দলের মধ্যে থেকেই এ বার সিপিএম নেতৃত্বের বিরুদ্ধে ‘পুরুষতান্ত্রিক মনোভাব’ নিয়ে দল চালানো ও ‘লিঙ্গবৈষম্যের’ অভিযোগ উঠল। সিপিএমের সাধারণ সম্পাদক প্রকাশ কারাট নিজে যে দিল্লি রাজ্য কমিটির দায়িত্বে, সেখানেই এই অভিযোগ উঠেছে।
অভিযোগ তুলেছেন কারাট-দম্পতির ঘনিষ্ঠ প্রসেনজিৎ বসুর স্ত্রী আলবিনা শাকিল। আলবিনার এই অভিযোগের পরে গত কাল তাঁকে সিপিএম থেকে বহিষ্কার করা হয়। আর তা নিয়ে সিপিএমের অন্দরমহলে নতুন করে অসন্তোষ তৈরি হয়েছে।
রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে প্রণব মুখোপাধ্যায়কে সমর্থনের প্রতিবাদ জানিয়ে দল ছেড়েছিলেন প্রসেনজিৎ। সিপিএম তাঁকে বহিষ্কার করে। প্রসেনজিতের স্ত্রী আলবিনা কিন্তু দল ছাড়েননি। কিন্তু ‘শো-কজ’ করে তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ আনা হয়, তিনি ও প্রসেনজিৎ দু’জনেই দল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে প্রণববাবুকে সমর্থনের বিষয়টিকে নেহাৎ অজুহাত হিসেবে ব্যবহার করেছেন।
আলবিনা জবাবে জানান, “দল না ছাড়তেই আমাকে দলত্যাগী বলে দেওয়া হল, কারণ আমার স্বামী পার্টি থেকে পদত্যাগ করেছেন। এতে রাজ্য সম্পাদকের লিঙ্গবৈষম্যমূলক ও পুরুষতান্ত্রিক মনোভাবই প্রকাশ পায়।” আলবিনার অভিযোগ, প্রসেনজিৎ দল ছাড়ার পর থেকেই তাঁর উপরেও পদত্যাগ করার জন্য চাপ ও বহিষ্কার করার হুমকি দেওয়া হচ্ছিল।
যাঁর বিরুদ্ধে এই অভিযোগ, সেই দিল্লির রাজ্য সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়াল এ বিষয়ে কোনও কথা বলতে চাননি। আলবিনার নাম শুনেই তিনি ফোন কেটে দেন। কিন্তু দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ের এক জন অধ্যাপক এই সিদ্ধান্তের প্রতিবাদে ইতিমধ্যেই রাজ্য কমিটি থেকে পদত্যাগ করেছেন। গত কাল যে রাজ্য কমিটির বৈঠকে আলবিনাকে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত হয়েছে, সেখানেও সকলে এর পক্ষে ছিলেন না। ভোটাভুটিতে ২১ জনের মধ্যে চার জন বিপক্ষে মত দেন।
সিপিএমের মহিলা সংগঠন গণতান্ত্রিক মহিলা সমিতিতেও আলবিনার বহিষ্কার নিয়ে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। মহিলা সমিতির মধ্যে প্রশ্ন উঠেছে, প্রসেনজিৎ যে প্রশ্নে দল ছেড়েছেন, সে বিষয়ে কোনও প্রকাশ্য অবস্থান নেননি আলবিনা।
তা হলে তিনি কী ধরনের ‘দলত্যাগী কাজ’ করলেন? প্রসেনজিৎ-আলবিনার প্রতি সর্বোচ্চ নেতৃত্বের মনোভাব নিয়েও দলে প্রশ্ন তৈরি হয়েছে। প্রকাশ ও বৃন্দা কারাটের খুবই কাছের মানুষ ছিলেন এই তরুণ দম্পতি।
দিল্লির রাজ্য সম্পাদক পুষ্পেন্দ্র গ্রেওয়ালও তাঁদের অত্যন্ত স্নেহ করতেন। এখন তাঁদের সম্পর্কে এই নেতাদের মনোভাবে দলের অনেকেই বিস্মিত।
সিপিএম নেতৃত্বর অভিযোগ, রাষ্ট্রপতি নির্বাচন নিয়ে প্রকাশ্য অবস্থান না নিলেও, এ বিষয়ে জওহরলাল নেহরু বিশ্ববিদ্যালয়ের বিক্ষুব্ধ এসএফআই নেতাদের ‘পরোক্ষে’ সমর্থন জানিয়েছিলেন আলবিনা।
জেএনইউ-র যে এসএফআই-নেতাদের বহিষ্কার করা হয়েছে, তাঁদের সঙ্গে আলোচনা করে ফের সংগঠনে ফিরিয়ে নেওয়ার পক্ষে ছিলেন তিনি। বিক্ষুব্ধ ছাত্রদের ডাকা একটি সভাতেও হাজির ছিলেন তিনি। উল্টো দিকে আলবিনা দলকে চিঠিতে জানিয়েছেন, রাজ্য কমিটিতে ছাত্র সংগঠনের ভারপ্রাপ্ত হিসেবেই তিনি মনে করেছিলেন, বিক্ষুব্ধদের তোলা প্রশ্নের জবাব দেওয়া দরকার। তবে তিনি দলীয় সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে যাননি। অথচ তিনিও প্রসেনজিতের সঙ্গে দল ছেড়েছেন বলে রাজ্য নেতৃত্বের তরফে গুজব ছড়ানো হয়।
সিপিএম নেতাদের বক্তব্য, দলের তরফে প্রসেনজিৎ-আলবিনাকে থাকার বন্দোবস্ত করে দেওয়া হয়েছিল। প্রসেনজিতের সঙ্গেই সেই ঘর ছাড়েন তিনি। সেই কারণে তিনিও দল ছেড়েছেন বলে ধরে নেওয়া হয়েছিল। প্রশ্ন উঠেছে, তা হলে কি আলবিনার স্বামীর থেকে আলাদা থাকা উচিত ছিল! সিপিএম নেতারা এই প্রশ্নে আপাতত মুখে কুলুপ আঁটাকেই শ্রেয় বলে মনে করছেন। |