯৪ সালের পিসি অ্যান্ড পিডিএনটি আইন (ভ্রূণের লিঙ্গ নির্ধারণ ও কন্যা ভ্রূণ হত্যা) যথাযথ প্রয়োগ করা গেল না।” |