‘ভালবাসার’ মানুষটিকে খুন করে মোটেও অনুতপ্ত নয় চেতন শিওরান। বরং চেতন পুলিশকে জানায়, ‘‘ও আমার জীবনটা নষ্ট করে দিয়েছে।” আর সেই ‘অপরাধের’ শাস্তি দিতে প্রকাশ্যে নিজের হাতেই বছর আঠারোর তরুণী বর্ষা যাদবের গলা কেটে দেয় সে। শুক্রবার হিসারের ওই ভয়াবহ কাণ্ডের কথা মনে করতেই এখনও শিউরে উঠছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা। যদিও ধৃত ‘প্রত্যাখ্যাত’ প্রেমিক চেতন কিন্তু নির্বিকার। উল্টে পুলিশের কাছে তার সদর্প ঘোষণা, ধরা না পড়লে সেও আত্মহত্যা করত।
বৃহস্পতিবার ঠিক একই ভাবে খুন হন মুম্বইয়ের বছর পঁচিশের বাঙালি আইনজীবী পল্লবী পুরকায়স্থ। দু’টি খুনের কারণের মধ্যে ফারাক থাকলেও পুলিশকর্তাদের একাংশের দাবি, একই ভাবে খুন করা হয়েছে বর্ষা এবং পল্লবীকে।
|
চেতন শিওরান |
কী ভাবে খুন হন বর্ষা? পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, হিসারের গুরু জাম্বেশ্বর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ছিলেন বর্ষা। বাড়ি বিশ্ববিদ্যালয় চত্বর থেকে দশ কিলোমিটারের মধ্যে হলেও চেতনকে এড়াতে সম্প্রতি তিনি থাকতে শুরু করেছিলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসেই। সপ্তাহ শেষে ছুটি কাটাতে শুক্রবার বাড়ি ফিরবেন বলে ক্যাম্পাস থেকে বেরোন বর্ষা। ক্যাম্পাসের সামনেই অটোর জন্য অপেক্ষা করছিলেন তিনি। ঠিক সেই সময়ই আচমকা ছুরি হাতে বর্ষার উপরে চড়াও হয় চেতন। কেটে দেয় তাঁর গলা। আর্তনাদ করে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন বর্ষা। সেই চিৎকার শুনেই বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তারক্ষী ও পথচলতি মানুষেরা ছুটে আসেন। চেতনকে ধরে তাঁরাই পুলিশের হাতে তুলে দেন। যদিও রাস্তার উপর কাতরাতে থাকা বর্ষাকে সাহায্য করতে এগিয়ে আসেননি কেউ। স্থানীয় সূত্রে খবর, অন্তত ২০ মিনিট এ ভাবেই পড়ে ছিলেন বর্ষা। পরে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে তাঁকে মৃত বলে ঘোষণা করেন চিকিৎসকেরা।
বিষয়টি নিয়ে আক্ষেপ জানিয়েছেন হিসারের এসএসপি সতীশ বালন। তাঁর বক্তব্য, পথচলতি মানুষেরা আরও একটু ‘মানবিক’ হলে হয়তো বাঁচানো যেত বর্ষাকে। তিনি এ দিন খুনের কারণ সম্পর্কেও জানান। তিনি বলেন, “একতরফা প্রেমের হতাশার জেরেই এই খুন। ছেলেটি বেশ কয়েক দিন ধরেই বর্ষার উপর নজর রাখছিল।”
একই দাবি বর্ষার মা-বাবার। জানান, বর্ষার সঙ্গে চেতনের আলাপ কোটার কোচিং সেন্টারে। সেখান থেকেই বন্ধুত্ব। পরে পুণের এক ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ভর্তি হয় রোহতকের বাসিন্দা চেতন। তাতে বর্ষার প্রতি প্রেমে ভাটা পড়েনি। যদিও বর্ষা তাকে আমল দেয়নি বলে দাবি তাঁর মা-বাবার। বর্ষার এ হেন আচরণে ‘ক্ষুব্ধ’ চেতন বেশ কয়েক দিন আগে চলে আসে হিসারে। দেখা করার চেষ্টাও করে তাঁর সঙ্গে। বর্ষা তাতে রাজি না হলে তাঁকে বিরক্ত করা শুরু করে চেতন। এমনকী সব সময় বর্ষার উপর কড়া নজর রাখতেও শুরু করে সে। শেষমেশ শুক্রবার ‘সুযোগ’ বুঝে বর্ষাকে খুন করে চেতন। ঠিক এ ভাবেই পল্লবীর উপরে নজর রেখে পরিকল্পিত ভাবে তাঁকে খুন করে তাঁরই আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী সাজ্জাদ আহমেদ মোগল।
পল্লবীও বর্ষার মতোই আর্তনাদ করেছিলেন। ফারাক শুধু এ টুকুই, পল্লবীর চিৎকার প্রতিবেশীরা শুনতেই পাননি। আর বর্ষার চিৎকার শুনেও শোনেননি পথচলতি মানুষজন। |