|
|
|
|
আজ ডিওয়াইএফের জেলা কমিটি গঠন |
সম্মেলনে সেই আত্মসমালোচনা |
বরুণ দে • মেদিনীপুর |
‘পরিবর্তনের সরকার’ গড়ার পিছনে দলের ত্রুটি-বিচ্যুতি অনুঘটকের কাজ করেছে বলে কবুল করল ডিওয়াইএফ। শনিবার থেকে মেদিনীপুরে শুরু হয়েছে ডিওয়াইএফের ১৭তম জেলা সম্মেলন। চলবে আজ, সোমবার পর্যন্ত। শনিবার সন্ধ্যায় পেশ করা সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে নিজেদের ত্রুটি-বিচ্যুতিগুলি তুলে ধরার পাশাপাশি আগামী দিনে আন্দোলন কোন পথে এগোবে, তার দিশা তুলে ধরেছেন যুব নেতৃত্ব। পালাবদলের আগে তৃণমূলের সভার ‘ভিড়’কে গুরুত্ব না দেওয়া যে একটা বড় ‘ভুল’ সে কথা মনে করিয়ে জেলা সম্মেলনের সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘‘বেশিরভাগ সময়েই ওদের জমায়েতগুলিতে রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে লোক হাজির হয়েছিল। আমাদের অনেকের মধ্যেই এমন চর্চা চলে যে, বাইরে থেকে লোক আনছে। কিন্তু, যে ভাবেই হোক, কর্মসূচিগুলির কিছু প্রভাব জনমনে যে পড়েছিল, এটা সত্য।’ পালাবদলের ১৫ মাসের মাথায় সম্পাদকীয় প্রতিবেদনে যুব সংগঠনের এই ‘স্বীকারোক্তি’ তাৎপর্যপূর্ণ বলেই মনে করছে রাজনৈতিক মহল। পাশাপাশি তৃণমূলের গোষ্ঠী সংঘর্ষের ঘটনা থেকে কেউ যদি ‘লাভের’ আশা দেখেন, তা আরও একটা ‘ভুল’ হবে বলে জানিয়েছেন যুব নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে সতর্ক করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘এলাকার দখল কায়েম রাখার জন্য ওদের নিজেদের মধ্যে মারামারি, খুনোখুনি, তীব্র গোষ্ঠী কোন্দল ঘটছে। এতে যদি আমরা অতি উৎসাহিত হই, তা সাংগঠনিক ভাবে আমাদেরকে কোনও কার্যকরী লাভ দেবে না।’
এই প্রথম পশ্চিম মেদিনীপুরের মতো জেলায় ‘প্রতিকূলতার’ মধ্যে সম্মেলন করতে হয়েছে ডিওয়াইএফকে। তবে এমন পরিস্থিতি থেকেও যে ‘ঘুরে দাঁড়ানো’ সম্ভব, সম্মেলনে উপস্থিতি প্রতিনিধিদের তা জানিয়েছেন নেতৃত্ব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘সরকার তৈরি করার সংগ্রামটাই আমাদের মতো বিপ্লবী যুব সংগঠনের একমাত্র কাজ নয়। সমাজ বদলের লড়াইয়ে আরও বন্ধুদের যুক্ত করার সংগ্রামেই আমরা আছি।’ এক সময় জঙ্গলমহলে ‘সশস্ত্র’ শিবির তৈরি করার অভিযোগ ওঠে সিপিএমের বিরুদ্ধে। যুবকর্মীরাই এই সব শিবিরে থাকতেন। ডিওয়াইএফ অবশ্য দাবি করেছে, সেই সময় প্রতিরোধ সংগ্রাম চলেছে। জেলা সম্মেলনের প্রতিবেদনে তাই বলা হয়েছে, ‘এক সময় যৌথ বাহিনীর অভিযান ও গণ প্রতিরোধের ফলে মাওবাদীরা কোণঠাসা হয়ে পড়ে। জল্লাদ বাহিনীর নৃশংস হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করতে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে যুব-কমরেডরা সাহসে ভর করে প্রতিরোধে সামিল হয়েছে।’ রাজ্যে বামফ্রন্টের ভরাডুবির কারণ বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘অবশ্যই পরিবর্তনের সরকার গড়ার পিছনে আমাদের ত্রুটি-বিচ্যুতি, আচার-আচরণ, সাংগঠনিক দুর্বলতা, প্রশাসনিক দুর্বলতা ও কিছু ক্ষেত্রে গ্রহণযোগ্যতার অভাব অনুঘটকের কাজ করে। সাথে সাথে একবার বামফ্রন্ট যাক না, এই ধারণা ক্রমশ দানা বাঁধতে সাহায্য করে। বিরোধী শক্তির কুৎসা এবং প্রচারমাধ্যমের ধারাবাহিক অপপ্রচার প্রতিষ্ঠান বিরোধিতার ধুয়ো তুলতে সমর্থ হয়। জেলার একাংশ যুবসমাজও বিভ্রান্ত হয়। বামপন্থীদের প্রতি বিরূপ হয়ে ওঠে। পাল্টে দেখার ইচ্ছা আশ্রয় পায় তাদের মনে। এক অংশ আমাদের কর্মসূচিতে অংশ নিলেও কার্যত মানসিক ভাবে নিজেদেরকে আমাদের থেকে বিচ্ছিন্ন করে ফেলে।’
সংগঠনের ‘ভিত’ মজবুত করতে বেকারদের চাকরির দাবিকেই যে সামনে রাখা হবে, সম্মেলন থেকে তা-ও স্পষ্ট করেছেন যুব নেতৃত্ব। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘চাকুরির মিথ্যে প্রতিশ্রুতি, বেকার যুবদের বাদ দিয়ে অবসরপ্রাপ্তদের নিয়োগের বিরুদ্ধে এবং রেল-সহ রাজ্য ও কেন্দ্রীয় সরকারি দফতরে শূন্যপদে নিয়োগের দাবিতে প্রচার ও আন্দোলন তীব্র করতে হবে। স্থানীয় ইস্যুর দাবিতে প্রতিনিয়ত আন্দোলন গড়ে তুলতে হবে। মতাদর্শগত আন্দোলন তীব্র করে বৈজ্ঞানিক সমাজতন্ত্রের পক্ষে আরও জোরদার প্রচার গড়ে তুলতে হবে।’ আগের থেকে পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে দাবি করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ‘কয়েক মাসের রুদ্ধশ্বাস অবস্থা ধীরে ধীরে কাটিয়ে ওঠা গিয়েছে। শুরুতে হাতে গোনা কয়েকজন কর্মী আত্মসমর্পণ করে। অনেকেই গুটিয়ে যায়। নিস্ক্রিয়তা শেষ পর্যন্ত আত্মসমর্পণেরই নামান্তর। ধৈর্য ধরে, নানা নতুন কৌশল অবলম্বন করে, অন্যত্র হলেও সাংগঠনিক কাঠামো টিকিয়ে রাখার লড়াই শুরু হয়। রাস্তায় নেমে একটু একটু করে আবার আত্মবিশ্বাস ফিরছে। একঝাঁক উঠতি বয়সের কমরেডদের নিয়ে সম্মেলনগুলিতে ভিড় বেড়েছে। এদের মধ্যে সক্রিয়তাও লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এদের রক্ষা করতে হবে। আবার এই সব কমরেড কোনও ব্যক্তিগত প্রত্যাশা নিয়ে আসছে কি না, তা-ও নজরে রাখতে হবে।’
শহরের জেলা পরিষদ হলের এই সম্মেলনে প্রায় ৫০০ প্রতিনিধি যোগ দেন। এর মধ্যে প্রায় ৬০ জন মহিলা। সমাবেশ শুরুর আগে কলেজ মোড়ে প্রকাশ্য সমাবেশ হয়। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের প্রাক্তন সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক মহম্মদ সেলিম, রাজ্য সম্পাদক আভাস রায়চৌধুরি, জেলা সম্পাদক কমল পলমল, সুদীপ্ত সরকার প্রমুখ। সমাবেশে বক্তব্য রাখতে গিয়ে রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে সেলিম বলেন, “জিনিসপত্রের দাম আগে কখনও এত বাড়েনি। সমস্যার গভীরে পৌঁছনো হচ্ছে না। শুধু বুজরুকি আর চালাকি চলছে। শুধু বাজারে ঘুরলে কী জিনিসপত্রের দাম কমে?” তাঁর মন্তব্য, “উনি (মুখ্যমন্ত্রী) যেটা জানার নয়, সেটা জানেন। যেটা জানার, সেটা জানেন না। জ্ঞানেশ্বরী দুর্ঘটনা ঘটল। বললেন, সিপিএম করেছে। দিল্লি পেট্রোপণ্যের দাম বাড়াচ্ছে। বলছেন, জানি না।”
আজ, সোমবার সম্মেলনের শেষ দিনে নতুন কমিটি তৈরি হবে। দলীয় সূত্রে খবর, জেলা সম্পাদকের পদ থেকে সরে যাচ্ছেন কমল পলমল। জেলা সভাপতির পদ থেকে সরে যাচ্ছেন জয়ন্ত কয়োড়ীও। এই দুই পদেই ‘নতুন মুখ’ আসার সম্ভাবনা। নতুন সম্পাদক ও সভাপতি কে হবেন, তা নিয়ে সংগঠনের অন্দরে জল্পনাও শুরু হয়েছে। গত শুক্রবার সিপিএমের যুব-ছাত্র সংগঠনের দায়িত্বপ্রাপ্ত কমিটির এক বৈঠক হয়। বৈঠকে সিদ্ধান্ত হয়েছিল, সভাপতি-সম্পাদক পদে ‘নতুন মুখ’ তুলে আনা হবে। ওই দুই পদে বসতে পারেন, এমন কয়েকজন যুব নেতার নাম নিয়ে ওই বৈঠকে আলোচনাও হয়। আলোচিত নামগুলির মধ্যে ছিলেন চিন্ময় পাল, মহসিস মাহাতো, প্রশান্ত ঘোষ, কুন্দন গোপ, দিলীপ সাউ প্রমুখ। শনিবার সিপিএমের জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর বৈঠকেও এ নিয়ে আলোচনার হয়েছে। দলীয় সূত্রে খবর, এ বার সম্পাদকের দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন চিন্ময়। আর সভাপতি দৌড়ে এগিয়ে রয়েছেন দিলীপ। |
|
|
|
|
|