আইন থাকা সত্ত্বেও ডেঙ্গি সংক্রান্ত তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে বেসরকারি ক্লিনিক ও হাসপাতালগুলির উপরে সরকারের কোনও নিয়ন্ত্রণ নেই। রাজ্যের স্বাস্থ্য দফতর শনিবার তা স্বীকারও করে নিয়েছে। ফলে ডেঙ্গি-আক্রান্তের যে সংখ্যা রাজ্য সরকার দিচ্ছে, তার বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন উঠছে।
ডেঙ্গি প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের জন্য কোথায় কত রোগী রয়েছে, তা জানার গুরুত্ব যে অসীম, তা মেনে নিয়েছেন স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী চন্দ্রিমা ভট্টাচার্য ও স্বাস্থ্য দফতরের শীর্ষকর্তারা। কারণ, যে অঞ্চলে রোগী বেশি মিলবে, রোগ নিয়ন্ত্রণে সেখানে বাড়তি জোর দেওয়ার কথা। কিন্তু মন্ত্রী এবং স্বাস্থ্যকর্তারা এ দিন জানিয়ে দেন, বেসরকারি সংস্থা তথ্য জোগাতে না চাইলে তাদের বাধ্য করা যায় না। চন্দ্রিমাদেবীর কথায়, “বেসরকারি জায়গায় অনুপ্রবেশকারীর মতো ঢুকে পড়ে তথ্য চাওয়ার অধিকার আমাদের নেই।”
কিন্তু বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্র থেকে সঠিক তথ্য না-পেলে কোন অঞ্চলে রোগ বেশি হচ্ছে তা চিহ্নিত করে সরকার রোগ প্রতিরোধের কাজ শুরু করবে কী করে? দফতরের মুখপাত্র অসিত বিশ্বাস বলেন, “বিষয়টি নিয়ে আমরা যথেষ্ট সজাগ। এই কারণেই গত শুক্রবার ২৫টি বেসরকারি হাসপাতাল ও নার্সিংহোমকে বৈঠকে ডাকা হয়েছিল। এদের ল্যাবরেটরিতেই বেসরকারি ক্ষেত্রের ৭৫-৮০ শতাংশ রক্ত পরীক্ষা হয়। তাদের প্রতি সপ্তাহে বাধ্যতামূলক ভাবে রিপোর্ট পাঠাতে বলা হয়েছে। ১৫ দিন অন্তর সেই রিপোর্ট পরীক্ষা করা হবে। নিয়ম না মানলে ক্লিনিক্যাল এস্টাবলিশমেন্ট আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।”
কিন্তু আদেশ অমান্য করায় এ পর্যন্ত কতগুলি বেসরকারি হাসপাতালের বিরুদ্ধে এখনও পর্যন্ত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে? স্বাস্থ্য প্রতিমন্ত্রী বলেন, “যেগুলি ‘নোটিফায়বেল’ রোগের মধ্যে পড়ে, সেগুলির ক্ষেত্রে তথ্য না দিলে এই আইনে শাস্তি দেওয়া যায়। কিন্তু ডেঙ্গি নোটিফায়বেল নয়, তাই এর তথ্য কেউ না দিলে শাস্তি দেওয়া যায় না।” তা হলে কি ওই ২৫টি সংস্থার কেউ তথ্য দিতে না চাইলে তাকে শাস্তি দেওয়া যাবে না? এর উত্তর এড়িয়ে যান মন্ত্রী ও স্বাস্থ্যকর্তারা।
ডেঙ্গি নির্ণয়ের পরীক্ষা নিয়ে বিভ্রান্তি কাটাতে জ্বরের পাঁচ দিনের দিন ‘ম্যাক এলাইজা টেস্ট’-এর উপরে এ দিন জোর দিয়েছেন স্বাস্থ্যকর্তারা। অসিতবাবু বলেন, “অনেক বেসরকারি চিকিৎসা কেন্দ্রের চিকিৎসক জ্বরের দু’দিনের মাথায় শুধু এনএস-১ টেস্ট করাচ্ছেন। এতে ডেঙ্গি পাওয়া গেলেও অনেক ক্ষেত্রে পরে তা নিশ্চিত ভাবে নির্ধারিত হয় না। তাই এনএস-১ পরীক্ষার পরে জ্বরের পাঁচ দিনের মাথায় বাধ্যতামূলক ভাবে ম্যাক-এলাইজা বা ‘অ্যান্টিবডি’ পরীক্ষা করানোর অনুরোধ জানাচ্ছি।” সরকারি মেডিক্যাল কলেজ, কলকাতা পুরসভার ৫টি ল্যাবরেটরি, স্কুল অফ ট্রপিক্যাল মেডিসিন ও নাইসেডের মতো জায়গায় এই পরীক্ষা নিখরচায় হয়।
কলকাতা পুরসভার ১৪২ জন মেডিক্যাল অফিসারকে স্বাস্থ্য দফতর প্রশিক্ষণ দেবে, যাতে তাঁরা বিভিন্ন ওয়ার্ডে রোগ প্রতিরোধের কাজে সাহায্য করতে পারেন। পাশাপাশি, গ্রামীণ স্বাস্থ্য মিশনের তহবিল থেকে কলকাতাকে ১৬ লক্ষ টাকা, সল্টলেক, আসানসোল, শিলিগুড়ি ও হাওড়াকে ৩ লক্ষ টাকা করে ও ৪০টি ছোট পুরসভাকে ৭৫ হাজার টাকা করে ডেঙ্গি মোকাবিলায় দেওয়া হচ্ছে বলে সরকারি সূত্রে জানানো হয়েছে। |