|
মুখোমুখি ১... |
|
অনীকের ভবিষ্যৎ ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ |
তিনি চান এ বার বীরেন্দ্র সহবাগ হতে। আগের ইনিংসের কথা পুরো ভুলে গিয়ে নতুন
ইনিংস
শুরু করতে।
আসলে তিনি অনীক দত্ত। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ রিলিজের পাঁচ
মাস বাদে
দুরু-দুরু বুকে নতুন
ছবির কাজ শুরু করছেন। সেই ‘আশ্চর্য প্রদীপ’
ছবি নিয়ে
বিশেষ সাক্ষাৎকার দিলেন গৌতম ভট্টাচার্যকে |
পত্রিকা: ভূতেরা নাকি আপনার জীবন বদলে দিয়েছে? |
অনীক: আমি অন্তত লাইফস্টাইলে কোনও বদল দেখতে পাচ্ছি না। এমনিতে আমি একটু অলস প্রকৃতির। আগে বিজ্ঞাপনের ফিল্ম করে স্পেস আউট করতে পারতাম নিজের লাইফটা। নিউজ চ্যানেল আর ক্রিকেট (নট আইপিএল) দেখতাম পাগলের মতো। এখন হঠাৎ করে ব্যস্ততাটা বেড়ে গেছে। সঙ্গে ফিল্মের কাজকর্মও ব্যালান্স করতে হচ্ছে। এই ‘আইডিয়া অফ বিয়িং বিজি’টা ভাল লাগছে না।
|
পত্রিকা: ব্যক্তিগত জীবন নয়। অনেকে বলছে ভূতপ্রেত’দের এনে দেওয়া সাফল্য আপনার ব্যবহার অনেক বদলে দিয়েছে। |
অনীক: (বিস্মিত লুক। সাক্ষাৎকারের শুরুতে মনে হল এমন প্রশ্ন আশা করেননি) এই বদলানো-টদলানো লোকে কেন বলছে জানি না। বরঞ্চ মুখচোরা বলে একটা সময় আমাকে অ্যারোগেন্ট ভাবা হত। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর পর পাছে লোকে সেটা ভাবে সে জন্য বরং প্রয়োজনের চেয়ে বেশি বিনয় করে যাচ্ছি। সত্যি বলতে কী আমার কোনও বদল হয়নি। এটাও তো হতে পারে যে আমার ব্যাপারে লোকের দেখার চোখটাই অন্য রকম হয়ে গেছে। তাই চেঞ্জটা ওদের চোখেই ধরা পড়ছে।
|
পত্রিকা: শুধু তো দেখার চোখ বললে হবে না। সেরা বাঙালি অনুষ্ঠানে আপনি মঞ্চের ওপর থেকে প্রকাশ্যেই যে ভাবে বাঙালি পরিচালকদের ফিল্মের নাম নিয়ে বিদ্রুপ করছিলেন। ‘অন্তহীন’কে বলছিলেন অর্থহীন। ‘জাপানিজ ওয়াইফ’-কে বলছিলেন চাইনিজ ওয়াইফ। ‘রেনকোট’-এর সিক্যোয়েল বলেছিলেন গামবুট। ‘২২শে শ্রাবণ’কে ২৫শে বৈশাখ, এটা অনেকেরই সেন্টিমেন্টকে নাকি আহত করেছে। |
অনীক: আমি তো সব সময়েই এ রকম হাসিঠাট্টা করে থাকি। বরাবর এ রকম ছিলাম। আমাকে যদি হঠাৎ করে এখন ডিপ্লোম্যাটিক হতে হয়, ভীষণ পলিটিকালি কারেক্ট হতে হয় তাহলে তো মুশকিল। কারও সেন্টিমেন্ট-এ আঘাত দেওয়াটা আমার উদ্দেশ্য ছিল না। কাউকে ছোট করে দেখানোও নয়। আমি নিজেকে নিয়েও হাসি। আমার কথায় দুঃখ পেয়েছে এটা সরাসরি কেউ বলেনি। আপনার কাছে প্রথম শুনছি। আমার ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরা কিছু দিন ধরেই বলছে তুই আগে যেমন ঠোঁটকাটা ভাবে বলতে পারতি এখন পাবলিক ফিগার হয়ে সেটা বলতে পারিস না। কিন্তু এই যুক্তিটা মেনে নিতে আমার সমস্যা আছে। তা হলে তো আমাকে নিজেকে পুরোটা বদলে ফেলতে হয়। আমি যদি নিজেই বদলে যাই তাহলে আমার ছবিতেও তার প্রভাব পড়বে।
|
পত্রিকা: আপনার কৃতজ্ঞতা প্রকাশের অক্ষমতা নিয়েও কথা উঠেছে। প্রসেনজিৎ যেমন বলেছেন ছবির নানা বিপদ-আপদ এমনকী স্ক্রিপ্ট নির্বাচনের সময়েও উনি আপনার পাশে ছিলেন। অথচ আপনি ন্যূনতম কৃতজ্ঞতা প্রকাশও করেননি। |
অনীক: প্রসেনজিৎ উৎসাহ দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু আরও চার-পাঁচ জনও তো দিয়েছিল। আমি তো ওদের নামও বলিনি। ফোন-টোন সেই সময় অনেকেরই এসেছিল। তা ছাড়া প্রসেনজিতের নাম আলাদা করে বললে কি মনে হত না আমি নেম-ড্রপ করছি!
|
পত্রিকা: আচ্ছা, প্রথম ছবির সাকসেসের পর প্রচুর সংখ্যক প্রযোজক ব্ল্যাঙ্ক চেক নিয়ে আপনার বাড়ির বাইরে দাঁড়িয়ে ছিলেন। সেটা কতখানি চাপ ছিল? |
অনীক: প্রথম দিকে বেশ মজাই লাগত। মনে হত স্বপ্ন না সত্যি? এত ‘আনরিয়েল’ ছিল যে সময় সময় মনে হত স্রেফ এটার ওপর একটা ছবি করা যায়। কেউ কেউ বলছে এক্ষুনি সই করুন। কেউ বলছে তিনটে ছবি এক সঙ্গে সাইন করে নিন। আমি যত বোঝাতে চাইছি যে মাল্টিটাস্কিং করতে পারি না। একসঙ্গে একটা ছবিই যথেষ্ট চাপ। কিন্ত কে শুনছে সে কথা?
|
পত্রিকা: স্বয়ম্বরের মতো জড়ো হওয়া এত প্রযোজক থেকে হঠাৎ রোজ ভ্যালিকে বাছলেন কেন? |
অনীক: ওঁরা আমাকে প্রথম যোগাযোগ করেছিলেন। ওঁদের তরফে পরিচালক প্রভাত রায় নন্দনে ছবিটা দেখে পরের দিনই আমায় ফোন করেন। রোজ ভ্যালি যে ধরনের ছবি করেছে আর ওদের যে রকম আর্থিক প্রতিপত্তি আছে তাতে আমার ছবিটা ঠিকঠাক হয়ে যেতে সমস্যা হবে না বলে আমার মনে হয়েছিল।
|
পত্রিকা: নতুন ছবির বিষয় কী? নিজের গল্প? |
অনীক: না। শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়ের ‘আশ্চর্য প্রদীপ’ গল্প থেকে ছবিটা অনুপ্রাণিত। শ্যুটিং শুরু সেপ্টেম্বরে। গল্পটা এক সাদামাঠা মধ্যবিত্ত মানুষকে নিয়ে। সে এতই কুঁড়ে ছিল যে তার আশেপাশের পার্থিব চাহিদা মিটিয়ে উঠতে পারছিল না। এর পর একটা অদ্ভুত জিনিস পেয়ে তার জীবনটাই বদলে গেল।
|
পত্রিকা: ‘পরশপাথর’ টাইপের? |
অনীক: হ্যাঁ। এর পর তার জীবনে এমন কিছু ঘটা শুরু হল যে সে ভাবতেই পারেনি। আশেপাশের লোকের তার সম্পর্কে রিঅ্যাকশনটাও বদলে গেল। নানা রকম কমিক এলিমেন্ট এর মধ্যে আছে। মূল চরিত্র করছে শাশ্বত। বাকি কাস্টিং ফাইনাল করার কাজ চলছে।
|
|
পত্রিকা: শোনা যাচ্ছে প্রসেনজিৎ মুখ্য চরিত্রটা করতে ইন্টারেস্টেড ছিলেন। কিন্তু আপনি ছোট রোল অফার করায় রাজি হননি। |
অনীক: (কিছুক্ষণ চুপ) আসলে স্ক্রিপ্টটা আগেই লেখা হয়ে গিয়েছিল। প্রসেনজিতের সঙ্গে যখন কথা হয় তখন ওকে মেন রোলটা অফার করতে গেলে স্ক্রিপ্টটা অনেক পরিবর্তন করতে হত। আমি অন্য কাউকে মাথায় রেখে ঠিক স্ক্রিপ্ট লিখি না। বা বদলাই না। আমার মনে হয় ফিল্মের উচিত নয় অভিনেতার ডিজাইন হিসেবে নিজেকে ফিট করা। উল্টোটাই হওয়া উচিত। আমি চেয়েছিলাম প্রসেনজিৎ একটা ছোট্ট চরিত্রে কাজ করুন। ওঁর মনে হয়েছে সেটা উচিত হবে না। আমি ওঁর সিদ্ধান্তকে সম্মান করি।
|
পত্রিকা: ঘটনাচক্রে নতুন ছবি তো আপনারও জীবনের কাহিনি। ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’ তো আপনারও আশ্চর্য প্রদীপ যা অনীক দত্তর জীবন বদলে দিয়েছে। |
অনীক: (কিছুটা কুন্ঠিত) কতকটা তাই। তবে আশেপাশে আরও দেখতে পাচ্ছি।
|
পত্রিকা: উদাহরণ প্লিজ। |
অনীক: নো উদাহরণ।
|
পত্রিকা: আরে বলুন না। |
অনীক: সৃজিত যেমন। মেদহীন স্মার্টনেস দেখতে পাই ওর ছবিতে। চোখা একটা ব্যাপার। বাংলা ছবিতে যা এত কাল ছিল না। ওর ‘হেমলক’ আমার বেশ ভাল লেগেছে। আমি দেখতে যাওয়ার আগে কেউ কেউ নানা কথা বলেছিল। কিন্তু আমার একেবারেই সেটা মনে হয়নি।
|
পত্রিকা: আরও সমসাময়িক কিছু পরিচালক সম্পর্কে মন্তব্য জানতে চাই। যেমন অনিরুদ্ধ রায়চৌধুরী। |
অনীক: বন্ধু। অ্যাওয়ার্ড উইনিং মেকার। আমার ‘অপরাজিতা তুমি’ দেখা হয়ে ওঠেনি। ‘অন্তহীন’-ও না। ‘অনুরণন’ দেখেছি। টু বি অনেস্ট আই ওয়াজন্ট টেরিব্লি এক্সাইটেড।
|
পত্রিকা: সুমন ঘোষ। |
অনীক: সুমনকে খুব ইন্টারেস্টিং লাগে। প্লটগুলো মজার। যে ছেলেটা কর্নেল ইউনিভারসিটি-তে চান্স পেয়ে গৌতম ঘোষকে ফোন করে বলেছিল ফিল্ম ইনস্টিটিউটেও পেয়েছি। কর্নেলেও পেয়েছি। কোথায় যাব? সে ভেরি ইন্টারেস্টিং হতে বাধ্য।
|
পত্রিকা: শিবপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। |
অনীক: শিবুকে সাহসের জন্য প্রাইজ দেওয়া উচিত। দু’টো ছবির কোনওটাতেই একটুও সেফ খেলেনি। বরঞ্চ অফ স্টাম্পের বাইরের বল নাগাড়ে চালিয়ে গেছে।
|
পত্রিকা: কৌশিক গঙ্গোপাধ্যায়। |
অনীক: ওর ‘ল্যাপটপ’ ছবিটা আমার খুব ভাল লেগেছে। ভীষণ সিনেম্যাটিক।
|
পত্রিকা: অঞ্জন দত্ত। |
অনীক: অঞ্জনদার কিছু ছবি বেশ ভাল। ওর ফিল্ম, হাঁটাচলা, কথা বলা, গান গাওয়া সব কিছুর মধ্যে একটা নিজস্ব স্টাইল আছে। ফিল্মের কতগুলো জায়গা বেশ টাচিং।
|
পত্রিকা: প্রথম ছবিতে এ রকম সাফল্যের পর এ বার ভয়-ভয় করছে না? নাকি ‘ভূতের ভবিষ্যৎ’-এর ফর্মুলা অনুসরণ করবেন? |
অনীক: এ সব অবধারিত হিট ফর্মূলা বলে কিছু হয় না। তাহলে সবাই সেটা ফলো করত। আমি জানি এ বার আমার ওপর আশা বিশাল। ফেসবুকে এক দর্শক আমাকে লিখেছিলেন, আপনার ছবিটা চব্বিশ বার দেখেছি। পরের ছবিটা যদি ঝোলান বাড়ি গিয়ে পেদিয়ে আসব।
|
পত্রিকা: এটাই তো চাপ যে লোকে বলার জন্য তৈরি থাকবে - এক ফিল্মের বিস্ময়! |
অনীক: আমি জানি আগে থেকেই ছুরি বেরিয়ে গেছে। বিভিন্ন জায়গায় কথাবার্তা শুরু হয়ে গেছে। অনেকে তৈরিই হয়ে রয়েছে। স্রেফ কিছু হয়নি, বলার জন্য। নাম করছি না, এক পরিচালকের দুটো ছবি পর পর ভাল হওয়াতে লোকে যেন থার্ড ছবির আগে ঘাপটি মেরে বসেছিল ওকে কেটে ছোট ছোট টুকরো করবে বলে। অথচ ছবিটা আমার ভালই লেগেছে। ঈর্ষা থেকেই বোধহয় এগুলো আসে। যে লোকে বলতে শুরু করেছে ওই ডিরেক্টর খুব অ্যারোগেন্ট হয়ে গেছে। আমার প্রশ্ন হল কে অ্যারোগেন্ট হয়েছে তার সঙ্গে ভাল বা খারাপ ছবি করার কী সম্পর্ক? আমি জানি প্রথম ছবি নিয়ে বার বার ভাবতে গেলে ফাঁদে পা দেব।
প্রথম ছবির কথা মাথা থেকে মুছে ফেলতে হবে। সহবাগের মতো মাথাটাকে ব্ল্যাঙ্ক করে ভাবতে হবে আগের বলটা ছিলই না।
এটা নতুন ডেলিভারি। নতুন ইনিংস। |
|