জনগণনা হয় দশ বছর অন্তর, আর পাঁচ বছর অন্তর প্রাণীসুমারি। ২০০৭ সালের পর সারা দেশের সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও সেই প্রাণীসুমারি শুরু হবে আগামী ১৫ অক্টোবর।
পশ্চিমবঙ্গে গরু, মহিষ, ভেড়া, ছাগল, হাঁস, মুরগি, কুকুর গোনা হবে প্রাণীসুমারিতে। তার আগে ১৫ সেপ্টেম্বর থেকে রাজ্যের সমস্ত গ্রাম-শহরে যে সব বাড়িতে ওই ধরনের প্রাণী রয়েছে এবং সেই সঙ্গে খাটাল, মাংসের দোকান, খামারের তালিকা তৈরির কাজ চলবে।
মাংস বা অন্য কোনও প্রয়োজনে বিক্রির জন্য এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে, এমন প্রাণীদের গণনা হবে সুমারির প্রথম দিন, ১৫ অক্টোবর। ওই দিন হাটেবাজারে চলবে প্রাণীসুমারির কাজ। একই সঙ্গে ১৫ অক্টোবর মালিকানাহীন, রাস্তার ষাঁড় ও পথকুকুরের গণনা করতে হবে। কোন গ্রাম বা পাড়ায় ওই ধরনের কত প্রাণী রাস্তায় ঘুরে বেড়াচ্ছে, নথিভুক্ত করতে হবে তা-ও। কারণ, ২০১২-র প্রাণীসুমারিতে পাওয়া সব তথ্যের উল্লেখ থাকবে ১৫ অক্টোবর তারিখ ধরেই।
গৃহপালিত গবাদি পশু, হাঁস, মুরগি, ছাগল, ভেড়া প্রভৃতি গণনার পর প্রাথমিক তথ্য সংগ্রহকারী ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট তালিকাটি এলাকার পঞ্চায়েত প্রধান, পুর কমিশনার বা কাউন্সিলারের কাছ থেকে তাঁর ‘সিল’-সহ সই করিয়ে জমা দেবেন। এই প্রাণীসুমারির পদ্ধতি চূড়ান্ত করতে চলতি সপ্তাহে মন্ত্রী নুরে আলম চৌধুরীর সভাপতিত্বে বেলগাছিয়ায় প্রাণিসম্পদ বিকাশ দফতরে জেলা প্রাণিসম্পদ সুমারি আধিকারিকদের বৈঠক বসে।
রাজ্যের দুগ্ধ কমিশনার উদয়শঙ্কর নন্দী জানান, প্রাণিসম্পদ বিকাশে সুষ্ঠু পরিকল্পনা তৈরি এবং দুধ, ডিম, মাংসের নিজস্ব চাহিদা মেটানোর জন্য রাজ্যের সমস্ত গৃহপালিত গবাদি পশু ও হাঁস-মুরগির সংখ্যা জানা প্রয়োজন। পশ্চিমবঙ্গে গবাদি পশুর সংখ্যা দেশের মধ্যে সব চেয়ে বেশি। রাজ্যে পোলট্রির সংখ্যাও বাড়ছে। অথচ, দুধ, ডিম, মাংস, সব ক্ষেত্রেই পশ্চিমবঙ্গ ঘাটতি রাজ্য। নিজের চাহিদা মেটানোর জন্য পশ্চিমবঙ্গ ভিন রাজ্যের মুখাপেক্ষী।
প্রাণী দফতরের মতে, এখানকার দেশি গরুগুলি দৈনিক গড়ে মাত্র এক থেকে দু’লিটার দুধ দেয়। অথচ ভিন রাজ্যের উন্নত জাতের গরু দুধ দেয় দৈনিক আট থেকে দশ লিটার।
রাজ্যে ৬৯ লক্ষের মতো দেশি গরু আছে। উন্নত ও কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে এদের মধ্যে থেকেই বাড়তি দুধ দিতে পারে, এমন গরুর সংখ্যা বাড়ানো যায়। এর জন্য গুজরাত ও পঞ্জাব থেকে ষাঁড় আনার কথা ভাবা হচ্ছে। ১০০টি ব্লকে বিশেষ গো-সম্পদ অভিযান কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে।
প্রাণীসুমারি করলে বোঝা যাবে, এই ধরনের কর্মসূচির দৌলতে প্রত্যাশিত লক্ষ্যের দিকে কতটা এগোনো যাচ্ছে। রাস্তার কুকুর গণনা করলে বোঝা যাবে, কোন এলাকায় এ ধরনের কত কুকুরের নির্বীজকরণ হয়েছে বা হয়নি। ২০০৭-এর সুমারিতে দেখা গিয়েছিল, রাজ্যে শুয়োর, ষাঁড় ও হাঁসের সংখ্যা কমেছে। |