অমৃতসরের হাসপাতালে বসেই মনে পড়ল গ্রামের নাম টাসুলি
কী করে পঞ্জাবে চলে গিয়েছিলেন, কিছুই তাঁর মনে নেই।
কাঁটাতারের ও পারে পাকিস্তান। তারই কাছে ঘুরতে দেখে সীমান্তরক্ষী বাহিনী তাঁকে পাকড়াও করেছিল। আদালত ঘুরে ঠাঁই হয় অমৃতসরের সরকারি মানসিক হাসপাতালে।
টানা সাতটা বছর।
কথা বলতে পারেন না। মাথার মধ্যে বিস্মৃতির নিকষ অন্ধকার।
বাড়ি কোথায়?
বারবার জানতে চেয়েছে পুলিশ, আদালত, ডাক্তারেরা। অন্ধকার ভেদ করে কোনও নাম ফুটে ওঠেনি। বাঁকুড়া, পাত্রসায়র, টাসুলি কিচ্ছু না। ফ্যালফ্যাল করে চেয়ে থেকেছেন শুধু। শনিবার বাঁকুড়ার পাত্রসায়রে সেই টাসুলি গ্রামেই নিজের বাড়িতে ফিরে এলেন কমল সরকার।
কিছু দিন আগে, গত ২৫ জুলাই একই হাসপাতাল থেকে বাঁকুড়ার ইন্দাসে ফিরেছিলেন সুবোধ রুইদাস। মনের ভুলে তিনি যেন কী করে গিয়ে পড়েছিলেন পাকিস্তানে। সে দেশের জেলে কাটাতে হয়েছিল সাত বছর। তার পরে ওই হাসপাতাল।
স্ত্রী ও ছেলের সঙ্গে কমলবাবু। ছবি: শুভ্র মিত্র
কমলবাবুর গল্প একটু অন্য রকম। তাঁর ভাই দিলীপ সরকারের কথায়, “দাদা মাঝে-মধ্যেই মানসিক রোগে ভুগত। ১৯৯৯ সালের শীতে হঠাৎ এক দিন বাড়ি ছেড়ে চলে যায়। অনেক খুঁজেও সন্ধান পাইনি।” তখন কমলবাবুর বয়স বছর ৩৮। চাষবাস করেন। ঘরে স্ত্রী ছাড়াও দুই মেয়ে, এক ছেলে। এখন তাঁর শুধু মনে পড়ে, “বাড়ি থেকে বেরিয়ে বর্ধমান চলে গিয়েছিলাম। তার পরে কিছুটা বাসে, কয়েক বার ট্রেনে...।”
ব্যস! বাকিটা মুছে গিয়েছে।
অমৃতসরের বিদ্যাসাগর ইনস্টিটিউট অব মেন্টাল হেল্থের অধিকর্তা বি এল গয়াল জানান, পাকিস্তান সীমান্তে পাত্তি গ্রাম থেকে সীমান্তরক্ষী বাহিনী কমল সরকারকে ধরেছিল। বিচারবিভাগীয় ম্যাজিস্ট্রেট তাঁকে ওই হাসপাতালে পাঠিয়ে দেন। সেটা ২০০৫-এর এপ্রিল। “ও তখন একেবারে কিছুই বলতে পারত না। দীর্ঘ চিকিৎসায় একটু-একটু করে সুস্থ হতে থাকে।” এ বছরের গোড়ার দিকে
হঠাৎই অন্ধকার দরজাটা খুলে যায়। চিকিৎসকের কথায়, “ওই সময় থেকে ও কথা বলতে শুরু করে। ফেব্রুয়ারি-মার্চ নাগাদ নিজের গ্রাম, ডাকঘর, থানা সব বলে দেয়।”
হাসপাতাল থেকে যোগাযোগ করা হয় নয়াদিল্লিতে রেসিডেন্ট কমিশনারের সঙ্গে। তিনি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের সচিবের সঙ্গে যোগাযোগ করেন। রাজ্য পুলিশকে খবর দেওয়া হয়। পাত্রসায়রে খবর আসে। পুলিশেরই সাহায্যে সোমবার অমৃতসরে যান দিলীপবাবু ও তাঁর এক ভাইপো বংশী। শনিবার সকালে কমলবাবুকে নিয়ে তাঁরা এসে পৌঁছন পাত্রসায়র থানায়। খবর পেয়ে চলে আসেন কমলবাবুর স্ত্রী মিনতি ও ছেলে সমীরণ। তাঁদের দেখেই জড়িয়ে ধরেন বছর পঞ্চাশের মানুষটি। বলতে থাকেন “ফেরার আশা তো ছেড়েই দিয়েছিলাম। কী ভাগ্যে যে ফিরলাম। হাসপাতালে বসে তোমাদের কথা খুব মনে পড়ছিল।”
সে দিনের দশ বছরের সমীরণ এখন বছর বাইশের তরতাজা তরুণ। দুই মেয়ে শিখা আর শোভার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সমীরণ বলেন, “এত দিন পরেও বাবাকে কিন্তু আমি ঠিক চিনতে পেরেছি।” পাশে দাঁড়িয়ে মুখ টিপে হাসেন মিনতিদেবী।
বারো বছরে বাড়িটা বদলে গিয়েছে অনেক। তবু বাড়িই তো!



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.