রাজ্যে ১৫ মাসের সরকারের বিরদ্ধে যখন ধীরে ধীরে সুর চড়াচ্ছে সিপিএম, সেই সময়ই ‘ধীরে চলো’ নীতির পক্ষে সওয়াল করল বাম শরিক ফরওয়ার্ড ব্লক! দলের সাধারণ সম্পাদক দেবব্রত বিশ্বাসের মতে, রাজ্যের মানুষ ‘পরিবর্তনে’র চেহারা দেখে হতাশ হচ্ছেন। কিন্তু বিরোধী পক্ষ হিসাবে বামেদের এখনই কোনও পরিস্থিতিতে ‘অতিরিক্ত প্রতিক্রিয়া’ দেখানো উচিত নয়। সরকারের সঙ্গে সহযোগিতামূলক ভূমিকার কথাই বলেছেন দেবব্রতবাবু। পঞ্চায়েত ভোটের আগে সব দলকেই যখন ক্রমশ আন্দোলনমুখী হয়ে সুর চড়াতে হচ্ছে, সেই সময়ে সাধারণ সম্পাদকের এমন বক্তব্যে ফ ব-র অন্দরেই বিভ্রান্তি তৈরি হয়েছে!
কলকাতায় দলের কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলী ও কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠক শেষ হওয়ার পরে রবিবার দেবব্রতবাবু বলেন, ‘পশ্চিমবঙ্গের পরিস্থিতি আশাপ্রদ নয়। আমাদের কাজ সংবেদনশীল, দায়িত্ববান বিরোধী দলের। |
সরকারের ত্রুটির জায়গাগুলি আমাদের মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। কিন্তু এখনই তা নিয়ে কোনও বিশেষ জায়গায় পৌঁছনোর পরিস্থিতি হয়নি।” কোনও বিশেষ ঘটনার প্রেক্ষিতে কি তিনি এমন কথা বলছেন? দেবব্রতবাবুর বক্তব্য, “সাধারণ ভাবেই বলছি। জনগণের ইচ্ছায় একটা সরকার নির্বাচিত হয়েছে। তাদের আরও অনেক দিন মেয়াদ বাকি আছে। এখন এমন কোনও বার্তা যাওয়া উচিত হবে না যে, আমরা সরকারের কাজে প্রতিবন্ধকতা তৈরি করছি।”
বড় শরিক সিপিএম যখন বিরোধিতার সুর ধারালো করছে, সেই সময়ে ফ ব-র পৃথক সুর পঞ্চায়েত ভোটের আগে ‘তাৎপর্যপূর্ণ’। দেবব্রতবাবুর ব্যাখ্যা, “যে কোনও প্রশ্নেই সরকারের বিরুদ্ধে হইহই করে নেমে পড়লে মনে হতে পারে, ক্ষমতায় ফেরার জন্য বামেরা মরিয়া! তার ফল বামেদের জন্য নেতিবাচক হবে।” কেন্দ্রীয় সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠক শুরুর আগের দিনই ফ ব-র রাজ্য সম্পাদক অশোক ঘোষ মুখ্যমন্ত্রীর জঙ্গল-সফর নিয়ে তীব্র প্রতিক্রিয়া জানান। দেববব্রতবাবুর এ দিনের সুরে স্বভাবতই ঈষৎ বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে এই বাম শরিক দলে। দলের রাজ্য কমিটির এক সদস্যের মত, “পঞ্চায়েত ভোটের আগে কিছু বিষয়ে আমাদের প্রতিক্রিয়া দেখাতেই হবে। কিছু বিষয়ে আন্দোলনও শুরু হয়েছে। আশা করা যায়, এই মাসেই রাজ্য কমিটির বৈঠকে এই নিয়ে আলোচনা হবে।” কেন্দ্রীয় কমিটির বৈঠকে ঠিক হয়েছে, নির্ধারিত সময়ের ৭ মাস আগে আগামী বছরের ২৪ থেকে ২৮ ফেব্রুয়ারি চেন্নাইয়ে ফব-র ১৭তম পার্টি কংগ্রেস বসবে। তার জন্য জানুয়ারির মধ্যে রাজ্য সম্মেলন সারতে হবে।
|
রাজ্য সরকারি সংস্থা তন্তুজ’র ‘এমপ্লয়িজ কো-অপারেটিভ ক্রেডিট সোসাইটি’র নির্বাচনে ছ’টি আসনের সব ক’টিতেই জয়ী হল তৃণমূল। শনিবার ওই সোসাইটির নির্বাচন ছিল। রবিবার ফল বেরনোর পরে দেখা যায়, সোসাইটি বামেদের হাতছাড়া হয়েছে। জিতেছে তৃণমূল সমর্থিত তন্তুজ কর্মচারী সমন্বয় কমিটি। যা তন্তুজর কর্মচারী, বিক্রয় কর্মী এবং আধিকারিকদের সংগঠন। কমিটির আহ্বায়ক তুলসী সিংহরায় বলেন, “৩৪ বছর বাদে প্রথম তন্তুজে বাম বিরোধী ইউনিয়ন জিতল।” এ দিন তৃণমূল প্রভাবিত ‘স্টেট গভর্নমেন্ট এমপ্লয়িজ ফেডারেশন (ইউনাইটেড)’-এর বিধাননগর অঞ্চলের দু’দিনের সম্মেলন শেষ হয়েছে। সংগঠনের সভাপতি মনোজ চক্রবর্তী বলেন, “অনুন্নত এলাকার উন্নয়নে রাজ্য সরকার যে টাকা খরচ করতে পারছে না, তা আমলাতান্ত্রিক ব্যর্থতা। এটা কাটাতে সরকারকে ফেডারেশনের কর্মীদের সঙ্গে যোগ রেখে চলতে হবে। সম্মেলন মনে করেছে, রাজ্যকে ফেডারেশনের সঙ্গে সমন্বয় বাড়াতে হবে।” |