শাসক ও বিরোধী শিবিরের মান্যগণ্যেরা আছেন। রাজ্যপাল ও মুখ্যমন্ত্রী তো আছেনই। প্রবীণ বিধায়কদের সংবর্ধনাও হচ্ছে। কিন্তু বিধানসভার প্ল্যাটিনাম জয়ন্তী অনুষ্ঠানের প্রথম দিন অন্তত দেখা গেল না বাম জমানার মন্ত্রী এবং অধুনা সিপিএম বিধায়ক সুশান্ত ঘোষকে। অনুষ্ঠানের বাইরেও বিধানসভায় সোমবার সুশান্তবাবুকে দেখেননি তাঁর সতীর্থ বাম বিধায়কেরা। মোবাইল বন্ধ রেখেছিলেন। তাই চেষ্টা করেও অনুপস্থিতির কারণ তাঁর মুখ থেকে শোনা যায়নি। তবে সুশান্ত-ঘনিষ্ঠ এক সিপিএম বিধায়কের মন্তব্য, “প্রথমে সংবর্ধনা তালিকায় ওঁর নাম ছিল। পরে ওঁকে দেবে না বলেই পাঁচ বারের জায়গায় আট বারের বিধায়কদের তালিকায় আনা হল। মানুষের চামড়া তো! কেন আসতে যাবেন?”
|
নিজে এমনিতে বিরাট ভোজন-রসিক নন। কিন্তু আপ্যায়নে তাই বলে খামতি রাখেন না। বিধানসভাও তেমনই গৃহকর্ত্রীর ভূমিকায় দেখল মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে! পঁচাত্তর বছর পূর্তিতে বিধানসভায় মধ্যাহ্নভোজের ‘হোস্ট’ ছিলেন স্বয়ং মুখ্যমন্ত্রী আর নৈশভোজ স্পিকার বিমান বন্দ্যোপাধ্যায়ের। দো’তলায় স্বাধীনতা সংগ্রামের উপরে প্রদর্শনী ঘুরে সিঁড়ি দিয়ে লবিতে নামতে নামতেই মুখ্যমন্ত্রী খবর পেলেন, মধ্যাহ্নভোজের আসরে যেতে হবে! সঙ্গে সঙ্গেই তৎপরতা শুরু। বিধানসভার কর্মীদের ডেকে ডেকে বলেছেন খেয়ে নিতে। আসরে দল-মত-নির্বিশেষে ঘুরে ঘুরে খোঁজ নিয়েছেন খাওয়া হল কি না সকলের।
|
আগে জনসভায় হুঁশিয়ারি দিতেন, “বুদ্ধবাবু জেনে রাখুন...।” মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পর থেকে ইদানীং মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের মুখে নামটা প্রায় শোনাই যায় না। ইঙ্গিতই থাকে যথেষ্ট। বিধানসভার ‘ঐতিহাসিক মুহূর্তে’ পূর্বসূরির নাম আবার শোনা গেল মুখ্যমন্ত্রীর গলায়। এ বার অবশ্য আক্রমণ নয়। নেহাতই ইতিহাসের উল্লেখ হিসাবে। বুদ্ধবাবু ১১ বছরেরও বেশি এই বিধানসভায় সরকারের প্রধান ছিলেন। তারও আগে জ্যোতি বসু ২৩ বছর মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন। বিধানচন্দ্র রায় থেকে প্রফুল্ল সেন, সিদ্ধার্থশঙ্কর রায়, সব প্রাক্তনের কথাই বললেন বর্তমান। তাঁর সতীর্থ পরিষদীয় মন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়ের কথাতেও এল বুদ্ধবাবুর কথা। বিরোধী দলনেতা থাকাকালীন তৎকালীন যে মুখ্যমন্ত্রীকে ‘খোকাবাবু’ বলে কটাক্ষ করা রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছিল! এ বারের আসরই অবশ্য ‘সৌজন্যে’র।
|
যেখানেই যান, সর্বত্র কৌতূহল। এই বুঝি বেফাঁস কিছু বলে বসলেন! সেই আব্দুর রেজ্জাক মোল্লাকে দেখা গেল, প্রকাশ্যে নয়, মুখ্যমন্ত্রীকে একান্তে কিছু বলতে! সংবর্ধিত বিধায়কদের তালিকায় রেজ্জাকও ছিলেন। তাঁকে সংবর্ধনা দেন রাজ্যপাল এম কে নারায়ণন। মুখ্যমন্ত্রীও একটু এগিয়ে এসেছিলেন। সংবর্ধনার পরে রেজ্জাকের সঙ্গে করমর্দন এবং সহাস্য সৌজন্য বিনিময় হল মুখ্যমন্ত্রীর। প্রাক্তন ভূমিমন্ত্রীকে নমস্কারও জানান মুখ্যমন্ত্রী। তার পরেই এক বার ঘুরে এসে মুখ্যমন্ত্রীর প্রায় কানে কানেই কী যেন বলে গেলেন রেজ্জাক। কী বললেন? পরে রেজ্জাকের হেঁয়ালি, “গুপ্তমন্ত্র! মন্ত্র দিলে গুপ্ত হওয়াই ভাল। বলে দিলে তো হয়েই গেল!”
|
কিছু ক্ষণের জন্য। তবু স্পিকারের আসন আবার ফিরে পেলেন সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়! ঘণ্টা বাজিয়ে অধিবেশন শুরু হল। বক্তাদের বলার সময় ফুরিয়ে গেলে সবুজ আলো, লাল আলো জ্বালিয়ে সঙ্কেতও দেওয়া হল। পুরোটাই ‘সাজানো’, এই যা! |