|
|
|
|
|
|
|
পুস্তক পরিচয় ৩... |
|
সত্যিই কি নতুন
উপস্থাপন |
চৌরঙ্গির মিউজিয়ম আর আলিপুরের পশুশালা জুড়ে তৈরি হচ্ছে তাঁর রচনাবলি, তাঁর সমস্ত রচনাকে জড়ো করার ঐতিহাসিক চেষ্টাটা শুরু হওয়ার সময়ে এমন ক্ষোভ জানান রবীন্দ্রনাথ। কিন্তু তাকে বিশেষ পাত্তা দেয়নি গত-শতবর্ষ-জুড়ে-চলা রবীন্দ্ররচনা সংকলনের উদ্যোগ। ভালই হয়েছে, কারণ ইতিহাসের উপাদান সমগ্রেই সংকলিত থাকা উচিত, কবির চয়ন সেখানে অপ্রাসঙ্গিক।
সংকলনের ধারায় বিশ্বভারতীর দুটি, রাজ্য সরকারের দুটির পরে আলোচ্য রবীন্দ্র-রচনাবলী (খণ্ড ১ ও ২, বাংলা আকাদেমি) পঞ্চম। অবশ্য, বিশ্বভারতী-র বিতর্কিত কালানুক্রমিক রচনাবলিটি ধরলে ষষ্ঠ। কেন আরও একটি? সম্পাদকমণ্ডলীর নিবেদন জানাচ্ছে, কারণ সাতটি।
এক, ১৯৮০-র পরে যে-সব রচনা পাওয়া গিয়েছে, তাদের ‘একত্রিত করা’।
দুই, কপিরাইট-মুক্ত রবীন্দ্ররচনার পাঠে প্রামাণ্যতা রক্ষা।
তিন, বিশ্বভারতীর সংস্করণের পাঠভেদের সন্তোষজনক সমাধান।
চার, ভারতসংস্কৃতির উজ্জ্বলতম সম্ভারটির সংরক্ষণ।
পাঁচ, নতুন প্রজন্মের কাছে কিঞ্চিৎ নতুন উপস্থাপন। ছয়, মানবমননের উত্তরণের দিকনির্দেশ। সাত, মানবতার সংকটে বাঙালির ঐতিহ্য সংরক্ষণ।
চার, ছয় এবং সাত নিতান্ত চর্বিতচর্বণ। এক খুব তাৎপর্যপূর্ণ নয়, কারণ সে কাজটি বিশ্বভারতী-ই করে চলেছে, সেই রচনাবলি এখনও প্রকাশমান। গুরুত্বপূর্ণ হল প্রামাণ্যতা আর নতুন ভাবে উপস্থাপন।
প্রামাণ্যতা বিষয়ে এই রচনাবলিতে সম্পাদকীয় যত্নের পরিচয় পাওয়া যায়। রবীন্দ্রনাথের জীবনকালে প্রকাশিত শেষ সংস্করণের পাঠকেই এখানে প্রামাণ্য ধরা হয়েছে। স্বভাবত, বিশ্বভারতী-রচনাবলির প্রথম ৭টি খণ্ডের পাঠ এখানে গৃহীত। কেবল অন্ধ অনুসরণ নয়, সম্ভাব্য সংশয় ও বিতর্কও জায়গা পেয়েছে। কিন্তু প্রথম দু খণ্ড পড়ে বোঝা গেল না, উপস্থাপনে নতুনত্বটা ঠিক কোথায়। ১৭ খণ্ডে পরিকল্পিত এই রচনাবলির বিন্যাস প্রথমে গ্রন্থের সংরূপভিত্তিক, পরে কালানুক্রমিক। অর্থাৎ, বিশ্বভারতী-র রীতি থেকে আলাদা। কিন্তু পশ্চিমবঙ্গ সরকার ১৯৬১ ও ’৮০-তে যে দুটি রচনাবলি প্রকাশ করেছিল সেখানে বিন্যাস বইয়ের সংরূপ অনুসারেই হয়েছিল। কবিতা, গান, উপন্যাস, ছোটগল্প, নাটক, প্রবন্ধ এই ভাবে বিন্যস্ত সেই রচনাবলির সঙ্গে মৌলিক কোনও পার্থক্য এ রচনাবলির নেই।
পার্থক্য আছে শুধু সংযোজনে। রবীন্দ্রচর্চার বহমান ধারায় ক্রমশ যে সব নতুন তথ্য, রচনা কিংবা পাঠ প্রকাশিত হচ্ছে সেগুলি এতে গৃহীত হচ্ছে, এটুকুই নতুন। থাকছে প্রথম প্রকাশের সময়কার কিছু অলংকরণও। কিন্তু শুধু এর জন্য প্রায় বারোশো পৃষ্ঠার ভার নিয়ে যে নতুন রচনাবলির প্রকাশ সূচিত হল তা নতুন প্রজন্মের কাছে কতটা গ্রহণযোগ্য হবে? বস্তুত, নতুন কিছু তথ্য বা পাঠের জন্য পুরনো সরকারি রচনাবলির কয়েকটি সংযোজন খণ্ড প্রকাশই বোধ হয় যথেষ্ট ছিল। গবেষকদের কাজে লাগত, সংগ্রহটাও সুবিধেজনক হত।
অবশ্য, উদ্দেশ্যটা যদি হয় মেহগনির মঞ্চ ভরানো, তবে কোনও প্রশ্ন নয়... |
|
|
|
|
|