স্লগ ওভারে এসে দক্ষিণবঙ্গে ব্যাট চালাতে শুরু করল বর্ষা।
আবহবিদেরা জানাচ্ছেন, দক্ষিণবঙ্গের স্থলভূমিতে থাকা একটি ঘূর্ণাবর্তের জন্য আগামী কয়েক দিন ভাল বৃষ্টি হবে। শুধু দক্ষিণে নয়, বৃষ্টি হবে উত্তরবঙ্গেও। কোনও কোনও এলাকায় ভারী বৃষ্টিরও পূর্বাভাস দিয়েছে আবহাওয়া দফতর।
কিন্তু তাতে চাষ ও চাষির ক্ষতি কোনও ভাবে পূরণ হবে কি?
হাওয়া অফিসের বক্তব্য, মরসুমের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত সুষম হারে বৃষ্টি হলে চাষ-আবাদে সমস্যা হয় না। কিন্তু এক দিনের ক্রিকেটে ‘স্লগ’ বা শেষ ওভারগুলিতে পিটিয়ে খেলে অনেক ক্ষেত্রে জেতা গেলেও অন্তিম পর্বে বর্ষার তৎপরতা তেমন কাজে আসে না। আবহবিদেরা বলছেন, শেষ পর্যায়ে বর্ষার দাপট বাড়লেও তাতে বৃষ্টি-ঘাটতি মেটার তেমন কোনও সম্ভাবনা নেই। আবহবিজ্ঞানের এক গবেষকের কথায়, “শেষ ল্যাপে বর্ষা উসেইন বোল্টের মতো দৌড়লে লাভের বদলে ক্ষতির আশঙ্কাই বেশি।”
কেন?
ওই গবেষক বলছেন, অগস্টের মাঝামাঝি থেকে অতিবৃষ্টি হলে তা চাষ-আবাদে কিংবা ভূগর্ভের জলস্তর পূরণে সাহায্য তো করবেই না। উল্টে বন্যা ডেকে আনতে পারে।
নতুন ঘূর্ণাবর্ত কতটা বৃষ্টি নামাতে পারে?
আবহাওয়া দফতর জানাচ্ছে, বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্তটি তৈরি হয় গত সপ্তাহের গোড়ার দিকে। শুক্রবার নাগাদ গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের স্থলভূমিতে প্রবেশ করে সে। তার পর থেকেই কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হয়ে চলেছে। ঘূর্ণাবর্তটি জোরালো হওয়ায় আগামী কয়েক দিনও বৃষ্টি হবে। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ রবিবার বলেন, “দক্ষিণবঙ্গে বৃষ্টির অনুকূল পরিস্থিতি রয়েছে। যত দিন ঘূর্ণাবর্তটি সক্রিয় থাকবে, তত দিনই ভাল পরিমাণে বৃষ্টি হবে।” এ দিন উপগ্রহ-চিত্রে দেখা গিয়েছে, মৌসুমি অক্ষরেখাও সক্রিয় রয়েছে কলকাতার উপরে। ঘূর্ণাবর্তের ফলে সেটি আরও জোরালো হবে বলে জানাচ্ছেন আবহবিদেরা।
কিন্তু সূচনা থেকেই বর্ষা এ বার ঠুকঠুকিয়ে ব্যাটিং করে আসছে। চার-ছয় কম। ফলে মোটের উপরে এ বার দক্ষিণবঙ্গের বর্ষা-ভাগ্য মন্দই। জুনের মাঝামাঝি বর্ষা দক্ষিণবঙ্গে ঢুকলেও বৃষ্টিপাতে তা বিশেষ প্রভাব ফেলতে পারেনি। অনাবৃষ্টির কবলে পড়েছে এই অঞ্চলের চারটি কৃষিপ্রধান জেলা। রাজ্যের কৃষি দফতর জানিয়েছে, ওই জেলাগুলিতে এ বার আমন ধানের চাষ মার খেয়েছে। জুলাইয়ে অগভীর নলকূপ বসিয়ে বীজতলা তৈরি করতে হয়েছে চাষিদের। এমনকী এ-পর্যন্ত তেমন জোরদার নিম্নচাপ তৈরি হয়নি একটিও। ফলে জুলাই অর্থাৎ আষাঢ়ের শেষ এবং শ্রাবণের প্রথমার্ধেও আশানুরূপ বৃষ্টি জোটেনি।
ঘাটতি আপাতত কতটা?
মৌসম ভবনের পরিসংখ্যান বলছে, চলতি বর্ষার মরসুমে এ দিন পর্যন্ত গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গে বৃষ্টি হয়েছে ৫৬৪.৮ মিলিমিটার, যা স্বাভাবিকের তুলনায় ২০ শতাংশ কম।
এই অবস্থায় শেষ বেলায় ঘূর্ণাবর্তের কাঁধে ভর দিয়ে বর্ষা ঘুরে দাঁড়ালে ঘাটতি কতটা কমবে?
আবহবিদদের একাংশের মতে, অগস্টের মাঝামাঝি থেকে বর্ষার যে-গতিপ্রকৃতি আন্দাজ করা যাচ্ছে, তাতে ঘাটতির পরিমাণ আরও কিছুটা কমতে পারে। তবে তা খুব বেশি কমবে বলে মনে হয় না। আলিপুরের এক আবহবিদ জানান, ঘূর্ণাবর্ত কেটে গেলে ফের কয়েক দিন বৃষ্টি না-ও হতে পারে। তার পরে অর্থাৎ অগস্টের শেষ সপ্তাহে ফের দাপট বাড়তে পারে বর্ষার।
কিন্তু এ দিন সকাল থেকে দক্ষিণবঙ্গের কোনও কোনও এলাকায় আবহাওয়া মেঘলা থাকলেও কোথাও কোথাও মেঘ সরে গিয়ে আকাশ সাফ হয়ে গিয়েছে। তাতে প্রশ্ন উঠেছে, বৃষ্টি কি তা হলে আর তেমন হবেই না?
পুরোপুরি হতাশ করছেন না আবহবিদেরা। তাঁরা বলছেন, মেঘলা আবহাওয়ায় ভূপৃষ্ঠের জল কম পরিমাণে বাষ্পে পরিণত (বাষ্পীভবন) হয়। তাই এই অবস্থায় বৃষ্টির বদলে অস্বস্তিকর ভ্যাপসা গরমের দাপট চলে। এই মরসুমে আকাশ পরিষ্কার থাকলে বরং বৃষ্টির সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। |