স্বর্ণযুগ না এলেও রুপোয়
কীর্তি গড়লেন সুশীল
হাভারতের সময় থেকে যে দেশ মল্লযুদ্ধের জন্য পরিচিত, তার সোনার খিদে শেষ পর্যন্ত মেটাতে পারলেন না সুশীল কুমার। ফাইনালের আগে অপ্রত্যাশিত অসুস্থতাই বাধা হয়ে দাঁড়াল। তাই অলিম্পিকের শেষ বেলায় পালোয়ানি প্যাঁচে সকলের নজর কাড়লেও শেষ রক্ষা হল না তাঁর, ভারতেরও।
সোনার লড়াইয়ে নামার আগে জীবনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ তিনটে ঘণ্টায় প্রস্তুতির জন্য সময়ই দিতে পারেননি সুশীল কুমার। ওই সময়ে হঠাৎই ডায়েরিয়ায় আক্রান্ত হন রুপোর ছেলে। ক্রমাগত বমি, বারবার বাথরুমে ছোটা। শরীর থেকে জল বেরিয়ে ফাইনালের ঠিক আগে ওজন কমে যায় তাঁর। যথেষ্ট দুর্বল তখন। ঘুরছে মাথাও। স্রেফ মনের জোরকে সম্বল করে নামেন জাপানের তাতসুহিরো ইওনেমিৎসুর বিরুদ্ধে। কিন্তু সেমিফাইনালে ফ্রি স্টাইল কুস্তিকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়া সুশীলের সামনে ইওনেমিৎসু ছাড়াও তখন ‘ডিহাইড্রেশন’ও যে ভয়ানক বাধা।
ফাইনালের আগের তিন ঘণ্টা কিন্তু সুশীলেই মশগুল ছিল দেশ। চমক দেখানো সেমিফাইনালের পরে অনেকেই ধরে নেন, ৬৬ কেজি ফ্রি স্টাইলে সোনা শুধু সময়ের অপেক্ষা।
সেমিফাইনালে কাজাখস্তানের প্রতিদ্বন্দ্বীকে ঘাড়ে তুলে উল্টে ফেলছেন সুশীল। ছবি: উৎপল সরকার
রবিবার দুপুর থেকে সেই স্বপ্নে বিভোর গোটা দেশ সন্ধ্যায় আটকে গিয়েছিল টিভি পর্দায়। শেষ পর্যন্ত অবশ্য মরীচিকাই থেকে গিয়েছে সোনা। যা নিয়ে আক্ষেপ সুশীলের গলাতেও, “সেমিফাইনালের ঠিক পরে পেটের গোলমাল ভুগিয়েছে আমাকে।” তবে এটা যে অজুহাত নয়, তা মেনে নিয়ে তাঁর আশা, “পরের অলিম্পিকে সোনার চেষ্টা করব।” সোনা এল না ঠিকই, কিন্তু ভারতে অলিম্পিক খেলাধুলোর ইতিহাসে চিরস্থায়ী আসন রবিবার থেকে পাকাপাকি ভাবে সুশীল কুমারের দখলে। তিনিই প্রথম ভারতীয় ক্রীড়াবিদ, যিনি কোনও ব্যক্তিগত খেলায় পরপর দু’টি অলিম্পিকে দেশকে পদক এনে দিলেন। চরম অসুস্থতা নিয়ে ফাইনালে সুশীলের লড়াইও এ দেশে কুস্তিকে আবার আলাদা গুরুত্ব এনে দেবে।
বস্তুত, ভারতে কুস্তির ঐতিহ্য আজকের নয়। মহাভারতের যুগেও এর প্রচলন ছিল। তখন বলা হত মল্লযুদ্ধ। শ্রীকৃষ্ণের পরামর্শে জরাসন্ধকে মল্লযুদ্ধেই শেষ করেছিলেন ভীম। কুরুক্ষেত্র যুদ্ধের পরে অন্ধ ধৃতরাষ্ট্রের অভিসন্ধি বুঝতে পেরে যুধিষ্ঠির তাঁর সামনে এগিয়ে দিয়েছিলেন লোহার তৈরি ভীম। আলিঙ্গনের ছলে লৌহ ভীমকেই চুরমার করেছিলেন ধৃতরাষ্ট্র। আধুনিক কুস্তির ভাষায় যাকে বলে ‘বিয়ার হাগ’, যেখানে প্রতিপক্ষকে বুকে টেনে তার পাঁজর ও মেরুদণ্ডে মোক্ষম চাপ দেওয়া হয়। তেমন কোনও ওস্তাদের প্যাঁচ অবশ্য অসুস্থ সুশীল ফাইনালে দিতে পারেননি। ‘বিয়ার হাগ’ তো নয়ই, ‘বস্টন ক্র্যাব’ বা ‘অক্টোপাস হোল্ড’-এর মতো প্যাঁচও নয়, যা গুরুত্বপূর্ণ সময়ে পয়েন্ট এনে দেয়।
দু’দশকে ভারত
দেশ স্থান
২০১২ লন্ডন
৫৫
২০০৮ বেজিং
৫০
২০০৪ আথেন্স

৬৫
২০০০ সিডনি

৭১
১৯৯৬ আটলান্টা

৭১
১৯৯২ বার্সেলোনা পদক শূন্য
অথচ ফাইনালের আগে আজ গোটা দিন সুশীলই কিন্তু ছেয়ে ছিলেন কুস্তির আঙিনায়। প্রথম রাউন্ডে বাই পাওয়ার পরে প্রি কোয়ার্টারে ছিটকে দেন গত বারের অলিম্পিক চ্যাম্পিয়নকে। কোয়ার্টার ফাইনালে উজবেক প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে জেতার পরে সুশীল পালোয়ানের কেরামতি লন্ডন দেখল সেমিফাইনালে। প্রথম রাউন্ডে সুশীলের। দ্বিতীয় কাজাখ প্রতিপক্ষ তানাতারভের। শেষ রাউন্ডে তানাতারভ যখন ৩ পয়েন্টে এগিয়ে তখনই অবিশ্বাস্য ভাবে ফিরে আসেন সুশীল।
বীরেন্দ্র সহবাগের নজফগড়েরই বাসিন্দা সুশীল। কিন্তু তাঁর জীবনে ক্রিকেট নেই। যদিও সুশীলের কৃতিত্বে উচ্ছ্বসিত নজফগড়ের নবাব সহবাগ। টুইটে লিখেছেন, ‘তুমি নজফগড়ের শের। তোমার জন্য দারুণ গর্বিত ভাই।’ জয়ের পরে সুশীল কিন্তু রয়েছেন কুস্তিতেই। বলেছেন, “আগেই বলেছি, ভাল করব। যোগেশ্বর ব্রোঞ্জ এনেছে। এখন একটা রুপো।”
স্বাধীনতা-উত্তর যুগে ভারতের প্রথম অলিম্পিক পদক এসেছিল কুস্তিতেই। ৫২-এর হেলসিঙ্কি অলিম্পিকে কুস্তিতে ব্রোঞ্জ জেতেন কে ডি যাদব। তাঁকে শেষ বয়সে দারিদ্রের সঙ্গেও ‘কুস্তি’ লড়তে হয়েছিল। সুশীলের গল্পটা অবশ্য অন্যরকম। বেজিংয়ে ব্রোঞ্জের পরে লন্ডনে রুপো। এখন তিনি সত্যিই ওস্তাদ।
উত্থান ও আশাভঙ্গ...




First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.