|
|
|
|
দশটি খুনে জড়িত ছিল বাচ্চু, দাবি করছে পুলিশ |
নিজস্ব সংবাদদাতা • বহরমপুর |
২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর থেকে ২০১২ সালের ১৯ এপ্রিল— বহরমপুর ও তার লাগোয়া এলাকায় ১০ জন খুন হন। মুর্শিদাবাদের পুলিশ সুপার হুমায়ুন কবীর বলেন, “মহাদেব মণ্ডল ওরফে বাচ্চু নামে এক যুবক ওই সব ক’টি খুনেই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ ভাবে জড়িত। পুলিশ দীর্ঘ দিন ধরে তাকে খুঁজছিল। সম্প্রতি তাকে গ্রেফতার করা হয়েছে।” পুলিশ সুপার বলেন, “প্রাথমিক তদন্তে আমরা জেনেছি, মহাদেব একটি মার্ডার সিন্ডিকেট-এর সঙ্গে যুক্ত ছিল। তাকে কাউকে খুন করতে বলা হলে সে নিপুণ ভাবে সেই কাজ করত।”
জেলা পুলিশের খাতায় ‘মোস্ট ওয়ান্টেড’ বাচ্চু দু’বছর থেকে বাড়ি ছাড়া ছিল। বহরমপুরের মণীন্দ্রনগর পঞ্চায়েতের পাকুড়িয়া গ্রামে তার বাড়ি। পঞ্চাননতলা মোড় থেকে ডন বস্কো স্কুলের গলি দিয়ে যাওয়ার পরে মাটির রাস্তা ধরে বেশ কিছুটা এগিয়ে সরু গলির ভেতরে বাচ্চু মণ্ডলের এক তলা পাকা বাড়ি। ১০ ফুট বাই ১০ ফুট একটি ঘর, পাশে এক ফালি রান্নাঘর আর গ্রিল ঘেরা ছোট একটি বারান্দা। রবিবার সকালে সেই বারান্দায় দুই ছেলেমেয়েকে পাশে বসিয়ে তার স্ত্রী রেশনের ২ টাকা কিলো দরের চাল পরিষ্কারের কাজে ব্যস্ত ছিলেন। তিনি বলেন, “বিয়ের পরে মুদিখানা চালাত। এর পরে কোথা থেকে কী হল, জানি না! রাত-বিরেতে বাড়িতে পুলিশ এসে ওর খোঁজ করত। গত দু’বছর ধরে পুলিশের ভয়ে বাড়ি ছাড়া ছিল।” মায়ের কথা শুনতে শুনতে তাঁদের দুই ছেলেমেয়ে আরও মায়ের গা ঘেঁসে বসে।
বাচ্চুর স্ত্রী’র কথায়, “বহরমপুরের আদালতে আমি ওর সঙ্গে দেখা করতে গিয়েছিলাম। তখন বলেছিল ‘ছেলেমেয়েরা যাতে ভাল থাকে সেই চেষ্টা করো’। তবে ওর নাম যে মহাদেব, তা বিয়ের এত দিন পরেও জানতাম না। পুলিশের কাছেই প্রথম ওই নাম শুনি।” বাচ্চু’র বাবা তিনকড়ি মণ্ডল ছিলেন রেশম শিল্প দফতরের চতুর্থ শ্রেণির কর্মী। সদ্য অবসর নিয়েছেন। তিন ছেলেমেয়ের মধ্যে বাচ্চু দ্বিতীয়। খুব ছেলেবেলায় তার মা মারা যাওয়ার পরে বাবা দ্বিতীয়বার বিয়ে করেন। তখন বাচ্চু ৫ বছরের। পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত পড়াশোনার পরে স্কুল যাওয়া বন্ধ করে দেয় সে।
পুলিশের দাবি, বাচ্চু স্বীকার করেছে, ২০০৮ সালের ১২ নভেম্বর সিপিএম নেতা মজিদ শেখ খুনের ঘটনায় বোমা সরবরাহ করা ছাড়াও অপরাধীদের মোটরবাইকে চড়িয়ে নির্দিষ্ট জায়গায় পৌঁছে দেওয়ার জন্য তাকে দু’হাজার টাকা দেওয়া হয়েছিল। পরের বছর ২০০৯ সালের ৪ ফেব্রুয়ারি সবুর শেখকে খুনের সময়ে তাকে দেওয়া হয় ৪ হাজার টাকা। এর পরেই ‘মার্ডার সিন্ডিকেট’-এর মাসিক ‘ভাতা’র তালিকায় তার নাম নথিভুক্ত হয়। মাসে ৬ হাজার টাকা করে ভাতা মিলত তখন।
২০০৯ সালের ২৭ মে বহরমপুর ইন্দ্রপ্রস্থে বিশ্বনাথ চক্রবর্তী ও গৌতম দাস খুন হন। পুলিশ সুপার বলেন, “ওই ঘটনায় টার্গেট মিস হয়। খুন হয়ে যায় ওই দুজন। ওই খুনের জন্য ১ লক্ষ টাকা দেওয়া হয় এবং তা ভাগ হয় ৬ জনের মধ্যে। এর পরেই ২০১০ সালের ৩ জানুয়ারি সিপিএমের শিক্ষক-নেতা পঞ্চানন মণ্ডলকে খুনের জন্য ওরা ৬০ হাজার টাকা পেয়েছিল। ওই টাকা ৪ জনের মধ্যে ভাগ হয় বলে বাচ্চু পুলিশকে জানায়।”ওই ঘটনার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে কাশিমবাজার রেল স্টেশনের কাছে খুন হন সানু শেখ। ওই বছরই মে মাসে পঞ্চাননতলা মোড়ে শান্তিলাল জৈন ও জয়চাঁদ ছাজের খুন হন। শান্তিলালবাবুর শরীর লক্ষ্য করে প্রথম বোমাটি বাচ্চু ছোড়ে ‘টার্গেট’ চিহ্নিত করে দেওয়ার জন্য। পরে বাচ্চুর মাসিক ভাতার পরিমাণও বেড়ে ৬ হাজার থেকে ৮ হাজার হয়। পুলিশ সুপার বলেন, “তখন তাকে বাইরে থাকা-খাওয়ার খরচ দেওয়া হত। আর শুধু সংসার খরচের জন্য তাকে দেওয়া হত মাসে ৮ হাজার টাকা। এছাড়াও প্রতিটি খুনের পরে আলাদা করে ইনসেনটিভ দেওয়া হত।” পুলিশ সুপার বলেন, “অভাবের তাড়নায় হেরোইন কারবারেও জড়িয়ে পড়ে বাচ্চু। রঘুনাথগঞ্জের ফুলতলায় হেরোইন বিক্রি করতে এসেই ধরা পড়ে ওই যুবক।”
আজ সোমবার ফের তাকে বহরমপুরের আদালতে হাজির করানো হবে। |
|
|
|
|
|