দুই তৃণমূল কর্মী খুনের মামলায় অভিযুক্ত সিপিএমের পাত্রসায়র জোনাল সম্পাদক লালমোহন গোস্বামী ও জোনাল সদস্য মোজাম্মেল হক মণ্ডলের ১৪ দিনের জেল হাজত হল। শুক্রবার তাঁরা বিষ্ণুপুর আদালতে আত্মসমর্পণ করেছিলেন। বিষ্ণুপুরের ভারপ্রাপ্ত এসিজেএম পবিত্র সেন ২৪ অগস্ট ফের তাঁদের বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির করানোর নির্দেশ দেন।
বাঁকুড়ার পুলিশ সুপার মুকেশ কুমার বলেন, “লালমোহন গোস্বামী ও মোজাম্মেল হক মণ্ডল নামে ওই দুই সিপিএম নেতার বিরুদ্ধে তৃণমূল কর্মী খুন, বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাট, মারধর করা-সহ বহু অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি দু’টি মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। অনেক দিন ধরে তাঁদের খোঁজা হচ্ছিল।” তিনি জানান, এ দিন আত্মসমর্পণের খবর পুলিশের আগাম জানা ছিল না। সব দিক বিবেচনা করে তদন্তের স্বার্থে তাঁদের হেফাজতে নেওয়ার বিষয়টি পুলিশ ভাববে। পাত্রসায়র থানার জামকুড়ি গ্রামের বাসিন্দা লালমোহনবাবু গত ১২ বছর ধরে সিপিএমের জোনাল কমিটির সম্পাদক। পাত্রসায়রের দাসপাড়ার বাসিন্দা মোজাম্মেল হক ১৫ বছর ধরে ওই জোনাল কমিটির সদস্য। রাজ্যে সরকার পরিবর্তনের পরেও লালমোহনবাবু এলাকা ছাড়েননি। জামকুড়িতে তিনি নিজের বাড়িতে থাকতেন। তবে সিপিএম নেতা মোজাম্মেল হক দীর্ঘদিন ধরেই বাড়িছাড়া ছিলেন। |
বিষ্ণুপুর আদালতে লালমোহন গোস্বামী। ছবি: শুভ্র মিত্র। |
গত লোকসভা ভোটের পর থেকে সিপিএম ও তৃণমূলের কর্মী-সমর্থকদের সংঘর্ষে উত্তপ্ত ছিল পাত্রসায়র। কয়েকজন তৃণমূল কর্মী খুন হন। সেই সময় বারবার লালমোহনবাবুর বিরুদ্ধে এলাকায় ‘সশস্ত্র শিবির করে সন্ত্রাস’ চালানোর অভিযোগে সরব হয়েছিল তৃণমূল নেতৃত্ব। কিন্তু পুলিশ তখন তাঁকে ধরেনি। বিধানসভা নির্বাচনের ফল প্রকাশের পরেও সিপিএমের এই দাপুটে নেতা এলাকায় ছিলেন।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০১০ সালের ২৭ জানুয়ারি তৃণমূল কর্মী প্রবীর পাল, ওই বছরের ১১ অগস্ট তৃণমূল কর্মী শেখ বদরে আলম মিদ্যা এবং ২০১১ সালের ২৭ ফেব্রুয়ারি তৃণমূল কর্মী জগন্নাথ বাগদি খুন হন। ওই তিনটি খুনের মামলায় লালমোহনবাবু ও মোজাম্মেলের বিরুদ্ধে তৃণমূলের অভিযোগ রয়েছে। এ ছাড়াও এলাকায় সশস্ত্র দুষ্কৃতীদের সঙ্গে নিয়ে একাধিক তৃণমূল কর্মীকে মারধর, বাড়ি ভাঙচুর, লুঠপাটের ৩০টির বেশি মামলায় তাঁদের নামে জড়িয়েছে। ২০১০ সালের ১৩ ডিসেম্বর পাত্রসায়র কলেজে ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মনোনয়নপত্র তোলাকে কেন্দ্র করে দুষ্কৃতী-তাণ্ডব দেখেছিলেন এলাকার বাসিন্দারা। সম্প্রতি ওই দুটি মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করে বিষ্ণুপুর আদালত। গত দু’বছরের মধ্যে ওই দুই সিপিএম নেতা ৩ বার হাইকোর্টে আগাম জামিনের আবেদন করেছিলেন। কিন্তু তা খারিজ হয়। ফলে তাঁদের কাছে আত্মসমর্পণ করা ছাড়া আর কোনও পথ খোলা ছিল না বলেই মনে করছে জেলা পুলিশের একাংশ।
এ দিন সকাল সাড়ে ১১টা নাগাদ বিষ্ণুপুর আদালতে হাজির হন ওই দুই সিপিএম নেতা। তাঁদের আইনজীবী সাম্য চন্দ জামিনের আবেদন করেন। সরকারি আইনজীবী বিমল মণ্ডল জামিনের বিরোধিতা করেন। আদালত সূত্রে জানা গিয়েছে, দু’টি মামলায় জামিন পেলেও বদরে আলম মিদ্যা ও প্রবীর পাল খুনের মামলায় বিচারক তাঁদের জামিনের আবেদন খারিজ করে দেন। আদালত চত্বরে লালমোহনবাবু ও মোজাম্মেল হক অবশ্য কোনও মন্তব্য করতে চাননি।
সিপিএমের রাজ্য সম্পাদকমণ্ডলীর সদস্য তথা বাঁকুড়া জেলা সম্পাদক অমিয় পাত্রের দাবি, “রাজনৈতিক আক্রোশে তৃণমূল লোকসভা ভোটের পর থেকেই আমাদের দলের বহু নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে একের পর এক মিথ্যা অভিযোগ করেছে। লালমোহন ও মোজাম্মেল হকের বিরুদ্ধেও অনেক মিথ্যা অভিযোগ করা হয়েছে। তবে অধিকাংশ মামলায় তাঁরা জামিন পেলেও দু’টি মামলায় তাঁদের বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়। আইনের প্রতি আস্থা আছে বলেই তাঁরা আত্মসমর্পণ করেছেন।”
তৃণমূলের জেলা সভাপতি অরূপ খাঁ’র দাবি, “বিধানসভা ভোটের আগে ওই এলাকায় আমাদের কর্মীদের খুন করা থেকে যত কুকর্ম হয়েছে, সে সবের নেতৃত্ব দিয়েছেন লালমোহন গোস্বামী।” তৃণমূলের পাত্রসায়র ব্লক সভাপতি স্নেহেশ মুখোপাধ্যায়ের অভিযোগ, “আমরা বহুদিন ধরেই ওঁদের গ্রেফতারের দাবি জানাছিলাম। এ বার ওদের দৃষ্টান্তমূলক সাজার দাবি জানাচ্ছি।” |