বহু ব্র্যান্ডের খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলির ঐকমত্য এখনও দূর অস্ত্। চলতি অধিবেশনেও ওই বিলটির সংসদে আসার সম্ভাবনাও নেই বললেই চলে। এই পরিস্থিতির মধ্যেই আজ খুচরো ব্যবসায় পা দিল সহারা গোষ্ঠী। আজ ওই সংগঠনের কর্ণধার সুব্রত রায় দিল্লিতে এক সাংবাদিক বৈঠকে জানান, তাঁদের সংস্থা আগামী ১৫ অগস্ট থেকে খুচরো ব্যবসায় নামতে চলেছে। প্রথম পর্যায়ে দেশের পাঁচটি রাজ্যের ৬০টি শহরে নিজেদের বিক্রয়কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে। সংস্থার দাবি, তাদের বিক্রয়কেন্দ্রগুলিতে দৈনন্দিন প্রয়োজনের সমস্ত সামগ্রী পাওয়া যাবে। প্রাথমিক তালিকায় পশ্চিমবঙ্গ না থাকলেও সংস্থার পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, পুজোর আগেই রাজ্যে খুচরো ব্যবসায় পা রাখতে চলেছে সহারা।
গত শীতকালীন অধিবেশনের সময়েই খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নি বিলটি আনার পরিকল্পনা নিয়েছিল ইউপিএ সরকার। কিন্তু বিজেপি, সিপিএম-সহ বিরোধী দলগুলির পাশাপাশি শরিক তৃণমূল কংগ্রেস এবং উত্তরপ্রদেশ, বিহার-সহ একাধিক রাজ্যের আপত্তিতে শেষ পর্যন্ত পিছিয়ে আসতে বাধ্য হন মনমোহন-সনিয়া। সংস্কারের প্রশ্নে এ ভাবে এগিয়েও পিছিয়ে আসায় দেশি-বিদেশি শিল্পমহলের সমালোচনার মুখে পড়তে হয় কেন্দ্রকে। বর্তমান অধিবেশনেও বিভিন্ন দলের আপত্তি থাকায় সরকারের পক্ষে বিলটি নিয়ে আসা সম্ভব নয় বলেই মনে করছে রাজনৈতিক সূত্র। এই পরিস্থিতির মধ্যেই দেশের বাজার ধরতে এগিয়ে এল সহারা। সংস্থার চেয়ারম্যান সুব্রত রায় জানান, “সংস্থা প্রাথমিক পর্যায়ে বাজার ধরতে তিন হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ করছে। পরবর্তী সময়ে বাজারের চাহিদা অনুযায়ী বিনিয়োগ বৃদ্ধি করা হবে।”
এই ব্যবসায় নামার কারণ হিসেবে সংস্থার বক্তব্য, লাভের অঙ্ক বাড়াতে খাদ্যপণ্যে ভেজাল মেশাতে পিছপা হন না ব্যবসায়ীরা। যা খেয়ে মানুষ স্বাস্থ্য সংক্রান্ত নানা সমস্যায় ভুগছেন। এই চিত্রটি বদলাতেই তারা এই ব্যবসায় নামছে। নিজেরা খুচরো ব্যবসায় পা দিলেও সুব্রত রায় ব্যক্তিগত ভাবে মনে করেন, এই মুহূর্তে ভারতের যা বাজার, তাতে খুচরো ব্যবসায় বিদেশি লগ্নির কোনও প্রয়োজন নেই। সুব্রতবাবু বলেন, “বিদেশি বিনিয়োগ এলে বহু মানুষ কাজ হারাবেন।” পণ্যের গুণগত মান ঠিক রাখতে ৭টি জায়গায় ‘কোয়ালিটি ল্যাব’ খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সংস্থা। পাশাপাশি গোটা দেশে পণ্যের গুণগত মান খতিয়ে দেখার জন্য কয়েকশো কোয়ালিটি কন্ট্রোল দল এক যোগে কাজ করবে বলে সংস্থার দাবি।
প্রাথমিক ভাবে দৈনন্দিন প্রয়োজনের প্রায় ১৭০০ পণ্য বাজারে আনছে সহারা। ভবিষ্যতে চাহিদার কথা মাথায় রেখে পণ্যের সংখ্যা আরও বাড়তে পারে। আগামী দিনে গ্রাহকদের চাহিদা মতো পণ্য তাদের বাড়ি পৌঁছে দেওয়া হবে বলেও জানিয়েছে সংস্থা। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৫ অগস্ট থেকে উত্তরপ্রদেশ, উত্তরাখণ্ড, রাজস্থান, বিহার ও ঝাড়খণ্ডে ব্যবসা শুরু করছে সহারা। আগামী বছরের মার্চ মাসের মধ্যে দেশের আরও ৯৯৮টি শহরে নিজেদের বিক্রয়কেন্দ্র খোলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তারা। সংস্থার দাবি, তারা এই ব্যবসায় নামার ফলে প্রায় ১ লক্ষ ৪৩ হাজার লোক সরাসরি চাকরি পাবেন। |