মুখোমুখি ২...
প্রেমের গান গাইব...
প্রেমে আর পড়ব না

পত্রিকা: ছিলেন ‘কবীর সুমন’, হয়ে গেলেন আর্ট ফিল্মের ‘কুণাল গাঞ্জাওয়ালা’...
রূপঙ্কর: মানেটা কী?

পত্রিকা: আহা, চটছেন কেন? মানে...গানের জগতে এলেন জীবনমুখী গায়ক হয়ে...নিজের সুর, নিজের কথা...‘ও আমার বৌদিমণি’..., ‘ভোকাট্টা তোমার ভালবাসা’...আমরা শ্রোতারা তো মুগ্ধ!...কিন্তু কালে কালে, আপনি তলে তলে দেখলেন, অন্যের সুর-কথায় প্লে-ব্যাকটা অনেক সহজ।
রূপঙ্কর: খারাপ হয়ে যাচ্ছে কিন্তু... (ছদ্ম রাগে)।

পত্রিকা: ...তার উপর ‘গভীরে যাও’ বা ‘রূপকথারা-রা-রা’র মতো গান সুপারহিট হয়ে গেলে তো কথাই নেই। হাতে অজস্র শো। ফলে আবার কষ্ট করে গান বাঁধো রে, সুর করো রে...অত্ত খেটে লাভ কী? তার চেয়ে অন্যের ঘাড়ে বন্দুক রেখে...মানে অন্যের সুরে কথায় দুটো-চারটে হিট প্লে-ব্যাক করলেই তো...
রূপঙ্কর: (ভুরু একটু কুঁচকে) কী সাংঘাতিক কথা রে বাবা! তবে সত্যি বলব? আমি কিন্তু প্লে-ব্যাক শিল্পী হতেই চেয়েছিলাম। ছোট্টবেলা থেকেই রফি, কিশোর, হেমন্ত মুখুজ্জের গান শুনে বড় হয়েছি...কিন্তু প্রথমে প্লে-ব্যাকে কেউ সুযোগ দেননি। অনেক সিনিয়র কম্পোজার, যাঁদের সুরে এখন গাইছি, তাঁরাও আমায় প্রথম দিকে বার করে দিয়েছিলেন। পাত্তাই দেননি...

পত্রিকা: ওহ! চাপে পড়ে জীবনমুখী?
রূপঙ্কর: ‘জীবনমুখী’ কথাটায় আমার আপত্তি আছে... যাই হোক এক রকম চাপই বলতে পারেন। তার উপর সেই সময়ে সুমনদা, নচিদার গানে বুঁদ...সব মিলিয়ে ভাবলাম নেমেই পড়ি।

পত্রিকা: আচ্ছা দুম করে এতটা রোগা হয়ে গেলেন কী করে? পুরো লুকটাই তো পাল্টে ফেলেছেন।
রূপঙ্কর: বহু চেষ্টায়। হাঁটা, ব্যায়াম, খাওয়াদাওয়া কনট্রোল...সব কিছু।

পত্রিকা: কী দরকার ছিল? স্টেজ শো-র জনপ্রিয়তা বাড়ানো? মেয়ে ফ্যানের সংখ্যা আরও বাড়ানো? নাকি ছবির অফার?
রূপঙ্কর: আপনিও পারেন। ও সব কিচ্ছু নয়। ছোটবেলা থেকেই নানা ধরনের পোশাক পরতে ভাল লাগত, পরে রোজগার করে পছন্দসই জামাকাপড় কিনে, পরে, দেখলাম, তেমন ভাল তো লাগছে না। বিশেষ করে পেটটা... তা-ই ঠিক করলাম রোগা হতেই হবে।

পত্রিকা: আগেও ভাল লাগত কিন্তু।
রূপঙ্কর (হেসে): বলছেন?

পত্রিকা: হুঁ (হাসি)।
রূপঙ্কর: এখন তেমন ভাল লাগে না?

পত্রিকা: আগের ব্যাপারটা স্বতঃস্ফূর্ত ছিল। তা ছাড়া এত ঝরে গেছেন যে আপনাকে দেখলে...
রূপঙ্কর:...সুগার হয়েছে বলে মনে হচ্ছে তো? অনেকে তো মজা করছে এইচ আই ভি পজিটিভ ভেবে!

পত্রিকা: সত্যি?
রূপঙ্কর: সত্যি। বলেছে অনেকে মজা করে।

পত্রিকা: কাজ নিয়ে কথা বলি?
রূপঙ্কর: সে-ই ভাল। এতক্ষণ সেটাই হচ্ছিল না। (হাসি)

পত্রিকা: পরের অ্যালবাম কী?
রূপঙ্কর: পুজোর আগে শুভমিতার সঙ্গে ছ’টা প্রেমের গান নিয়ে একটা অ্যালবাম বেরোচ্ছে। এ ছাড়া ‘তিনকন্যা’, ‘মিসটেক’ ‘বালুকাবেলা ডট কম’, ‘মাছ মিষ্টি মোর’ ‘শেষের কবিতা’ ছবিগুলোতে গাইলাম। নীল দত্তের সুরে গাইলাম ‘দত্ত ভার্সেস দত্ত’তে। ওখানে একটা গান আছে সৃজিতের (মুখোপাধ্যায়) লিপে, ‘তবু যদি চলে আসতে চাও’। ভাল লেগেছে গেয়ে।

পত্রিকা: আপনি মৌলিক গান দিয়ে শুরু করে আজ প্লে-ব্যাকে একের পর এক গাইছেন। একটা ব্যান্ডও তো তৈরি করেছিলেন। আপনাকে মানুষ কী ভাবে মনে রাখুক আপনি চান?
রূপঙ্কর: আমি তো ছবিতে সুরও করেছি। ‘প্রেম বাই চান্স’। ছবিটা যেহেতু ফ্লপ, তাই গানগুলো চলেনি। কী ভাবে মনে রাখুক বলতে, কী বলব, এক জন মিউজিশিয়ান হিসেবে মনে রাখুক।

পত্রিকা: আপনি কিন্তু পাঁচমিশেলি গায়ক হয়ে যাচ্ছেন...
রূপঙ্কর: আমি কিন্তু পাঁচমিশেলি গায়ক নই। চেয়েছিলাম মিউজিশিয়ান হতে, হয়েছি। কুস্তি বা ক্যারাটে করতে চাইনি, করছিও না।

পত্রিকা: প্রথম দিকে প্রতিশ্রুতি ছিল কথা ও সুর দিয়ে নিজেই গাইবেন। এতটা ছড়ানো ছিল না।
রূপঙ্কর: তো কী হয়েছে! আমি রবীন্দ্রনাথের গানেরও একটা অ্যালবাম করছি।

পত্রিকা: আনকমন গান থাকছে?
রূপঙ্কর: না। ‘একটুকু ছোঁয়া লাগে’ বা ‘আয় তবে সহচরী’...বেশ জনপ্রিয় গানই থাকছে। আমার ক্লাস টু-য়ে পড়া মেয়ে যে গানগুলো গাইতে পছন্দ করে, সেই সব গানই গাইছি।

পত্রিকা: জনপ্রিয় রবীন্দ্রসঙ্গীত তো খুব সোজা ব্যাপার।
রূপঙ্কর: সিওর শট্।

পত্রিকা: বাহ্। তা হলে তো হয়েই গেল। আচ্ছা একটা আলটপকা কথা খুব জানতে ইচ্ছে করছে, বলব?
রূপঙ্কর: বলুন।

পত্রিকা: আপনি এত প্রেমের গান লিখেছেন, গেয়েছেন, কিন্তু আপনাকে নিয়ে কোনও গসিপ নেই। কেন?
রূপঙ্কর: আমি আমার বৌয়ের প্রেমে সেই যে পড়েছি, ব্যস। কোনও দিকে তাকাইনি।

পত্রিকা: খুব বোরিং উত্তর। আপনি কি সত্যিই বৌকে ভয় পান?
রূপঙ্কর: শুধু বৌকে কেন, আমি আরশোলাকেও ভয় পাই। ড্রাইভারকে, কাজের লোকদের খুব ভয় পাই...

পত্রিকা: তার মানে আপনি প্রেমে নেই?
রূপঙ্কর: না, প্রেমের গান গাইতে পারি, কিন্তু প্রেমে আর পড়ব না।

পত্রিকা: প্রেমে নেই। কিন্তু প্রতিবাদেও তো নেই?
রূপঙ্কর: না, আমি প্রতিবাদে আছি।

পত্রিকা: কই? আপনার গানে তো প্রতিবাদ নেই। এত এত কিছু ঘটছে...তাপসী মালিক, সিঙ্গুর-নন্দীগ্রাম...পিঙ্কি প্রামাণিক...। কবীর সুমন ছত্রধর মাহাতো, পিঙ্কি প্রামাণিকের জন্য গান বাঁধলেন, কই আপনি তো ইস্যু ভিত্তিক প্রতিবাদে কখনও গান বাঁধেননি?
রূপঙ্কর: রাজনৈতিক বিষয় থেকে আমি একটু দূরেই থাকতে চাই।

পত্রিকা: তা থাকুন। কিন্তু নচিকেতা যেমন বৃদ্ধাশ্রমের বৃদ্ধ, অসাধু ডাক্তার নিয়ে গান করেছেন, তেমনি আপনিও তো সমাজের অসহায় ফুটপাতবাসী, হকার, অন্ধ ভিক্ষুক, লক্ষ-লক্ষ যৌনকর্মী, বার গায়িকা, নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির একক শিশু, মেট্রোয় ঝাঁপ...কখনও কিচ্ছু নিয়ে ভাবিত হননি। অন্তত আপনার গানে তেমনটা পাইনি।
রূপঙ্কর: প্রচুর ভেবেছি জানেন। কিন্তু সাহস করে কিছু বলে উঠতে পারিনি। আমার মধ্যবিত্ত ধ্যান ধারণা আমাকে সেই সাহস থেকে পিছিয়ে রেখেছে।

পত্রিকা: আচ্ছা, এই যে রবীন্দ্রসঙ্গীত নিয়ে ফেসবুকে নানা মজার মজার কমেন্ট থাকে, যেমন ধরুন, ‘মুন্নি বদনাম হুয়ি ডার্লিং তেরে লিয়ে’কে বলা হচ্ছে ‘আমি তোমার প্রেমে হব সবার কলঙ্কভাগী’...
রূপঙ্কর: কিংবা, ‘ইয়ে কালি কালি আঁখে’ মানে ‘কৃষ্ণকলি আমি তারেই বলি’...

পত্রিকা: এই ধরনের রসিকতা আপনার কেমন লাগে?
রূপঙ্কর: মিথ্যে বলব না, বেশ মজাই লাগে।

পত্রিকা: সাহসী মন্তব্য...আরেকটা প্রশ্ন...
রূপঙ্কর: বলুন।

পত্রিকা: নচিকেতার গানে ‘নীলাঞ্জনা’, ‘রাজশ্রী’ নামের নারী আছে, শিলাজিতের ‘ঝিন্টি’ আছে, অঞ্জনের বেলা বোস, রঞ্জনা, এমনকী সে যুগের আর ডি বর্মনেরও ‘রুবি রায়’ ছিল, যাকে এক বার আপনি ধার করে গান বেঁধেছিলেন, কিন্তু আপনি নিজে সাহস করে কোনও নারীর নাম করেননি। কেন?
রূপঙ্কর: আমি সত্যিই এ বার সেটা করব। বিশ্বাস করুন করব। আর আমার নারীর নাম হবে ‘নিবেদিতা’ (হাসি)।

পত্রিকা: থ্যাঙ্কস (হাসি), কথাটা ‘মনে রেখে দেব’।
রূপঙ্কর: ‘নায়ক’-এর শর্মিলা ঠাকুরের ডায়লগটা বললেন, তাই তো?

পত্রিকা: ঠিক ধরেছেন। তবে আপনারটা হবে ‘গায়ক’। ভাল তো?
রূপঙ্কর: (হাসি)।


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.