|
|
|
|
|
ল্যাপটপে তারা দেখবেন না |
বাড়ির কাজ, অফিসের, হ্যানোত্যানো। সব ঘাড়ের ওপর।
আর সবেতেই একটা না একটা ইলেকট্রনিক গেজেট মজুত। লাভ বটে। আর ক্ষতি? |
আমরা তো মাঝেমধ্যেই পুরনো দিনগুলোর কথা মনে করে ভারী স্মৃতিকাতর হয়ে পড়ি। আহা, কেমন সুন্দর ছিল দিনগুলো! কী ফুরফুরে, তরতরে থাকত মনমেজাজ! চিন্তা নেই, টেনশন নেই, ফলে স্ট্রেসও নেই। কিন্তু এই ‘নেই’ তালিকায় যে আরও কিছু জিনিস ছিল! মোবাইল, ইন্টারনেট পরিষেবা, সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং এই সব যে এখনকার মতো হাতের মুঠোয় পাওয়া যেত না! ভাবতে গেলেই দেখবেন স্মৃতির সরণি বেয়ে চলতে চলতে আচমকা দাঁড়িয়ে পড়বেন। মোবাইল নেই? তার মানে তো দিবারাত্র গুজুর গুজুর বন্ধ। ইন্টারনেট নেই? তার মানে তো বিশ্বের সাম্প্রতিকতম সব খবর আমাদের হাতের মুঠো থেকে ফস্কে গেল। সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং নেই? তার মানে তো দূরে থাকা বন্ধুদের সঙ্গে সম্পর্কের এক্কেবারে ইতি, চ্যাটবক্স খুলে নতুন নতুন বন্ধুদের সঙ্গে অ্যাডভেঞ্চার-এরও ইতি। ধুস, ও আবার একটা জীবন নাকি? কিন্তু, কাজের বা ব্যক্তিগত জগতের টেনশন কাটাতে এই যে আমরা টিভি, মোবাইল, কম্পিউটারের সাহায্য নিচ্ছি প্রতি দিন, প্রতি ঘণ্টায়, এটা কিন্তু আমাদের স্ট্রেস কমানোর বদলে আরও বাড়িয়ে দিচ্ছে। প্রযুক্তি থেকে অনেক সময় আমাদের অগোচরেই আমরা যে স্ট্রেসের শিকার হই, তাকেই এখন ডিজিটাল স্ট্রেস বলা হচ্ছে।
|
মগজ জবাব দেবে |
প্রযুক্তির সাহায্যে তো একই সঙ্গে অনেক কাজ করা যায়। ল্যাপটপে নেট সার্ফ করতে করতে আইপডে গান শোনা যায়, মাঝেমধ্যে টিভি-তে ক্রিকেটের স্কোরটাও দেখে নেওয়া যায়, দু’মিনিটের ব্রেক নিয়ে ওয়াশিং মেশিনে রাখা জামাকাপড়গুলো ধুয়েও ফেলা যায়। মাল্টিটাস্কিং, তাই না? কিন্তু ব্রেন তো আমাদের একটাই। এক সঙ্গে দুটোর বেশির কাজ তো সে করতে পারবে না। কমবে তার গ্রহণ ক্ষমতা, কাজে বাড়বে ভুল-ভ্রান্তি। ঠিক একই ভাবে, এই যে আমরা সারা দিন কম্পিউটার বা মোবাইলে মুখ গুঁজে থাকছি, তাতে আমাদের মগজে জমা হচ্ছে তথ্যের পর তথ্য। একটা সময় কিন্তু মগজ তার কাজে জবাব দেবে। তাতে কী হবে? |
|
বারে বারে ছিঁড়ে যাবে মনোযোগ, নষ্ট হবে ফোকাস। নির্দিষ্ট লক্ষ্য স্থির করা বা গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার সময় মস্তিষ্কের সঙ্গে মনের যে বোঝাপড়া চলতে থাকে, সেটাও বন্ধ হয়ে যাবে। আবার স্মৃতির ভাঁড়ার নেড়েচেড়ে প্রয়োজনীয় তথ্য বের করে তাকে কাজে লাগানোও যাবে না। এর মানে কি যাবতীয় আধুনিক গ্যাজেট থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকব? কখনও না। ছোটখাটো সমাধান হাতের কাছেই আছে। দরকার, সেগুলো মেনে চলা। একটানা কাজ না করে বিরতি নেওয়ার কথা তো এখন মোটামুটি সবাই জেনে গিয়েছি। আরও কিছু চটজলদি সমাধানের ওপর এক বার চোখ বুলিয়ে নেওয়া যাক।
|
বাড়ি ফিরেও অফিস? |
সারা ক্ষণ কাজে লেগে থাকার প্রবণতা প্রযুক্তি-সংক্রান্ত স্ট্রেসের অন্যতম কারণ। অফিস থেকে ফিরে আসার পরেও কি আপনি ই-মেল চেক করেন, বা অফিসের ফোন ধরেন? তা হলে নিজের জন্য সময়টুকু বের করবেন কী করে? বরং কলিগদের জানিয়ে দিন, রাত ন’টা বা সাড়ে ন’টার পর আপনাকে আর পাওয়া যাবে না। ভাল করে স্নান করুন, যাতে শরীর, মন দুই-ই চাঙ্গা হয়ে ওঠে। তার পর পছন্দের বই পড়তে পারেন, হালকা এক্সারসাইজ করতে পারেন, পরিবারের সঙ্গে জমিয়ে আড্ডাও দিতে পারেন। এতে সারা দিনে মনের ওপর যে ধকল পড়েছে, তা কমে যাবে। যদি কাজের পরেও ফোনে দরকারি মেসেজ আসার সম্ভাবনা থাকে, তা হলে ঘন ঘন নয়, মাঝেমধ্যে দেখে নিতে পারেন। তবে একটা সময়ের পর, বিশেষ করে ঘুমের সময়টুকু, মোবাইল অফ করে দেওয়াই ভাল।
|
মুখোমুখি কথা বলুন |
আমাদের অবস্থা কতটা করুণ জানেন? পাশের বাড়ির বন্ধুকে ডাকতেও আমরা টেক্সট পাঠাই বা চ্যাটবক্স খুলে আড্ডা দিই। একটা প্রশ্নের পর হাঁ করে অপেক্ষা করো, কখন অন্য পক্ষ উত্তর দেবেন। অযথা উদ্বেগ। সামনাসামনি কথা বললে এমনটা খুব কম হয়। অন্যের ভাবভঙ্গি, প্রতিক্রিয়া দেখে কিছুটা উত্তর আন্দাজ করে নেওয়া যায়। ভুল বোঝারও সম্ভাবনা কমে। যেমন অনেক দিন যোগাযোগ নেই, এমন কোনও বন্ধুকে ই মেলে, বা মেসেজ করে আপনি নৈশভোজে ডাকলেন। জবাব এল নেতিবাচক। ব্যস, অপমানিত আপনি ঠিকই করে ফেললেন, এ জীবনে বন্ধুবিচ্ছেদ ছাড়া গতি নেই। প্রযুক্তি তো আর মেসেজের সঙ্গে তার অভিমান বা দুষ্টুমি ভরা মুখের ছবি পাঠাবে না! এই সব আনতাবড়ি ঝামেলা থেকে বাঁচতে যতটা পারেন সামনাসামনি কথা বলুন। সম্পর্কের টানাপড়েন-সংক্রান্ত চাপ থেকে অনেকটাই রেহাই পাবেন।
বাছাই করা শিখতে হবে
সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং সাইটে আসা সমস্ত বন্ধু-প্রস্তাবই কি আপনি গ্রহণ করে নেন? তা হলে নিশ্চয়ই আপনার বন্ধু-তালিকায় এমন অনেক নাম আছে, যাঁদের সঙ্গে আপনার সম্পর্ক তেমন মধুর নয়। মাঝে মাঝেই তাঁদের কথাবার্তা আপনার মুড বিগড়ে দেয়। এ ক্ষেত্রে ঝাড়াইবাছাই খুব জরুরি। কেউ অভিযোগ জানালে বিনীত ভাবে বলুন, এ ধরনের প্রযুক্তিতে আপনি খুব একটা অভ্যস্ত নন। ব্যস, মিটে গেল।
|
সব জেনে কাজ নেই |
বাজারে প্রায় প্রতি দিনই কিছু না কিছু নতুন আসছে, মাঝেমধ্যেই নতুন নতুন সোশ্যাল মিডিয়া সাইট তৈরি হচ্ছে। আচ্ছা, এদের প্রত্যেকটা সম্পর্কে ওয়াকিবহাল থাকাটা কি খুব জরুরি? লেটেস্ট মোবাইল ফোন কিনে নিয়ে এলেন। কিন্তু তার অ্যাপ্লিকেশন বুঝতে গিয়ে আপনার কাজকর্ম মাথায় উঠল। দরকার আছে কি?
তার চেয়ে এমন কিছু কিনলেই হয়, যা আপনার প্রয়োজনটা মেটাবে, তার বাইরে কিছু নয়।
কাজের প্রয়োজনে নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করতে হলে আগে থেকেই তার সম্পর্কে জেনে নিন, বা যে ব্যবহার করছে, তার কাছ থেকে দেখে নিন। দুম
করে কিনে ফেলে নিজের সুস্থ জীবন ব্যস্ত করবেন না।
|
ডিজিটাল ডিটক্স |
যন্ত্র আমাদের এমনই যান্ত্রিক করে তুলেছে যে, একে বাদ দিয়ে আনন্দ খুঁজে নেওয়ার কথা আমরা ভুলেই গিয়েছি। যখন এত সব কিছু ছিল না, তখন কি সবাই রামগরুড়ের ছানা হয়ে বেজার মুখে বসে থাকত?
যতটা পারুন, যন্ত্র থেকে দূরে থাকুন। ল্যাপটপের স্ক্রিনসেভার-এর পর্দায় নয়, ছাদে গিয়ে তারা দেখুন। ঠান্ডা ঘরে বসে চ্যাট না করে বাগানে বা পার্কে কিছুক্ষণ সময় কাটান। যাঁর সঙ্গ পেতে খুব ইচ্ছে করছে, তাঁর বাড়ি চলে যান, কিছু ক্ষণ মন খুলে গল্প করুন। যাঁর সঙ্গে কিলোমিটারের ব্যবধান অনেকটা, তাঁকে সময় বার করে একটা ফোন করুন, ই-মেল বা টেক্সট পাঠিয়ে কর্তব্য শেষ করবেন না। ফের যখন যন্ত্রদুনিয়ায় ফিরে আসবেন, তখন একটা জিনিস অন্তত বুঝবেন, এই যে এত ক্ষণ যন্ত্র ছাড়া সময় কাটালেন, তাতে আকাশও ভেঙে পড়ল না, পৃথিবীও ঘোরা বন্ধ করে দিল না। তা হলে কেন মিছিমিছি যন্ত্রের চোখ দিয়ে দুনিয়া দেখবেন বলুন তো! |
|
|
|
|
|