হাসপাতাল থেকে পালিয়ে গাছে চড়ে বসলেন মহিলা
হাসপাতালের জানলা গলে বেরিয়ে প্রথমে তিনি গিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন দোতলার কার্নিসে। জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতাল লাগোয়া এলাকার বাসিন্দারা এক মধ্যবয়সী মহিলাকে ওই অবস্থায় দেখতে পেয়ে চমকে ওঠেন। তাঁরা কর্তৃপক্ষের কাছে খবরও পাঠান। কিন্তু কোনও ব্যবস্থা নেওয়ার আগেই ওই মহিলা কার্নিস থেকে সোজা ঝাঁপ দেন নীচে। বালির স্তূপের উপরে পড়ায় বড়সর চোট অবশ্য লাগেনি। ঝটপট উঠেও পড়েন। তারপরে এক ছুটে হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে পাশে কেন্দ্রীয় সংশোধনাগারের সীমানা প্রাচীরের কাছে পৌঁছে যান। সেই পাঁচিল বেয়ে তরতরিয়ে উঠে বসেন একটি কাঁঠাল গাছের মগডালে। শুক্রবার দুপুর তখন প্রায় আড়াইটে।
তত ক্ষণে রীতিমতো হইচই শুরু হয়ে গিয়েছে। প্রথমে এলাকার লোকজনই গাছে উঠে তাঁকে নামানোর চেষ্টা করেন। কিন্তু অন্য কেউ গাছে উঠলে উপর থেকে লাফ দেবেন বলে হুমকি দিতে থাকেন ওই মহিলা। দমকল কর্মীরা আসার পরে তাঁরা মই লাগিয়ে গাছে উঠতে গেলে আত্মহত্যার হুমকি দিতে থাকেন তিনি। ঘাবড়ে গিয়ে দমকল কর্মীরা মই সরিয়ে নেন। তত ক্ষণে চলে এসেছেন ওই মহিলার স্বামী আনন্দ দাস এবং মা শান্তি রায়। তাঁদের অনুনয় বিনয়েও কোনও ফল হয়নি। বরং বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করার পরে দমকল কর্মীরা ফের মই লাগিয়ে গাছে ওঠার চেষ্টা করলে এ বার মগডালে উঠে বসেন ওই মহিলা। গাছ থেকেই তিনি চিৎকার করতে থাকেন, ‘পুলিশ আমাকে গুলি করতে পারে। তাই গাছ থেকে নামব না।’ বাড়ির লোকজনদেরও তিনি চলে যেতে বলেন। প্রায় দু’ঘণ্টা অপেক্ষা করেন দমকল কর্মীরা। গাছের ডালে কখনও দু’হাত ঝুলিয়ে বসে, কখনও পা ছুড়তে ছুড়তে এক সময় ওই মহিলাও ক্লান্ত হয়ে পড়েন। শেষ পর্যন্ত বিকেল সাড়ে পাঁচটা নাগাদ দমকল কর্মীরা গাছের দু’দিকে মই লাগিয়ে উঠে প্রায় তাঁকে নামিয়ে আনেন।
হাসপাতাল সূত্রে খবর, বৃহস্পতিবার মাথার যন্ত্রণার কারণে ক্রান্তির বাসিন্দা ওই মহিলাকে হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। সে দিন রাতেই তাঁকে হাসপাতালের মানসিক বিভাগে পাঠানো হয়। এই দিন দুপুর দেড়টা নাগাদ তিনি হাসপাতালের দোতলায় মহিলা বিভাগের শৌচাগারের জানলা বেয়ে বেরিয়ে পড়েন। তাঁর স্বামী পেশায় ভ্যানচালক আনন্দবাবু বলেন, “বেশ কিছু দিন ধরেই আমার স্ত্রী খামোকা ভয় পেতে শুরু করে। মাঝে মধ্যেই মাথায় ব্যথার কথা বলছিল। সে কারণেই হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। সেখান থেকে পালিয়ে গিয়ে এত কাণ্ড ঘটিয়ে বসল।” মহিলাকে জলপাইগুড়ি সদর হাসপাতালেই ফের ভর্তি করানো হয়েছে।
কিন্তু এই ঘটনার পরে হাসপাতালে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। হাসপাতালের কর্তব্যরত নার্সরা জানিয়েছেন, চতুর্থ শ্রেণির কর্মীরাই নজরদারির দায়িত্বে থাকেন। হাসপাতালের সুপার ব্রজেশ্বর মজুমদার বলেন, “নজরদারি যে একেবারে হয় না তা নয়, তবু এমন ধরনের ঘটনাও ঘটে। প্রতি ওয়ার্ডে ৫ জন করে চতুর্থ শ্রেণি কর্মী প্রয়োজন। কিন্তু আছেন দু’জন করে। নজরদারির ব্যাঘাত কখনও ঘটে যায় স্বাভাবিক ভাবেই।” হাসপাতাল সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬টি ওয়ার্ডে নজরদারির জন্য ৮০ জনের প্রয়োজন হলেও মাত্র ৪০-৪৫ জন কর্মীকে দিয়ে কাজ চালাতে হয়। একটি স্বেচ্ছাসেবী সংস্থার কর্মী সুব্রত সরকার বলেন, “সরকারি হাসপাতালে নজরদারি যে নেই, এই ঘটনাই তার প্রমাণ। কর্তৃপক্ষকে সর্তক হতে হবে।”



First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.