রামবাবু সাহানি (৪০)-র হত্যাকে ঘিরে গণ্ডগোলের সময় পুলিশের উপরে হামলার অভিযোগে ২ জনকে গ্রেফতার করল পুলিশ। বৃহস্পতিবার রাতে সন্তোষীনগর এলাকা ওই ২ জনকে ধরে পুলিশ। এ দিকে, পুলিশের বিরুদ্ধে বিনা প্ররোচনায় বাসিন্দাদের মারধর করার অভিযোগ এনেছেন প্রাক্তন মন্ত্রী তথা সিপিএমের দার্জিলিং জেলা সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য অশোক ভট্টাচার্য। এ দিন ওই এলাকার ফরওয়ার্ড ব্লক কাউন্সিলর অমরনাথ সিংহকে ফোন করে এক ব্যক্তি গুলি করে খুন করার হুমকি দিয়েছে বলেও অভিযোগ উঠেছে। শিলিগুড়ির ডিসি (সদর) ও জি পাল বলেন, “পুলিশের উপরে হামলায় ২ জনকে ধরা হয়েছে। রামবাবুকে খুনের মামলার অভিযুক্তকে কয়েকদিন আগেই গ্রেফতার করেছি। তদন্ত হচ্ছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা হবে।” পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, গত ২৮ জুলাই তুলসিনগরে রামবাবুকে বেধড়ক মারধর করে উদয় শা। বুধবার গভীর রাতে উত্তরবঙ্গ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে মৃত্যু হয় তাঁর। বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই তা নিয়ে তেতে ছিল সন্তোষীনগর। একাংশ বাসিন্দা নিহতের দেহ নিয়ে তাঁর পরিবারের ক্ষতিপূরণের দাবিতে সকাল থেকে উদয় শা’র বাড়ি ঘেরাও করে রাখে। পুলিশ দেহ তুলতে গেলেই গণ্ডগোল শুরু হয়। সেই সময় অল্প কয়েকজন পুলিশ কর্মী ছিল সেখানে। পুলিশ-জনতার খন্ডযুদ্ধে ৩ জন পুলিশ কর্মী এবং বেশ কয়েকজন বাসিন্দা জখম হন। পুলিশ এক রাউন্ড রবার বুলেট এবং কয়েক রাউন্ড কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে। পুলিশের বিরুদ্ধে শূন্যে গুলি চালানোর অভিযোগ রয়েছে। এ দিন অশোকবাবু এলাকায় গিয়ে নিহতের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে দেখা করেন। তিনি অভিযোগ করেন, সকাল থেকেই এলাকায় উত্তেজনা ছিল। অথচ পুলিশ বিষয়টিকে গুরুত্ব দেয়নি। কয়েকশ মহিলা ক্ষতিপূরণের দাবিতে বিক্ষোভ দেখাচ্ছিলেন। কোনও মহিলা পুলিশ কর্মী ছাড়াই তাদের মারধর করা হয় বলে অভিযোগ। তাতে সিপিএমের মহিলা সমিতির সন্তোষীনগর এলাকার ওয়ার্ড কমিটির সম্পাদক চন্দ্রকলা সাহানি সহ বেশ কয়েকজন জখম হন বলে অভিযোগ। |
তিনি রামবাবুর স্ত্রী গীতা দেবীকে ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়ার কথা ঘোষণা করেন। কাউন্সিলর অমরনাথবাবুও ১০ হাজার টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে বলে জানান। অশোকবাবু বলেন, “বাসিন্দাদের অনেককে মারধর করা হয়েছে। অনেকের শরীরে কালশিটে পড়ে গিয়েছে। সব থেকে আশ্চর্যের ব্যাপার মহিলাদের মারধর করা হল, অথচ সেখানে কোনও মহিলা পুলিশ কর্মী ছিলেন না। আমরা ঘটনার উপযুক্ত তদন্ত দাবি করছি। রামবাবু খুনের মামলার অভিযুক্তের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি করেছি। এ ছাড়া ওই পরিবারকে সরকারি ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।” তাঁর সঙ্গে ছিলেন সিপিএমের দার্জিলিং জেলার ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক জীবেশ সরকার। তিনি জানান, ঘটনার প্রতিবাদে আগামী রবিবার শিলিগুড়িতে মিছিল করবে বামফ্রন্ট। তিনি বলেন, “দুষ্কৃতীরা সর্বত্র সক্রিয়। এটা কিছুতেই মেনে নেওয়া হবে না। লাগাতার আন্দোলন হবে।” ওই এলাকার কাউন্সিলর অমরনাথবাবু বলেন, “রামবাবু খুনের ঘটনায় অভিযুক্তদের একটি দল রয়েছে। তারা এলাকায় নানা দুষ্কর্ম করে, প্রতিবাদ করাতে আমাকে এ দিন সকালে ফোনে গুলি করে খুন করার হুমকি দেওয়া হয়। পুলিশকে জানিয়েছি। ফোন নম্বরও জানিয়েছি।’’ এ দিন সঞ্জয় টিব্রুয়ালের নেতৃত্বে বামফ্রন্টের তরফে শিলিগুড়ির অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার এ রবীন্দ্রনাথকে স্মারকলিপি দেওয়া হয়। রামবাবুর স্ত্রী গীতা দেবী বলেন, “তিনটি ছোট ছেলে নিয়ে সংসার। বাড়িতে মা, বাবা রয়েছে। রাজমিস্ত্রির কাজ করে স্বামী সংসার চালাতেন। এখন কী করে সংসার চলবে জানি না।” |