|
হার মানবেই এই হারপিস
হারপিস হয় ভাইরাস থেকে। জ্বালা জ্বালা ভাব, চুলকানি, জলভরা
ফোসকা।
ছোঁয়াচে। কষ্টকর।
সময় থাকতে
সাবধান হোন। বড়
ক্ষতি থেকে রেহাই পাবেন। ডা. সুব্রত মালাকার |
|
|
কিছু চর্মজাত রোগ যথাযথ সময়ে ঠিক যত্ন এবং ডাক্তারের পরামর্শ না নিলে খুব বড় সমস্যা হতে পারে। যেমন হারপিস।
হারপিস দু’ধরনের হয় ১) হারপিস সিমপ্লেক্স, ২) হারপিস জস্টার
এই দুটিই ত্বকের ভাইরাস ঘটিত এক ধরনের অসুখ কিন্তু আমরা এটিকে বুঝতে দেরি করে ফেলি। ফলে সমস্যাটি বড় আকার ধারণ করে।
হারপিস সিমপ্লেক্সএটি একটি ভাইরাস ঘটিত রোগ। নিবিড় শারীরিক যোগাযোগ এবং যে কোনও ছোঁয়াছুঁয়ি থেকে এই রোগটি বিভিন্ন জনের মধ্যে ছড়িয়ে যায়।
এক জনের থেকে অন্য জনের মধ্যে কী ভাবে ছড়ায়?
• চুম্বন থেকে হতে পারে।
• এক জনের ব্যবহৃত জিনিস অন্য জন ব্যবহার করলে হবে। যেমন লিপস্টিক, তোয়ালে, চিরুনি, পাউডারের ব্রাশ ইত্যাদি।
• মায়ের যৌনাঙ্গে হারপিস থাকলে বাচ্চার জন্ম থেকেই হারপিস হবার সম্ভাবনা থাকবে।
হারপিসের ভাইরাস শরীরে প্রবেশ করার পর কী হয়?
• হারপিসের ভাইরাস শরীরের ভেতরে প্রবেশ করলে শরীর থেকে যেতে চায় না। ত্বকের উপরিভাগের ক্ষত ঠিক হয়ে যায়, কিন্তু ভাইরাসটি নার্ভ-এর কোষের মধ্যে থেকে যায় এবং প্রায় সারা জীবন বাসা বেঁধে থাকে। এটি ঘুমন্ত অবস্থায় মাঝে মাঝে নার্ভ-এর কোষ থেকে বেরিয়ে ত্বকে পুনরায় ক্ষত সৃষ্টি করে।
|
ঘুমন্ত অবস্থা থেকে কী কী কারণে আবার জেগে ওঠে? |
• টেনশন, চিন্তা, দীর্ঘ দিনের কোনও অসুখ
• জ্বর, বহু ক্ষণ রোদ্দুরে ঘোরাঘুরি
• ঋতুচক্র, কোনও অপারেশনের পর
|
কী দেখে বুঝব হারপিস হয়েছে |
• হওয়ার আগে জায়গাটিতে জ্বালা জ্বালা ভাব, চুলকানি হয়। এটি সাধারণত মুখ, বুক বা পিঠের এক দিকে হয়। অনেক সময় মনে হয় জায়গাটি কেটে যাচ্ছে এবং তার পরেই জ্বরঠোসা হয়।
• প্রথমে জলভরা ছোট ফোসকার মতো দেখা দেয়। এ সময় প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। তার দু-চার দিনের মধ্যে ফোসকাটি ফেটে ফ্লুইড বেরিয়ে আসে। এর পরে ফোসকার জায়গায় চামড়া ওঠার মতো হয়ে যায়। এই অবস্থা প্রথম দিকে মোটামুটি দু-সপ্তাহ থাকে।
• মুখে হারপিস হলে জিভে, ঠোঁটে, গালে হওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
• যৌনাঙ্গের যে কোনও অংশে হতে পারে।
• জ্বর এবং শরীরে ব্যথা হতে পারে।
• এই সংক্রমণ চোখেও হতে পারে। তখন আলোর সামনে যেতে অসুবিধে হয়। চোখ থেকে রস বেরোয়। এই অবস্থায় কিন্তু চিকিৎসা দ্রুত শুরু করতে হবে। |
চিকিৎসা |
• এই ক্ষতগুলি স্বাভাবিক নিয়মে কয়েক দিন বাদেই সেরে যায়। কিন্তু ব্যথার জন্য চিকিৎসার দরকার হয়। তাড়াতাড়ি চিকিৎসা শুরু করলে অন্য জনের মধ্যে ছড়াবে না। |
কিছু টিপস |
• কিছু ওষুধ ক্ষতের ওপর লাগালে উপশম হয়।
• মাঝে মাঝে বরফ ঘষলে ভাল লাগে। ঠান্ডা জলের সেঁকও আরামপ্রদ।
• যে কারণগুলির জন্য ঘুমন্ত ভাইরাসটি জেগে ওঠে, সেগুলিকে পরিত্যাগ করা। যেমন চিন্তা, রোদে ঘোরাঘুরি ইত্যাদি।
• মুখে বা ঠোঁটে হলে, সতর্ক হয়ে চলুন যাতে অন্য জনের মধ্যে ছড়িয়ে না যায়।
• হারপিসের জায়গায় ওষুধ লাগালে হাত সাবান দিয়ে ধুয়ে ফেলবেন। |
হারপিস জস্টার |
• চিকেন পক্স-এর ভাইরাস এবং হারপিস জস্টার-এর ভাইরাস এক। অনেক সময় দেখা যায় যাঁদের চিকেন পক্স হয়েছে, তাঁদের হারপিস জস্টারও হয়েছে। কিন্তু চিকেন পক্স হলেই যে হারপিস জস্টার হবে, এই ধারণাটি ভুল। |
কী কী সমস্যা হয় |
• এই অসুখটির একটি সাবধানী সংকেত থাকে। শরীরের এক দিকের কিছুটা জুড়ে জ্বালা করে। তার সঙ্গে থাকে চুলকানি এবং টান ভাব। এটি থাকে এক থেকে তিন দিন পর্যন্ত।
• র্যাশ থাকে তিন দিন। ক্রমশ র্যাশগুলি ফোসকায় পরিণত হয়। চার-পাঁচটি ফোসকা এক সঙ্গে হয়।
• ফোসকাগুলিতে কখনও জল, কখনও পুঁজ থাকে।
• দশ-পনেরো দিনের মধ্যে ফোসকাগুলি চুপসে যায়। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে ফোসকাতে প্রচণ্ড ব্যথা থাকে। কিন্তু ফোসকা কমতে আরম্ভ করলে ব্যথাও কমে যায়। বয়স্কদের ক্ষেত্রে ব্যথা কয়েক মাস পর্যন্ত থেকে যায়।
• ফোসকার সঙ্গে রোগীর জ্বর, মাথাব্যথা এবং শরীরে ব্যথা থাকতে পারে। |
চিকিৎসা |
• সাধারণত ওষুধ ছাড়াই দু-তিন সপ্তাহের মধ্যে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু অনেক সময় জ্বালা বা চুলকানি বেড়ে যায়, যা কয়েক মাস পর্যন্ত থাকতে পারে। প্রথম দুই তিন দিনের মধ্যে চিকিৎসা করালে ফল পাবেন।
• ব্যথা নিরাময়ের ওষুধ, অ্যান্টি ভাইরাল ওষুধ বাহাত্তর ঘণ্টার মধ্যে শুরু করা উচিত। বেশি ব্যথা হলে নার্ভ-এর মধ্যে ইঞ্জেকশন দিতে হয়।
• খুব কম ক্ষেত্রে স্টেরয়েড দিতে হয়।
• ফোসকা ঠিক হওয়ার পরও অনেক সময় ওই জায়গাটিতে ব্যথা থেকে যায়। তখন অ্যান্টি ডিপ্রেশন ওষুধ শুরু করতে হয়।
• অ্যানেসথেটিক ক্রিম এ ক্ষেত্রে উপকারী।
• হারপিস ঠিক হয়ে গেলেও অনেক সময় ওই জায়গাটিতে ব্যথা থেকে যায়, অসাড়ও হতে পারে। ফলে খিদে ঘুমের অসুবিধাও দেখা দেয়। তবে যাঁদের বয়স ষাটের বেশি তাঁদের ক্ষেত্রেই এ সমস্যা বেশি দেখা যায়।
• এই অসুখে চোখের সমস্যা হলে চোখ খারাপও হয়ে যেতে পারে। যদি নাকের ডগায় কোনও ফোসকা বা ফুসকুড়ি দেখেন, তবে বুঝবেন এর পর সংক্রমণ চোখে হবে। তখনই চিকিৎসা শুরু করে দিতে হবে।
• ব্যাকটেরিয়ার সংক্রমণ রুখতে অ্যান্টিবায়োটিক খেতে হবে। |
টিপস |
• ব্যথা কমাতে হলে র্যাশের ওপর বরফ ঘষতে হবে। ঠান্ডা জলের সেঁকও এ ক্ষেত্রে আরামপ্রদ।
• ক্যালামাইন জাতীয় লোশন লাগাতে হবে।
• র্যাশ ঢেকে রাখতে হবে গজ, ব্যান্ডেজ দিয়ে।
• ঢিলেঢালা সুতির পোশাক পরতে হবে। |
কী ভাবে প্রতিরোধ সম্ভব |
• বয়স ষাটের বেশি হলে হারপিস-এর ভ্যাকসিন নিতে পারেন। ভ্যাকসিন নিলে পঞ্চাশ শতাংশ লোকের এই রোগ হবে না। রোগ হলেও ব্যথা, যন্ত্রণা, অস্বস্তি কম হবে। |
যোগাযোগ: ২৩৫৮-৮০১০, ৯৪৩৩০২৩৮৭৯
সাক্ষাৎকার: কস্তুরী মুখোপাধ্যায় ভারভাদা |
|