|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ২... |
|
সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের ইতিবৃত্ত |
রবীন্দ্রনাথ মনেই করতেন যে, ভারতবর্ষের বিভিন্ন অঙ্গরাজ্যের মধ্যে সে ভাবে ভৌগোলিক যোগ কম, কিংবা সে ভাবে কোনও জাতীয়তার বন্ধন গড়ে ওঠেনি। কনৌজ কোশল কাশী বা কাঞ্চী কেবলই ব্যস্ত থেকেছে নিজ নিজ স্বাতন্ত্র্য বজায় রাখতে। এমনকী বিখ্যাত সাহিত্যিকরাও যেন নিজ নিজ অঞ্চলের রাজন্যবর্গেরই হয়ে থেকেছেন, যেমন কালিদাস বিক্রমাদিত্যের। তিনি বা তাঁর মতো আরও যাঁরা, তাঁরা কখনওই হয়ে ওঠেননি সমগ্র দেশের বা তৎকালীন সামগ্রিক সময়ের। কিংবা তাঁদের কাজ কোনও অচ্ছেদ্য গ্রন্থিতে যুক্ত করতে পারেনি অঙ্গরাজ্যগুলিকে, পারেনি পূর্বকাল ও উত্তরকালের যোগসূত্র তৈরি করতে। রবীন্দ্রনাথ তাঁর তুমুল কর্মের মধ্যেও তাই প্রবল ভাবে চেয়েছিলেন বিভিন্ন অঞ্চলের সাহিত্যের মেলবন্ধন, তাঁর দৃঢ় প্রতীতি ছিল: সাহিত্যই পারে জাতীয় ঐক্য তৈরি করে দিতে। স্বপন চক্রবর্তী এ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন তাঁরই সম্পাদিত বই নেমলেস রেকগনিশন/ রবীন্দ্রনাথ টেগোর অ্যান্ড আদার ইন্ডিয়ান লিটারেচার্স-এর (ন্যাশনাল লাইব্রেরি, ২১০.০০) ভূমিকা-নিবন্ধে। কলকাতার জাতীয় গ্রন্থাগারে অনুষ্ঠিত আলোচনাচক্রে পঠিত প্রবন্ধাদির গ্রন্থরূপ এটি। উর্দু, সিন্ধি, তেলুগু, তামিল, পঞ্জাবি, ওড়িয়া, নেপালি, মরাঠি, মলয়ালম, কন্নড়, হিন্দি, গুজরাতি, অসমিয়া সাহিত্যের উপর কী ভাবে বিশ্বকবির সাহিত্যগত নান্দনিক ঐক্যের বোধ প্রসারিত হয়েছিল তা নিয়েই বিবিধ প্রবন্ধ। রয়েছে সংস্কৃত সাহিত্য ও রবীন্দ্রনাথ নিয়েও রচনা। সূচনা-নিবন্ধটি লিখেছেন সব্যসাচী ভট্টাচার্য।
রবীন্দ্রনাথ টেগোর সেন্টার ফর হিউম্যান ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ (ইউনিভার্সিটি অব ক্যালকাটা অ্যান্ড ইনস্টিটিউট অব ডেভেলপমেন্ট স্টাডিজ, কলকাতা) ও ইস্টার্ন জোনাল কালচারাল সেন্টার-এর যৌথ উদ্যোগে ইন্দ্রনাথ চৌধুরীর সম্পাদনায় বেরিয়েছে ইউনিভার্সালি লাভড/ রিসেপশন অব টেগোর ইন নর্থ-ইস্ট ইন্ডিয়া (প্রোগ্রেসিভ, ৩০০.০০)। শুরুতেই আই ডি এস কে-র অধিকর্তা অমিয় বাগচী জানিয়েছেন, নানা কারণেই তাঁদের এ উদ্যোগ। প্রথমত ত্রিপুরা রাজপরিবারের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের আজীবন সখ্য।
দ্বিতীয়ত পারিবারিক ও সাংস্কৃতিক দিক থেকে অসমের বিশিষ্ট সাহিত্যিক-ব্যক্তিত্বের সঙ্গে জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবারের সম্পর্ক।
তৃতীয়ত রবীন্দ্রনাথ সচেষ্ট ছিলেন শান্তিনিকেতনে মণিপুরি নৃত্যের প্রচলনে ও বাঙালি-মানসে তার পরিচিতি ঘটাতে। বইটি জুড়ে বিশিষ্ট জনেরা তাঁদের সুচিন্তিত রচনায় আলোকিত করে তুলেছেন উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সঙ্গে রবীন্দ্রনাথের সাংস্কৃতিক আদানপ্রদানের অধ্যায়গুলি। ইন্দ্রনাথ চৌধুরী তাঁর সম্পাদকীয়র শেষে জানাচ্ছেন যে, এতে সেই ভারতবর্ষকে আবিষ্কার করা যায় যা ভাষা ধর্ম জাতি সংস্কৃতির বহুস্তরীয় প্রকাশকে সযত্নে লালনপালন করে। এবং এই সাহিত্যিক বিনিময়ের ভিতর দিয়ে আমরা চিনতে পারি ‘আওয়ার আইডেনটিটিজ ইন দ্য কনটেক্সট অব আ টোটাল ইন্ডিয়া’।
হোসে পাস লিখেছেন সাম্প্রতিক দুনিয়ায় রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাভাবনার মূল্য কতখানি তা নিয়ে। সমাজের প্রচলিত শিক্ষাপদ্ধতির বিকল্পে রবীন্দ্রনাথের শিক্ষাপদ্ধতির প্রয়োগ কী ঘটাতে পারে সে সম্পর্কে জানাচ্ছেন ‘হোয়েন পুট ইনটু প্র্যাকটিস, কুড বি আ মিরাকল কিওর ফর আওয়ার স্কুলস অ্যান্ড সোসাইটি’। কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে রবীন্দ্র-জন্মসার্ধশতবর্ষ স্মারক-সংকলন বেরিয়েছে: মহামানবের সাগরতীরে (মুখ্য সম্পাদক: সুরঞ্জন দাস, নির্বাহী সম্পাদক: বিশ্বনাথ রায় চিন্ময় গুহ। ৫০০.০০)। লিখেছেন তপন রায়চৌধুরী ফাদার দ্যতিয়েন উইলিয়াম রাদিচে মার্টিন কেম্পশেন সোমেন্দ্রনাথ বন্দ্যোপাধ্যায় আনিসুজ্জামান সুধীর চক্রবর্তী প্রমুখ। মূল্যবান এই রচনাদির সঙ্গে চমৎকার মুদ্রণ ও ছবি ছাপাই। সবচেয়ে আকর্ষণীয় ক্রোড়পত্রটি কলিকাতা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র সংসদের পত্রিকা ‘একতা’র রবীন্দ্রজন্মশতবার্ষিকী বিশেষ সংখ্যা, ১৩৬৮ (১৯৬১)-র হুবহু পুনর্মুদ্রণ। পঞ্চাশ বছর আগে সে পত্রিকার সম্পাদক তুষার চট্টোপাধ্যায়-সহ কে না ছিলেন লেখকমণ্ডলীতে শিশিরকুমার দাশ অলোকরঞ্জন দাশগুপ্ত শঙ্খ ঘোষ শমীক বন্দ্যোপাধ্যায় অরুণ সেন নির্মাল্য আচার্য সুমন্ত বন্দ্যোপাধ্যায় তরুণ সান্যাল দেবেশ রায় সুবীর রায়চৌধুরী প্রমুখ!
|
|
|
|
|
|