কাজের ফাঁকে হেলদোল
পেশা তো বিভিন্ন রকম। কেউ বছরভর ঘুরে বেড়ান, কেউ আবার সকাল থেকেই কম্পিউটার-এর সামনে। দীর্ঘক্ষণ কানে হেডফোন, হাতে মাউস বা কি বোর্ড নিয়ে চ্যাট করার দরকার হয়। অনেককে ভারী ব্যাগ বহন করতে হয়, ঝুঁকে কাজ করতে হয়। দিনের পর দিন বদ্ধ পরিবেশে, তীব্র আলোর সামনে, অতিরিক্ত গরমে কাজ করেন। পেশার তাগিদে রাত জাগাও স্বাভাবিক ঘটনা। লেখালেখি, ছবি আঁকা, সূচিশিল্প বা কারুকৃতির সঙ্গে যুক্ত মানুষদের বেশির ভাগ সময়ই ঘাড়, কাঁধ ও হাতের ওপর বেশি চাপ পড়ে। খাওয়াও বাদ পড়ে যায় অনেক সময়। প্রচুর কথা বলতে হয়, মাথা খাটাতে হয়, এমন কাজও তো কত রয়েছে। যাঁদের লক্ষ্যভিত্তিক কাজ তাঁদের প্রচুর টেনশন নিতে হয়। ফলে শরীরের ভালমন্দের দিকটা খেয়াল করে উঠতে পারেন না। ঠান্ডা ঘরে যাঁরা কাজ করেন আর যাঁরা খোলা আকাশের নীচে কাজ করেন, তাঁদের ফিটনেস সমস্যা এক হতে পারে না। তাই শরীরচর্চার পদ্ধতিও হবে ভিন্ন। কিন্তু পেশা যা-ই হোক, ফিট থাকতে হলে আপনাকে জিমে ভর্তি হতে হবেই এমন কোনও বাধ্যবাধকতা নেই। কিন্তু ফিট থাকার প্রায় সমস্ত উপকরণ যে এক মাত্র জিমেই মজুত।
ফিট থাকতে জিমে যে দিন ভর্তি হলেন সেই দিনই আগে থেকে ছাপানো ডায়েট বা এক্সারসাইজ চার্ট হাতে পেলে, বুঝতে হবে ভুল জিম বেছেছেন। বিজ্ঞানসম্মত শরীরচর্চায় রোজকার শারীরিক ও মানসিক ধকল মাথায় রেখে, কতটা ফিটনেস প্রয়োজন বুঝে, ব্যায়াম ও খাদ্যতালিকার রূপরেখা তৈরি করতে হয়। তাতে এক জনের সঙ্গে আর এক জনের মিল নাও থাকতে পারে। প্রয়োজন অনুসারে ব্যক্তিবিশেষে তারতম্য থাকলে তবেই ফিটনেস সাফল্য দেবে। ফিট তো রাখেই, কর্মদক্ষতাও বাড়ায়
আরগন (ergon) = ‘কাজ’, ‘নোমোস’ (nomos) বা ‘নোমোই’ (nomoi) = প্রাকৃতিক নিয়ম। অর্থাৎ, প্রাকৃতিক নিয়মে শরীরকে সুস্থ রেখে বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে কাজ করে যাওয়া, আপনার শরীরটা ভেতরে-বাইরে একদম ঠিকঠাক থাকবে আর কাজের পারফরমেন্সও দিন দিন বাড়বে এটাই আরগোনমিক ফিটনেস-এর মূল উদ্দেশ্য। ‘আরগোনমিক ফিটনেস’ হল বিজ্ঞানসম্মত শৃঙ্খলাবদ্ধতা, যা কাজের সময় সর্বদা শরীরকে ফিট রেখে আরও পারদর্শী করে তুলবে। আরগোনমিক-এর অর্থ শুধুমাত্র কম্পিউটার বা অফিসের টেবিল-চেয়ারের অবস্থান কিংবা নকশা বদল করে একটা সাপোর্ট সিস্টেম বাড়িয়ে দিয়ে কোমর, ঘাড়, কাঁধ বা চোখের ওপর চাপ কমানো নয়। কিংবা বসে কাজ করার সময় কনুই ও কবজির দেখভাল করা বা লেগ স্পেসকে বাড়িয়ে দেওয়াই নয়। অথবা কাজের ফাঁকে একঘেয়েমি কাটাতে মাঝেমধ্যে এক-দু’মিনিটের বিশ্রাম নেওয়ার উপদেশ দিয়ে এবং কাজের জায়গাকে আরও আলো-বাতাস যুক্ত করেই আরগোনমিক ফিটনেস তার দায়িত্ব শেষ করে না। কাজের সময় শরীরের প্রতিটা অঙ্গের উপযুক্ত অবস্থান ও স্বাচ্ছন্দ্যকে বজায় রাখার দিক নির্দেশ করা ছাড়াও মানুষের পেশার সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে শরীরচর্চা এবং খাদ্যাভ্যাসের ঠিক মূল্যায়নও আরগোনমিক ফিটনেস-এর আধুনিক দিক।
আপনার কার্ডিয়োভাসকুলার এক্সারসাইজ-এর পরিমাণ ঠিক করতে আপনার বয়সের সঙ্গে সঙ্গে সারা দিনের কায়িক পরিশ্রমের মোট মাত্রাটাকেও খেয়াল রাখতে হয়, না হলে সব সময়ই একটা অতিরিক্ত পরিশ্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, ঠিক সেই রকমই রোজ এক জনের কতটা পরিমাণ স্পাইনাল এক্সারসাইজ এবং পিলাটিস প্রয়োজন, কতটাই বা স্ট্রেচিং এবং ফ্রি-হ্যান্ড মোবিলিটি এক্সারসাইজ করতে হবে, দেহের পেশিগুলির জোর বাড়াতে কী ধরনের ওয়েট ট্রেনিং করা দরকার, শরীরকে বিশ্রাম দিতে, মন প্রশান্তিতে ভরে তুলতে, রিল্যাক্সারসাইজ, যোগ, প্রাণায়াম এবং মেডিটেশন চর্চার পরিমাণটাই বা কী হওয়া উচিত, সে সব সম্বন্ধে আরগোনমিক ফিটনেস নির্দেশ দেয়, পেশার তাগিদে বিশেষ কোনও শরীরের অংশকে যদি একটু বেশি যত্ন দেওয়ার প্রয়োজন অনুভব হয়, আরগোনমিক ফিটনেস-এ তারও বিধান রয়েছে। আরগোনমিক ফিটনেস-এ ব্যায়ামের দুটো ধারাকেই ব্যবহার করা হয়
১) গ্রুপ ফিটনেস একই ধরনের কাজ এবং একই ধরনের শারীরিক সমস্যার সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষদের একত্রিত করে শরীরচর্চার অভ্যেস তৈরি করে।
২) পারসোনাল ট্রেনিং এটা বেশি কার্যকরী। শরীরচর্চা শুরুর আগে মুখোমুখি সাক্ষাৎকারের মাধ্যমে ব্যক্তিগত সমস্যা ও ফিটনেস-এর চাহিদা নিয়ে ট্রেনার-এর সঙ্গে আলোচনা করাটা বাধ্যতামূলক। পরবর্তী সময় একটা নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করে ট্রেনার-এর তত্ত্বাবধানে সেই অনুযায়ী ব্যায়াম করে যেতে হয়।
আরগোনমিক ফিটনেস ডায়েট প্রসঙ্গে বলে, দৈহিক ও মানসিক পরিশ্রমের ওপর ভিত্তি করেই খাবার খেতে হবে। সারা দিন যাঁরা ঠান্ডা ঘরে বসে কাজ করে, বিন্দুমাত্র শরীরকে নাড়াতে হয় না, তাঁদের সঙ্গে কায়িক পরিশ্রম করা মানুষের খাদ্যতালিকা কখনও এক হবে না। আজকাল অদ্ভুত ভাবে অনেকেই তাড়াতাড়ি রোগা হওয়ার তাগিদে কিছু না বুঝেই প্রাণশক্তি-বর্ধক কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবারগুলি, যেমন ভাত এবং আটার রুটি খাওয়া চুপচাপ ছেড়ে দিচ্ছেন।
কিন্তু মানুষের শরীরের পুষ্টির জন্য গুরুত্বপূর্ণ পলিস্যাকারাইড-এর মধ্যে একটা হল স্টার্চ। তা ছাড়া ভাত ও আটার রুটির মধ্যে গ্লাইকোজেন, সেলুলোজ এবং ডায়েটারি ফাইবার থাকে। স্টার্চ তো অনেক ফলেও পাওয়া যায়, যা ফলের মধ্যে সুক্রোজ, গ্লুকোজ এবং ফ্রুকটোজ-এর ব্যাপ্তিতে সাহায্য করে। ভাত, কিংবা আটার রুটির মতো সহজলভ্য খাবারগুলিকে মোটা হয়ে যাওয়ার ভয়ে যদি একেবারেই খাদ্যতালিকা থেকে বাদ দিয়ে দেন, তা হলে প্রাণশক্তির মাত্রায় টান পড়তে বাধ্য। হঠাৎ করে এক ঝটকায় অনেকটা রক্তচাপ কমে গিয়ে মাথা ঘুরে বিপত্তি আসতে পারে। এত দিনের চিরাচরিত খাবারগুলিকে হঠাৎ করে ব্রাত্য না করে, দেহের মধ্যে জমে থাকা অতিরিক্ত ক্যালরিকে সারা দিনে কতটা ব্যয় করছেন, শরীরচর্চাতেই বা কতটা ব্যয় হচ্ছে, এর একটা হিসেবনিকেশের পাশাপাশি রোজকার ডায়েটে তার কতটা পূরণ হল, সেই ধারণাটা পরিষ্কার করুন। মনে রাখবেন, দেহে বাড়তি ওজনের সমস্যা থাকলে শুধু ভাত-রুটি কেন, যে কোনও ক্যালরি যুক্ত খাবারেই একটা লাগাম টানতে হয়। কিন্তু তা কখনও যেন প্রয়োজনীয় ক্যালরির ন্যূনতম মাত্রার নীচে না যায়। তা হলে বিপদ কিন্তু অনিবার্য। কার্বোহাইড্রেটকে, বিশেষ করে ভাতের মতো কমপ্লেক্স কার্বোহাইড্রেট এবং ন্যাচারাল প্রোটিন ও ফাইবার সমৃদ্ধ আটার রুটিকে সম্পূর্ণ বাদ দিলে দেহের ভাঙন কিন্তু আসবেই। তা ছাড়া ফিট মানেই তো শুকনো, রুগ্ন কিংবা অসুস্থ দেখতে লাগা নয়। আরগোনমিক ফিটনেস-এ ডায়েট নিয়ে শৃঙ্খলাবদ্ধতা অবশ্যই রয়েছে। ধূমপান ও মদ্যপানের ওপরেও বিধিনিষেধ রয়েছে। লক্ষ রয়েছে, অতি সংযম, অতি সতর্কতার ঠেলায় মনটা যেন খিটখিটে না হয়ে যায়। এই ফিটনেস প্রক্রিয়ার পরামর্শ, উপযুক্ত গুণমান ও ক্যালরির মাত্রা বজায় থাকে, এমন ডায়েট নিতে হবে, যাতে কখনও পেশাগত জীবনের ওপর কোনও নেতিবাচক প্রভাব না পড়ে এবং সর্বদা উজ্জীবিত ও প্রাণচঞ্চল থাকা যায়।

যোগাযোগ: ৯৮৩৬০১৬২১৫



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.