গ্রেফতার শিক্ষিকা
মুখে বিষ ঢেলে স্বামীকে খুনের নালিশ ঝাড়গ্রামে
ঘুমন্ত স্বামীর মুখে বিষ ঢেলে খুন করার অভিযোগে রবিবার ঝাড়গ্রাম শহরের রঘুনাথপুর থেকে এক শিক্ষিকাকে গ্রেফতার করল পুলিশ।
ধৃত নিবেদিতা নিয়োগী মণ্ডল পশ্চিম মেদিনীপুরের লোধাশুলি অঞ্চলের একটি গ্রামীণ প্রাথমিক স্কুলের শিক্ষিকা। শনিবার রাতে তাঁর স্বামী জয়দেব মণ্ডলের (৩১) মৃত্যু হয় বিষক্রিয়ায়। রবিবার জয়দেবের বাবা কৃষ্ণপদ মণ্ডল ঝাড়গ্রাম থানায় বৌমার বিরুদ্ধে ছেলেকে খুনের অভিযোগ দায়ের করেন। ঝাড়গ্রাম পুলিশ জেলার সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “ঘুমের মধ্যে জয়দেবকে খুন করা হয় বলে পুলিশে অভিযোগ হয়েছে। জেরায় পুলিশের কাছে স্বামীকে খুনের কথা কবুল করেছেন ওই শিক্ষিকা। খুনের কারণ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। সোমবার ধৃতকে ঝাড়গ্রাম আদালতে তোলা হবে।”
নিবেদিতার বাপের বাড়ি শহরের ঘোড়াধরা এলাকায়। জয়দেবের পৈতৃক বাড়িও ঘোড়াধরায়। বছর চারেক আগে ভালবেসে নিবেদিতাকে বিয়ে করেন জয়দেব। পারিবারিক অশান্তির জন্য বছর দু’য়েক আগে আলাদা বাড়ি ভাড়া নেন তাঁরা। দম্পতির দেড় বছরের একটি ছেলে রয়েছে। মাস তিনেক আগে বাসা বদলে ১৪ নম্বর ওয়ার্ডের রঘুনাথপুরে একটি ভাড়াবাড়িতে ওঠেন দম্পতি।
নিবেদিতা নিয়োগী মণ্ডল জয়দেব মণ্ডল
জয়দেববাবু একটি বৈদ্যুতিন সংবাদমাধ্যমে অস্থায়ী ক্যামেরাম্যানের পদে কাজ করতেন। ছোটখাটো ব্যবসাও করতেন। কর্মস্থলে দীর্ঘ অনুপস্থিতির কারণে বছরখানেক ধরে বেতন বন্ধ রয়েছে নিবেদিতার। স্ত্রী-র বেতন চালু করার জন্য জেলা প্রাথমিক বিদ্যালয় সংসদে বহুবার তদ্বির করেছিলেন জয়দেব। কিন্তু নিবেদিতার বেতন চালু হয়নি। তদন্তে পুলিশ জানতে পেরেছে, এই নিয়ে নিত্য ঝগড়া হত সংসারে।
পুলিশ সূত্রের খবর, শনিবার রাত আড়াইটে নাগাদ নিবেদিতা জয়দেবের বন্ধুদের ফোন করে স্বামীর ‘অসুস্থতা’র খবর দেন। জয়দেবের বন্ধু অরুণ বিশুই, অশোক ভট্টাচার্যরা বলেন, “শনিবার গভীর রাতে গিয়ে দেখি ঘরের মেঝেয় পড়ে জয়দেব যন্ত্রণায় কাতরাচ্ছে। মুখ দিয়ে গ্যাঁজলা উঠছিল। মাঝেমধ্যে ওদের ঝগড়া হত। তবে এ রকম ঘটবে ভাবিনি।” খবর পেয়ে কৃষ্ণপদবাবুও ছেলের বাড়িতে ছুটে যান। তাঁর দাবি, “অ্যাম্বুল্যান্সে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় কোনও মতে ছেলে জানায়, ঘুমন্ত অবস্থায় ওর মুখে বিষ ঢেলে দিয়েছে নিবেদিতা।” রাত ৩টে নাগাদ ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে জয়দেবকে মৃত বলে ঘোষণা করা হয়। এ দিনই ঝাড়গ্রাম জেলা হাসপাতালের পুলিশ মর্গে জয়দেবের দেহের ময়না-তদন্ত হয়। পুলিশ সূত্রের খবর, বিষক্রিয়ায় মৃত্যু হয়েছে বলে উল্লেখ রয়েছে রিপোর্টে। পুলিশের দাবি, নিবেদিতাকে ধরার সময় বাড়ি থেকে তরল রাসায়নিক মাখানো এক টুকরো কাপড় মিলেছে। সেটি পরীক্ষা করে দেখা হবে বলে পুলিশ জানিয়েছে।
দেড় বছরের নাতি অভিজ্ঞানের দায়িত্ব অবশ্য কৃষ্ণপদবাবুরা নিতে চাননি। অভিজ্ঞান তাই মায়ের সঙ্গেই রয়েছে। স্বামীর মৃত্যুর পরেও নিবেদিতার প্রতিক্রিয়া এ দিন ছিল অস্বাভাবিক রকমের শান্ত। পুলিশ এ দিন দুপুর ১২টা নাগাদ তাঁর বাড়িতে যায়। তার আগে রান্নাবান্না করে ছেলেকে খাইয়ে দেন নিবেদিতা। এর পরে ধীরেসুস্থে ছেলেকে কোলে নিয়ে পুলিশের গাড়িতে উঠে বসেন তিনি।
নিবেদিতার বাবা, পেশায় আইনজীবী দেবীপ্রসাদ নিয়োগী বলেন, “বাড়ির অমতে বিয়ে করার জন্য চার বছর আগেই আমরা মেয়ের সঙ্গে সব সম্পর্ক চুকিয়ে দিয়েছি।”

নিজস্ব চিত্র এবং ফাইল চিত্র।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.