মমতার নির্দেশে সরব সুব্রত
‘মাওবাদী এজেন্ট’ শিলাদিত্যর মুক্তি চাইছেন ‘বিষধররা’
বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গোলমাল পাকানোর অভিযোগে ধৃত শিলাদিত্য চৌধুরীকে সরাসরি ‘মাওবাদীদের এজেন্ট’ বলে অভিহিত করলেন রাজ্যের পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। একই সঙ্গে তাঁর বক্তব্য, “শিলাদিত্যকে নিরীহ বলে কলকাতায় যাঁরা গলা ফাটাচ্ছেন, তাঁরাও নিরীহ নন, ‘বিষধর’।” উল্লেখ্য, সোমবার শিলাদিত্যের জামিনের আবেদন খারিজ করেছে ঝাড়গ্রাম আদালত।
শিলাদিত্য প্রসঙ্গে বিভিন্ন মহলের প্রতিবাদের মুখে এ দিন সুব্রতবাবু এবং পুরমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে এক সঙ্গে সাংবাদিক বৈঠকে পাঠিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বুঝিয়ে দেন, এ ব্যাপারে নরম মনোভাব দেখাতে তিনি নারাজ। দুই মন্ত্রী অভিযোগ করেন, আট-দশ জন মানুষকে প্রতিবাদীর ভূমিকায় রেখে মুখ্যমন্ত্রীর সভায় গণ্ডগোল করার পরিকল্পনা করেছিল মাওবাদীরা। সুব্রতবাবুর কথায়, “পুলিশের কাছে খবর ছিল মাওবাদীরা মুখ্যমন্ত্রীর সভায় লোক ঢুকিয়ে গোলমাল পাকাবে। মুখ্যমন্ত্রীকে আক্রমণের চেষ্টা করবে। এ জন্য সভায় দশ জন লোককে ঢুকিয়েছিল, যার এক জন ওই শিলাদিত্য।”
মমতার নির্দেশে রাজ্য পুলিশের ডিজি নপরাজিত মুখোপাধ্যায়ও সোমবার সাংবাদিক বৈঠক করে সে দিনের ঘটনার ব্যাখ্যা দিয়েছেন। তিনি বলেন, “ওখানে কিছু লোক গোলমাল পাকাতে পারে এমন খবর পুলিশের কাছে ছিল। সেই মতো এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়। ওই ব্যক্তি ব্যারিকেড ভাঙার চেষ্টা করছিল। ‘হাই-সিকিউরিটি জোন’ থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।”
রেলমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেতা মুকুল রায় আগেই অভিযোগ করেছেন যে, শিলাদিত্য সে দিন মদ্যপ অবস্থায় মুখ্যমন্ত্রীর সভার গোলমাল পাকানোর চেষ্টা করেছিলেন। তাঁর সেই সংক্রান্ত স্বাস্থ্য পরীক্ষা হয়েছে কিনা, এই প্রশ্নের জবাব অবশ্য ডিজি দেননি। পাশাপাশি, জেরা করার সময় পালিয়ে যাওয়ার যে অভিযোগ শিলাদিত্যের বিরুদ্ধে উঠেছে, (ঝাড়গ্রামের পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষ নিজেই শনিবার জানিয়েছিলেন, শিলাদিত্য পালিয়ে জনতার ভিড়ে মিশে যান) তার জেরে কোনও পুলিশ কর্মীর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে কিনা, তা-ও জানাতে চাননি ডিজি। তিনি শুধু বলেন, “বিষয়টি বিচারাধীন। এর বেশি আমি কিছু বলতে পারব না। তবে গোটা ঘটনায় পুলিশের ভূমিকাও খতিয়ে দেখা হচ্ছে।”
শিলাদিত্য চৌধুরী (বাঁ দিকে)। —ফাইল চিত্র
শিলাদিত্যর গ্রেফতারি নিয়ে ইতিমধ্যেই সরব হয়েছে বিভিন্ন গণসংগঠন এবং রাজনৈতিক দল। তাঁর নিঃশর্ত মুক্তি দাবি করে মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর বক্তব্য, ‘মুখ খুললেই মাওবাদী, এ কেমন গণতন্ত্র!’
শিলাদিত্য মাওবাদী কিনা, এই বিতর্কের মধ্যেই কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা বিভাগের বক্তব্য, তাঁর মুক্তির দাবিতে প্রচারে নেমেছে মাওবাদীদের প্রতি সহানুভূতিশীল বেশ কিছু ব্যক্তি ও সংগঠন। এই বিতর্ককে সামনে রেখে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের রাজনৈতিক কর্তৃত্ব দুর্বল করে দিতে চায় তারা। যাতে জঙ্গলমহল তথা গোটা রাজ্যে মাওবাদীরা নতুন করে প্রভাব বিস্তার করতে পারে।
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের মতে, শুধু পশ্চিমবঙ্গ নয়, গোটা দেশেই এ ভাবে নাগরিক অসন্তোষকে কাজে লাগিয়ে প্রভাব ছড়ানোর চেষ্টা করে মাওবাদীরা। বিদর্ভে পৃথক রাজ্যের দাবিতে আন্দোলনের সময় একই চেষ্টা করেছিল তারা। পশ্চিমবঙ্গে মাওবাদীরা কাজে লাগিয়েছিল নন্দীগ্রাম আন্দোলনকে।
শিলাদিত্যের বিরুদ্ধে রাজ্য সরকারের তরফে যে অভিযোগ তোলা হয়েছে, সেটা ঠিক হলেও হতে পারে বলে কেন্দ্রীয় গোয়েন্দাদের একাংশের মত। তাঁদের বক্তব্য, মাওবাদী মানেই যে অস্ত্রচালনায় প্রশিক্ষিত ক্যাডার এমন নয়। কাউকে কাউকে সরকারি সভায় গোলমাল পাকানোর কাজেও ব্যবহার করা হয়। গোয়েন্দা পরিভাষায় এদের ‘এজেন্ট প্রভোকেটর’ বলে। শিলাদিত্য তেমনই কোনও এজেন্ট কিনা, তা খতিয়ে দেখা প্রয়োজন বলে মনে করছেন ওই গোয়েন্দা কর্তারা।
কিন্তু শিলাদিত্যের মুক্তির দাবিতে শুধু বিভিন্ন গণসংগঠন নয়, সরব হয়েছে কেন্দ্রের শাসক দল কংগ্রেসও। গোটা বিষয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে রাজ্যের প্রধান বিরোধী দল সিপিএম। পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা কংগ্রেসের সহ-সভাপতি তথা বেলপাহাড়ির প্রবীণ কংগ্রেস নেতা সুব্রত ভট্টাচার্য এ দিন বিনপুরের নয়াগ্রামে গিয়ে শিলাদিত্যের মা ও স্ত্রীর সঙ্গে দেখা করেন। জেলা কংগ্রেস সভাপতি স্বপন দুবে বলেন, “ওই যুবক যদি মাওবাদী হতেন, তা হলে যন্ত্রণার কথা বলতে সভায় আসতেন না। আমরা ওই যুবকের নিঃশর্ত মুক্তির দাবি করেছি।” তিনি আরও বলেন, “বিষয়টি প্রধানমন্ত্রী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে জানানো হবে। আমাদের এক প্রতিনিধি দল ২২ অগস্ট দিল্লি যাবে। আমরা ওই পরিবারের পাশে থাকব। আইনি সাহায্যও করব।” বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসু বলেন, “গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় প্রচলিত পদ্ধতিকে মান্যতা দিতে গেলে কেউ কোনও ব্যাপারে মুখ্যমন্ত্রীকে প্রশ্ন করতেই পারেন। তার প্রেক্ষিতে কেন তাঁকে এ ভাবে জামিন অযোগ্য ধারায় গ্রেফতার করা হবে?” একই সঙ্গে তাঁর কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রী এক তরফা বলে যাবেন, অন্যদের কথা শুনবেন না। ওঁর সঙ্গে সহমত হলে সব ঠিক আছে। না হলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে, এ কেমন কথা?”
পঞ্চায়েতমন্ত্রীর অবশ্য এ দিন বলেন, “কলকাতায় বসে যাঁরা মাওবাদীদের মদত দিচ্ছেন, তাঁরাও মাওবাদীদের সঙ্গেই রয়েছেন।” তিনি জানান, মাওবাদীদের ঘোষিত ‘খতম’ তালিকার এক নম্বরে রয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী। দুই ও তিনে রয়েছেন মুকুল রায় ও পার্থ চট্টোপাধ্যায়।
এ দিন ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে শিলাদিত্যের জামিনের আবেদন পেশ করা হয়। সরকারের তরফে সেই আবেদনের বিরোধিতা করা হয়। দু’পক্ষের বক্তব্য শোনার পরে এসিজেএম প্রিয়জিৎ চট্টোপাধ্যায় জামিনের আবেদন খারিজ করে ১৪ দিনের জেল হাজতের নির্দেশ দেন। তবে শিলাদিত্য ২০১১ সালের অগস্ট থেকে যক্ষ্মায় আক্রান্ত, তাঁর আইনজীবীর এই বক্তব্য শোনার পরে শিলাদিত্যের যথাযথ চিকিৎসার জন্য ঝাড়গ্রাম উপসংশোধনাগারের অ্যাসিস্ট্যান্ট কন্ট্রোলারকে নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। পাশাপাশি পরবর্তী হাজিরার দিনে চিকিৎসা-সংক্রান্ত রিপোর্ট আদালতে দাখিল করারও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.