একটি বাড়িতে অভিযান চালিয়ে প্রায় দেড় হাজার লিটার রেশনের কেরোসিন, পোড়া মোবিলের পাত্র, ১৩টি কেরোসিন ভর্তি ড্রাম-সহ বেশ কিছু রাসায়নিক উদ্ধার করল কালনা থানার পুলিশ। সোমবার দুপুরে কালনা শহর লাগোয়া হাটকালনা পঞ্চায়েতের গোয়াড়া মোড়ের একটি বাড়ি থেকে ওই জিনিসগুলি উদ্ধার করা হয়। পুলিশ জানায়, নকল ডিজেল তৈরির কাজ চলছিল ওই বাড়িতে। ঘটনাস্থল থেকে এক যুবককে আটক করা হয়েছে। পুলিশের পাশাপাশি ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত শুরু করেছে মহকুমা খাদ্য নিয়ামক দফতর।
পুলিশ সূত্রে খবর, সম্প্রতি তাদের কাছে খবর আসে, গোয়াড়া মোড়ে একটি ঘরে নকল ডিজেল তৈরি হচ্ছে। বেশ কিছু দিন ধরেই ওই বাড়িতে বিভিন্ন অপরিচিত লোকের আনাগোনা চলছিল বলে খবর পাওয়া যায়। রেশনের কেরোসিনের সঙ্গে বিভিন্ন রাসায়নিক মিশিয়ে নকল ডিজেল তৈরি হচ্ছে বলে খবর মেলে। সোমবার দুপুরে কালনা থানায় খবর আসে নকল ডিজেল তৈরির জন্য তিনটি ড্রাম ভর্তি অন্তত ছ’শো লিটার কেরোসিন গোয়াড়া মোড়ের ওই বাড়িটিতে পৌঁছচ্ছে। এর পর এসডিপিও ইন্দ্রজিৎ সরকারের নেতৃত্বে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছয়। |
সেখানে টালির ছাউনি ও দরমা দেওয়া একটি অন্ধকার ঘরের সামনে থেকে রেশনের কেরোসিন ভর্তি একটি মোটরভ্যান আটক করে পুলিশ। ঘরের ভিতর থেকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে পড়ে থাকা কেরোসিনের ড্রাম, পোড়া মোবিল ভর্তি পাত্র, পলিথিনের মোড়কে রাখা রাসায়নিক উদ্ধার করে পুলিশ। ভ্যানের চালককে থানায় জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। রেশনের কেরোসিন উদ্ধার হওয়ায় বিষয়টি মহকুমা খাদ্য নিয়ামক দফতরে জানানো হয়। বেলা ১টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন ওই দফতরের এক সার্কেল ইন্সপেক্টর শঙ্করকুমার ঘোষ। তিনি বলেন, “তদন্ত রিপোর্ট ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হবে।”
স্থানীয় সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় দু’বছর ধরে এই নকল ডিজেল তৈরির কারবার চলছে। স্থানীয় বাসিন্দাদের দাবি, খেয়াঘাট, তেঁতুলতলা-সহ শহরের একাধিক জায়গায় চলছে এই ব্যবসা। তাঁরা পুলিশকে জানান, রাজু নামে এক ব্যবসায়ী এই কারবারে জড়িত।
পুলিশের দাবি, প্রাথমিক তদন্তে জানা গিয়েছে, বেশ কয়েক মাস ধরে গ্রামের দিকে বহু যুবককে সাইকেলের পিছনে বড় জার বেঁধে কেরোসিন কিনতে দেখা গিয়েছে। রেশন থেকে পাওয়া কেরোসিন বহু পরিবারই জমিয়ে রাখছে বোতল বা ছোট ছোট পলিথিনের জারে। দু’এক মাস জমানোর পরে রেশন থেকে ১৫ টাকা দরে কেনা ওই কেরোসিন বিক্রি করে দেওয়া হচ্ছে ২৮ থেকে ৩০ টাকা দরে। সেই কেরোসিন আবার কিনে নিচ্ছে নকল ডিজেলের কারবারিরা। তারা ওই নকল ডিজেল লিটার প্রতি ৫ থেকে ৭ টাকা কম দামে এলাকা ও বিভিন্ন দোকানদারদের বিক্রি করছেন বলে অভিযোগ। সেখান থেকে স্থানীয় চাষি বা মোটরভ্যান চালকেরা পাম্প চালানোর জন্য ওই ডিজেল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। পুলিশের দাবি, এই ভাবেই চোরা পথে ওই নকল ডিজেল চলে যাচ্ছে এলাকার বিভিন্ন জায়গায়। ওই নকল ডিজেল কারবারিদের সঙ্গে এলাকার বেশ কিছু রেশন ডিলারের যোগসাজশ রয়েছে বলেও অনুমান পুলিশের।
কালনা থানা সূত্রে জানা গিয়েছে, ওই ভ্যান চালককে আটক করে বেশ কিছু তথ্য জানতে পেরেছে পুলিশ। মহকুমা পুলিশের এক আধিকারিকের কথায়, “বিষয়টি নিয়ে আমরা একটি মামলা দায়ের করেছি। এই কারবারের সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিদের একে একে গ্রেফতার করা হবে।” |