পুলিশের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন
মমতার সভায় গোলমাল পাকানো যুবক গ্রেফতার
মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বিশৃঙ্খলা পাকানোর অভিযোগে এক যুবককে গ্রেফতার করে বিতর্কে ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ।
গত বুধবার পশ্চিম মেদিনীপুরের বেলপাহাড়িতে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের জনসভায় ‘গোলমাল’ পাকানোর অভিযোগে এক যুবককে আটক করেছিল পুলিশ। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশেই তাঁকে ধরা হয়। ‘আপত্তিকর’ কিছু না মেলায় ওই দিনই তাঁকে ছেড়েও দেওয়া হয়। সে সময় পুলিশ জানতে পারে, বিনপুর থানার নয়াগ্রামের বাসিন্দা বছর বত্রিশের ওই যুবকের নাম শিলাদিত্য চৌধুরী। তিনি পেশায় বাসের খালাসি। চাষবাসও করেন। শুক্রবার শিলাদিত্যকে ফের গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাঁকে ১৪ দিনের জেল হেফাজতের নির্দেশ দিয়েছেন বিচারক।
জেলা পুলিশের একটি সূত্রের খবর, বুধবার ধরেও ছেড়ে দেওয়ার পরে শিলাদিত্য বাড়ি ফিরে যান। কিন্তু শুক্রবার দুপুরে গ্রামের মাঠে চাষ করার সময় তাঁকে ফের গ্রেফতার করে বেলপাহাড়ি থানার পুলিশ। শিলাদিত্যর বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৪৪৭ (বেআইনি প্রবেশ), ৩৩২ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীকে আঘাতের চেষ্টা করে কাজে বাধা দেওয়া), ৩৫৩ (কর্তব্যরত সরকারি কর্মীর কাজে বাধা দেওয়া) এবং ৫০৬ (হুমকি দেওয়া) ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। এর মধ্যে (৩৩২, ৩৫৩) জামিন-অযোগ্য ধারাও রয়েছে। ঝাড়গ্রাম জেলা পুলিশ সুপার ভারতী ঘোষের দাবি, “ওই যুবককে বুধবার ছেড়ে দেওয়া হয়নি। যখন জেরা চলছে, তখন উনি আচমকা পালিয়ে জনতার ভিড়ে মিশে যান। শুক্রবার ফের তাঁকে ধরা হয়।”
বুধবার বেলপাহাড়ির জনসভায় গোলমালের জন্য আটক
করা হয়েছিল শিলাদিত্য চৌধুরীকে (বাঁ দিকে)। —ফাইল চিত্র
রাজ্য সরকারের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলাতেই পুলিশ শিলাদিত্যকে ধরেছে এই অভিযোগে সরব হয়েছে সিপিএম। রাজ্যের বিরোধী দলনেতা তথা সিপিএমের পলিটব্যুরো সদস্য সূর্যকান্ত মিশ্রের কটাক্ষ, “মুখ্যমন্ত্রীকে কেউ কোনও প্রশ্ন করতে পারবেন না? মুখ্যমন্ত্রী যা দাবি করবেন, সব ব্যাপারেই সাধারণ মানুষকে হ্যাঁ বলতে হবে? কেউ পাল্টা প্রশ্ন করলেই তাঁকে গ্রেফতার করে পুলিশ হেনস্থা করবে? মুখ্যমন্ত্রী কেন সাধারণ মানুষের প্রশ্নকে এত ভয় পাচ্ছেন?”
বিরোধী দলনেতার অভিযোগ উড়িয়ে তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক তথা রেলমন্ত্রী মুকুল রায় বলেছেন, “প্রশ্ন করার অধিকার সবার আছে। তবে ওই যুবক প্রশ্ন করছিলেন না। উনি চিৎকার করছিলেন।” রেলমন্ত্রীর অভিযোগ, “ওই যুবক সভা ভন্ডুল করার চেষ্টা করছিলেন। ওঁর বদ মতলব ছিল। উনি জেড প্লাস নিরাপত্তা বেষ্টনী ভেঙেছিলেন। মদ্যপ অবস্থায় উনি পুলিশকর্মী এবং মহিলাদের ধাক্কা এবং হুমকিও দিচ্ছিলেন।”
বুধবার মুখ্যমন্ত্রীর সভা চলাকালীনই হঠাৎ সভাস্থলে জনতার জন্য নির্দিষ্ট এলাকায় বাঁশের ব্যারিকেড ধরে চিৎকার করতে শোনা যায় এক যুবককে। তিনি হাত তুলে বলতে থাকেন, “দিদি, চাষিদের জন্য কিছু বলুন। সারের দাম বেড়ে যাচ্ছে বলে চাষ করতে পারছি না। খাব কী?”
মুখ্যমন্ত্রী প্রথমে তাঁকে ‘বসুন, বসুন’ বলে নিরস্ত করার চেষ্টা করেন। যুবক থামেননি। ‘কটূক্তি’ও করতে শোনা যায় তাঁকে। তাঁকে ঘিরে হট্টগোল বাধে। তখন ওই যুবককে ‘আটক’ করার জন্য পুলিশ-কর্তাদের নির্দেশ দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী সে দিন অভিযোগ করেন, “খবর পেয়েছি, চার-পাঁচ জন মাওবাদী সভায় গোলমাল পাকানোর জন্য এসেছে।” পুলিশ শিলাদিত্যকে নিয়ে যায় মঞ্চের পিছনে। মুখ্যমন্ত্রী তখন জনতার উদ্দেশে বলেন, “দেখলেন তো, কেমন হাতেনাতে ধরে দিলাম! এদের আমি চিনি।”
জেলা পুলিশের একাংশের অবশ্য বক্তব্য, শিলাদিত্যকে জেরা করে সে দিন আপত্তিকর কিছুই পাওয়া যায়নি। তাই ছেড়ে দেওয়া হয়েছিল। এ দিন ধৃতকে ঝাড়গ্রাম এসিজেএম আদালতে হাজির করানো হয়। সেখানে পুলিশ জেরা চলাকালীনই শিলাদিত্যর পালিয়ে যাওয়ার অভিযোগ তুললে অভিযুক্তের আইনজীবী অশ্বিনী মণ্ডল পাল্টা প্রশ্ন করেন। মুখ্যমন্ত্রীর জন্য নিরাপত্তার কড়া বেষ্টনীতে (সংরক্ষিত এলাকায়) বেআইনি ভাবে ঢোকায় অভিযুক্ত শিলাদিত্য কী ভাবে জেরার সময় পালিয়ে গেলেন, সে প্রশ্ন তোলেন তিনি। অশ্বিনীবাবুর দাবি, “শিলাদিত্যকে সাজানো মামলায় ধরা হয়েছে।” বিচারক সুপর্ণা রায় ধৃতকে ১৪ দিন জেল-হাজতের নির্দেশ দেন।
পুলিশের দাবি নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন সিপিএম নেতৃত্বও। সূর্যকান্ত মিশ্রের মন্তব্য, “পুলিশ জিজ্ঞাসাবাদ করে যাঁকে ছেড়ে দিল, কী করে দু’দিন বাদে আবার তাঁকেই গ্রেফতার করল? এ তো তুঘলকি রাজত্ব চলছে!” তৃণমূলের পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা সভাপতি দীনেন রায় পাল্টা বলেছেন, “ওই যুবক মুখ্যমন্ত্রীর সভায় বিশৃঙ্খলা পাকিয়েছিলেন। সূর্যকান্তবাবুরা রাজ্য জুড়েই বিশৃঙ্খলায় মদত দিচ্ছেন।” তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ ডেরেক ও-ব্রায়েন জানিয়েছেন, মুখ্যমন্ত্রীর দফতর থেকে এই গ্রেফতারের ব্যাপারে পুলিশকে কোনও নির্দেশ দেওয়া হয়নি।
মা সন্ধ্যা চৌধুরী এবং স্ত্রী খুকুকে নিয়ে পরিবার শিলাদিত্যর। সন্ধ্যাদেবী বলেন, “ছেলে খারাপ মতলবে ওই সভায় যায়নি। ওই একমাত্র রোজগেরে। যদি ভুল করে থাকে, ওকে যেন ক্ষমা করে দেওয়া হয়।”


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.