শ্রাবণ পেরিয়ে ভাদ্র দোরগোড়ায়। তবু বৃষ্টির ঘাটতি মেটার কোনও লক্ষণই নেই।
দক্ষিণবঙ্গে বর্ষা এ বার জুন থেকেই চূড়ান্ত কৃপণতা দেখিয়ে চলেছে। জুনের শেষে বৃষ্টির ঘাটতি ছিল ৩০ শতাংশ। পুরো জুলাই এবং অগস্টের ১০ দিন কেটে যাওয়ার পরে দেখা গেল, সেই ঘাটতি কমেছে মাত্র ছয় শতাংশ। রাজ্যের কৃষি দফতর দক্ষিণবঙ্গে বর্ষণের ২৪ শতাংশ ঘাটতি নিয়ে তেমন উদ্বিগ্ন নয়। চার কৃষিপ্রধান জেলায় অনাবৃষ্টির পরিস্থিতিটাই তাদের মূল চিন্তা। ওই চার জেলা হল নদিয়া, দক্ষিণ ও ২৪ পরগনা এবং মুর্শিদাবাদ।
অগভীর নলকূপ বসিয়ে জুলাইয়ে আমন ধানের বীজতলা তৈরি করেছেন ওই চার জেলার কৃষকেরা। কিন্তু মাঠে ধান রোয়ার জন্য যে-পরিমাণ বৃষ্টি দরকার, তা না-হওয়ায় সমস্যা দেখা দিয়েছে বলে কৃষি দফতর সূত্রের খবর। ওই চার জেলায় কী ধরনের চাষ করা যায়, সেই ব্যাপারে কৃষকদের সঙ্গে জেলা ও ব্লক স্তরের কৃষি আধিকারিকেরা বৈঠক করবেন বলে কৃষি দফতর সূত্রের খবর। তবে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে কৃষি দফতর আরও কিছু দিন অপেক্ষা করতে চায়। কারণ অনাবৃষ্টির কবলে পড়া চার জেলায় শীঘ্রই ভারী বর্ষণের সম্ভাবনা আছে বলে আবহাওয়া দফতরের কাছ থেকে ইঙ্গিত পেয়েছে তারা। |
কৃপণ বর্ষণ |
জেলা |
কম |
নদিয়া |
৪২% |
দক্ষিণ ২৪ পরগনা |
৪১% |
কলকাতা |
৪০% |
মুর্শিদাবাদ |
৩৪% |
উত্তর ২৪ পরগনা |
৩১% |
দক্ষিণবঙ্গ (সামগ্রিক) |
২৪% |
|
কী বলছে আবহাওয়া দফতর?
বঙ্গোপসাগরে একটি শক্তিশালী ঘূর্ণাবর্ত তৈরি হয়েছে বলে আলিপুর আবহাওয়া দফতর শুক্রবার জানিয়েছে। ঘূর্ণাবর্তটি আজ, শনিবার গাঙ্গেয় পশ্চিমবঙ্গের স্থলভূমিতে ঢুকে পড়বে। তার জেরে কাল, রবিবার থেকে উত্তর ও দক্ষিণ ২৪ পরগনা, নদিয়া এবং মুর্শিদাবাদ ভাল বৃষ্টি পাবে বলে আবহবিদদের আশা। আলিপুর আবহাওয়া দফতরের অধিকর্তা গোকুলচন্দ্র দেবনাথ বলেন, “আগামী ১০ দিন ওই চার জেলার সঙ্গে কলকাতাতেও ভাল বৃষ্টি হবে। কিন্তু সেই বৃষ্টিতে ঘাটতি পুরোপুরি মিটবে না। কিছুটা কমবে মাত্র।”
বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্তটি শক্তি বাড়িয়ে নিম্নচাপের চেহারা নিলে অতি ভারী বৃষ্টি হয় কি না, সেই দিকেও নজর আছে আবহবিদদের। কারণ, তাতে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টির আশঙ্কা রয়েছে। চলতি মরসুমের প্রথম থেকে দক্ষিণবঙ্গে কম বৃষ্টি হলেও উত্তরবঙ্গে এ বার মৌসুমি বায়ু এতটাই শক্তিশালী ছিল যে, সেখানে ইতিমধ্যে দু’দফায় বন্যা হয়ে গিয়েছে। তাতে ফসলের ক্ষতি হয়েছে ব্যাপক। এই অবস্থায় বঙ্গোপসাগরের ঘূর্ণাবর্তটি শেষ পর্যন্ত কী চেহারা নেয়, সে-দিকে সতর্ক দৃষ্টি রয়েছে কৃষি দফতরের কর্তাদের। দক্ষিণবঙ্গে সামগ্রিক ভাবে কম বৃষ্টি হলেও বর্ধমান অগস্টের প্রথম সপ্তাহেই ঘাটতি পূরণ করে ফেলেছে বলে জানাচ্ছে আবহাওয়া দফতর। হাওড়া, হুগলি এবং পূর্ব মেদিনীপুরেও ঘাটতি কমে স্বাভাবিকের কাছাকাছি চলে এসেছে। ওই সব জেলায় চাষের কোনও সমস্যা হবে না বলেই কৃষি দফতর জানিয়েছে। এখন নতুন ঘূর্ণাবর্তের প্রভাবে যদি কৃষিপ্রধান চার জেলায় ভাল বৃষ্টি হয়, চিন্তা কিছুটা কমবে। |