রবিবার ছুটির দিন। সঙ্গে লেজুড় শুক্র-শনি। দু’দিনই ছুটি দিয়ে দেওয়া হয়েছে ফুলিয়া শিক্ষানিকেতন হাইস্কুল।
সৌজন্যে, তৃণমূল ছাত্র পরিষদের ‘ছাত্র-যুব উৎসব’।
প্রধান শাসকদলের জন্যই যে এই বন্দোবস্ত, প্রধান শিক্ষক দেবদাস ভাদুড়ি তা গোপন রাখেননি। তাঁর ব্যাখ্যা, “স্কুল মাঠেই তো ফুটবল প্রতিযোগিতা হবে। স্কুল ছুটি না দিলে ওদের অসুবিধা হবে না? আমি তো এর মধ্যে কোনও অন্যায় দেখছি না!” শুধু কি বলা? প্রথম দিন, শুক্রবার বিকেলে টিএমসিপি-র মঞ্চে বসে সোৎসাহে খেলাও দেখলেন তিনি। |
মাস কয়েক আগে কলকাতায় এসইউসি-র ছাত্র সংগঠনের মিছিলে স্কুল-পড়ুয়াদের হাঁটানোয় চটেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী। কোনও রাজনৈতিক সংগঠন যাতে পড়ুয়াদের মিছিলে না হাঁটায় সে ব্যাপারে হুঁশিয়ারিও দেন। এ দিন কিন্তু সাতসকালে বন্ধ থাকা স্কুলের নিচু ক্লাসের বেশ কিছু পড়ুয়াকে নিয়ে মিছিল করে টিএমসিপি। তবে এর মধ্যে কোনও অন্যায় দেখছেন না তৃণমূল নেতারা। ফুলিয়া টাউনশিপ পঞ্চায়েতের তৃণমূল প্রধান রঘুনাথ চট্টোপাধ্যায় সাফাই, “আমরা তো ছাত্রদের কোনও রাজনৈতিক সভায় নিয়ে যাইনি! ওরা তো শুধু রবীন্দ্রনাথ, নজরুল আর মুখ্যমন্ত্রীর ছবি নিয়ে মিছিলে হেঁটেছে। আমি কোনও অন্যায় দেখছি না।”
নদিয়া জেলা স্কুল পরিদর্শক বিশ্বজিৎ বিশ্বাস অবশ্য এই ঘটনায় তাঁর ক্ষোভ আড়াল করেননি। তাঁর মতে, “স্কুল ছুটি দিয়ে খেলাধুলার আয়োজন করে ঠিক করেনি স্কুল কর্তৃপক্ষ। আমরা স্কুল কর্তৃপক্ষের কাছে এর জবাব চাইব।” অস্বস্তিতে টিএমসিপি-র রাজ্য সভাপতি শঙ্কুদেব পণ্ডাও। তাঁর বক্তব্য, “রাজনৈতিক কর্মসূচিতে ছাত্রদের সামিল করা যাবে না। এ তো নেত্রীই বলে দিয়েছিলেন। স্কুলটাই বা বন্ধ রাখা হল কেন, তাও খোঁজ নিয়ে দেখা দরকার।”
নদিয়া জেলা তৃণমূলের প্রাক্তন সভাপতি তথা রাজ্যের উদ্যান পালন মন্ত্রী উজ্জ্বল বিশ্বাসও দলের ছাত্র সংগঠনের এমন হঠকারিতায় বিরক্ত। তাঁর কথায়, “মুখ্যমন্ত্রী স্পষ্টই নির্দেশ দিয়েছেন স্কুলের পঠনপাঠন ক্ষুণ্ণ করা যাবে না। ছাত্রদের মিছিলে আনারও তিনি বিরোধী। ফুলিয়ায় টিএমসিপি-র এমন হঠকারিতা অন্যায় হয়েছে।” সিপিএমের ফুলিয়া জোনাল কমিটির সম্পাদক শান্তনু চক্রবর্তীর টিপ্পনী, “শাসকদল কী ভাবে শিক্ষাক্ষেত্রে নৈরাজ্য সৃষ্টি করছে, এই ঘটনায় সেটাই আরও এক বার প্রমাণ হল।” |