শ্রমিক সংগঠনের কার্যকলাপে আরও ‘শৃঙ্খলা’ আনতে নতুন জাতীয় কমিটি গড়া হল আইএনটিটিইউসি-তে। তৃণমূলের শ্রমিক সংগঠনের আওতায় কোনও নতুন ইউনিয়ন অনুমোদন চাইলে তা বিবেচনার ভার ওই জাতীয় কমিটিকেই দেওয়া হয়েছে। কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে প্রাক্তন নকশাল নেতা এবং সিঙ্গুর আন্দোলনে তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের সহযোদ্ধা প্রদীপ বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সর্বভারতীয় সভাপতি হয়েছেন দীর্ঘ দিনের ট্রেড ইউনিয়নের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন নেতা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়। এই সিদ্ধান্তকে আইএনটিটিইউসি-র রাজ্য সভানেত্রী দোলা সেনের ‘ক্ষমতা খর্ব’ হিসাবেই ব্যাখ্যা করা হচ্ছে তৃণমূলের একাংশের তরফে।
তৃণমূল রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পরে তাদের শ্রমিক সংগঠনের বিরুদ্ধে সিন্ডিকেট-রাজ, তোলাবাজি-সহ নানা দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে নানা প্রান্ত থেকে। আইএনটিটিইউসি বা তাদের অনুমোদিত ইউনিয়নের চাপে নতুন প্রকল্পের কাজ বাধা পাচ্ছে, স্থানীয় স্তরে কারখানা চালু রাখতে মালিক পক্ষ সমস্যায় পড়ছে, এমন নানা অভিযোগ নিয়েই হইচই হয়েছে। তৃণমূল নেত্রী তথা মুখ্যমন্ত্রী মমতা অবশ্য বারে বারেই ওই ধরনের কার্যকলাপ থেকে দলের সর্ব স্তরের নেতা-কর্মীদের দূরে থাকতে নির্দেশ দিয়েছেন। সেই প্রেক্ষিতেই নতুন কমিটি গড়ে ইউনিয়ন অনুমোদনের বিষয়টি ‘তাৎপর্যপূর্ণ’ বলে মনে করছেন তৃণমূল নেতৃত্বের একাংশ। শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী দোলাদেবী অবশ্য জানিয়েছেন, এমন কোনও সিদ্ধান্তের কথা তাঁর জানা নেই। আবার আইএনটিটিইউসি-রই একটি সূত্রের বক্তব্য, এই সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত হয়েছে বেশ কিছু দিন আগেই। এবং রাজ্য সভানেত্রী হওয়ার সুবাদে দোলাদেবীও ওই জাতীয় কমিটির সদস্য। বিষয়টি এখন প্রকাশ্যে আসছে।
প্রদীপবাবুর বক্তব্য, জাতীয় স্তরের যে কোনও শ্রমিক সংগঠনে যে পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়, আইএনটিটিইউসি-র ক্ষেত্রেও তা-ই করা হচ্ছে। তিনি শুক্রবার বলেন, “তৃণমূল নেত্রী চেয়েছিলেন শ্রমিক সংগঠনকে শক্তিশালী করে গড়তে। সেই জন্যই সক্রিয় ব্যক্তিদের নিয়ে জাতীয় কমিটি করা হয়েছে। তারা সংগঠনের গঠনতন্ত্রও তৈরি করেছে। সেই গঠনতন্ত্র অনুযায়ী, রাজ্যের কোনও নতুন ইউনিয়নের অনুমাদনের জন্য রাজ্য কমিটি সুপারিশ করতে পারে। সেই সুপারিশ বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে জাতীয় কমিটি।” প্রতিষ্ঠিত কোনও শ্রমিক সংগঠনে কোনও ইউনিয়ন নতুন অনুমোদন চাইলে বা কোনও ইউনিটের অনুমোদন বাতিল করতে হলে রাজ্য কমিটি এক তরফা সিদ্ধান্ত নিতে পারে না বলেই তৃণমূলের শ্রমিক নেতৃত্বের একাংশের বক্তব্য। তৃণমূল সূত্রের মতে, প্রদীপবাবুকে জাতীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক করার পাশাপাশি সর্বভারতীয় সভাপতির ভার সুব্রতবাবুকে দেওয়া হয়েছে, যাতে তাঁর অভিজ্ঞতা কাজে লাগানো যায়।
দোলাদেবী অবশ্য এ দিন বলেন, “এমন কোনও সিদ্ধান্তের কথা আমার জানা নেই। নেতৃত্বের কেউ এই রকম কিছু জানাননি। এই রকম কোনও বৈঠক হয়েছে বলেও জানি না।” তাঁর আরও বক্তব্য, এমন কোনও সিদ্ধান্ত হলে শ্রমিক সংগঠনের রাজ্য সভানেত্রী হিসাবে তিনি নিশ্চয়ই জানতে পারতেন! তবে তৃণমূলের এক প্রথম সারির নেতার ব্যাখ্যা, “আইএনটিটিইউসি-র মধ্যে প্রকৃত পক্ষে শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়ের সঙ্গে দোলা সেনের গোষ্ঠীর লড়াই চলছিল। যার প্রভাব পড়ছিল সংগঠনের কাজকর্মে। এ বার শ্রমিক সংগঠনের কাজ আরও সুসংহত করার লক্ষ্যে পদক্ষেপ করা হয়েছে।” প্রসঙ্গত, এক সময় আইএনটিটিইউসি-র সর্বভারতীয় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল শোভনদেববাবু ও প্রদীপবাবুকে। এখন প্রদীপবাবুর সঙ্গে সুব্রতবাবুকে এনে শ্রমিক সংগঠনের দুই বিবদমান গোষ্ঠীকেই ‘বার্তা’ দেওয়া হল বলে তৃণমূলের একটি সূত্রের ব্যাখ্যা। |
