|
|
|
|
|
|
|
আপনার সাহায্যে... |
|
খোদার ওপর খোদকারি |
যেমন খুশি মুখ, চোখ, নাক। স্তন বা যৌনাঙ্গও। এই শহরেই। টাকা ফেললেই হল।
শুধু
একটাই কথা—
ভেবে বদলান, বদলে ভাববেন না।
লিখছেন পারিজাত বন্দ্যোপাধ্যায় |
এ যেন সুকুমার রায়ের গল্প। ছিল চকচকে টাক, হয়ে গেল ভরভরন্ত চুল! ছিল বোঁচা নাক, হয়ে গেল হৃত্বিক রোশনের মতো নাসিকা! ভোজবাজির মতো বদলে গেল কোমর-নিতম্ব স্তনের মাপ, পুরুষাঙ্গ দৈর্ঘ্যে বাড়ল, তিল-আঁচিল-পোড়া চামড়া গায়েব হল, সতীচ্ছদ জোড়া লাগল!
শরীরের কোনও ত্রুটি, অসঙ্গতি দূর করতে হবে? কোনও অঙ্গ আয়নায় দেখে পছন্দ হচ্ছে না? পাল্টে ফেলো। রূপের ব্যাপারে ঈশ্বরের একচ্ছত্র আধিপত্যের দিন গত। চেহারার জন্য হা হুতাশ এই একবিংশ শতকে চলে না। চেহারা ঈশ্বরদত্ত হতে পারে কিন্তু সেটাই আলটিমেট নয়, তার উপর কারিকুরি করার লোক এখন আছে। খোদার উপর খোদকারি করতে ওস্তাদ এই প্লাস্টিক সার্জনদের হাতে রয়েছে হাজারো নতুন প্রক্রিয়া, উন্নত প্রযুক্তি, যন্ত্রপাতি। দরকার শুধু টাকার জোর, সুন্দর থাকার ইচ্ছা, ঠিক সময়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া আর একটা ঠিকঠাক ডাক্তার। কাকপক্ষীতেও জানতে পারবে না, কয়েক ঘণ্টার অপারেশনে রাতারাতি পাল্টে যাবেন। কেউ রহস্য জিজ্ঞাসা করলে কৈফিয়ত দেওয়ার ইচ্ছা হলে দেবেন, না হলে চেপে যাবেন।
কলকাতার লাউডন স্ট্রিটের এক ক্লিনিকে চার ঘণ্টার অপারেশনের পরেই সে দিন সন্ধের ফ্লাইট ধরে দিল্লি চলে গিয়েছিলেন হর্ষ ভোগলে। এর মাসখানেক পর, মুম্বইয়ের এক পাঁচতারা হোটেলের লাউঞ্জে অপেক্ষা করছেন। পুরনো এক বন্ধুর সঙ্গে অনেক দিন পরে আড্ডা মারার পরিকল্পনা রয়েছে। সেই বন্ধু এলেন, তাঁরই সামনে একটা সোফায় বসলেন, তার পর হর্ষকেই ফোন করে জিজ্ঞাসা করলেন আসতে কতক্ষণ লাগবে। মুচকি হেসে হর্ষ এ বার উল্টো দিক থেকে বন্ধুকে হাত নাড়লেন। বন্ধু অবাক। ‘টেকো’ হর্ষকে একমাথা চুল নিয়ে চিনতেই পারেননি। পনেরো বছর বয়স কমিয়ে ফেলেছেন!
হর্ষ একা নন, পাতলা হওয়া চুল পুনরুদ্ধারকারীদের তালিকায় রজার বিনি, রবি শাস্ত্রী, অরুণলাল, ভেস পেজ, কে নেই! যিনি এই প্রত্যেকের ফাঁকা মাথায় চুল বসিয়েছেন সেই চিকিৎসক মনোজ খন্নাই গল্প করছিলেন, নতুন চুল নিয়ে ভেস পেজ ব্যাঙ্ককে গিয়েছেন। এয়ারপোর্টে সিক্যুরিটি কিছুতেই তাঁকে বেরোতে দেবে না। পাসপোর্টে টাক মাথার ছবির সঙ্গে ভেসের নতুন চুলওয়ালা লুক মিলছে না। শেষে হেয়ার ট্রান্সপ্ল্যান্ট সম্পর্কে ব্যাঙ্ককের ইমিগ্রেশন অফিসারদের মোটামুটি ১৫ মিনিটের লেকচার দিয়ে ছাড় পেলেন। এই চুল আর কখনও পড়ে না। দিব্যি সাবান-শ্যাম্পু-তেল দেওয়া যায়, ডাই করা যায়, কাটা যায়।
শোনা যায় সলমান খান তিনবার হেয়ার ট্রান্সপ্লান্ট করিয়ে ফেলেছেন, রণবীর কপূর পছন্দসই হেয়ারলাইন বানিয়েছেন। বলিউডে প্রচলিত খবর, কলকাতার এক চিকিৎসকের কাছে হেমা মালিনী তাঁর ত্বক আর চোখের নীচের বলিরেখা ঠিক করিয়েছেন। শোনা যায়, কসমেটিক সার্জারির দৌলতেই স্যাফ আলি খানের টিয়াপাখির মতো নাক বদলে এখন অনেক চোখা। শ্রীদেবী-শিল্পা-মিনিশা লাম্বা-কোয়েনার নাকের রাইনোপ্লাস্টি, বিপাশা-সুস্মিতা-রাখি সবন্তের ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট তো বহুচর্চিত। |
|
বাংলা ছবির পুরনো দিনের এক বিখ্যাত নায়িকা ফেস লিফট করিয়ে ফিরে এসে এখন চুটিয়ে সিরিয়াল-সিনেমা করছেন। বয়স সত্তরের উপরে। কলকাতারই এক চিকিৎসকের কাছে টলিউডের এক নামী পরিচালক-অভিনেতা ব্রেস্ট ইমপ্লান্ট করিয়েছেন। বাংলা সিরিয়ালের নতুন-পুরনো, ছোট-বড় অসংখ্য অভিনেত্রী কলকাতার প্লাস্টিক সার্জারি ক্লিনিকগুলোতে ভিড় করছেন। নতুনরা চাইছেন আরও আকর্ষণীয়া হতে আর চল্লিশোর্ধরা অল্পবয়সী নায়িকার রোল পেতে। গায়ক বাবুল সুপ্রিয় বলছেন, “শো-বিজ-য়ে থাকতে গেলে এ ধরনের সার্জারি অবশ্যই করা উচিত। মিস ইউনিভার্স, মিস ওয়ার্ল্ড প্রতিযোগিতাতেও আজকাল রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি বৈধ। ভেনেজুয়েলায় রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারি সবচেয়ে ভাল হয়। সে কারণেই ভেনেজুয়েলার প্রতিযোগীরা আজকাল সবচেয়ে বেশি জিতছে এই সব সুন্দরী প্রতিযোগিতা।”
বিদেশি সেলিব্রিটিদের মধ্যে মাইকেল জ্যাকসন থেকে শুরু করে পামেলা অ্যান্ডারসন, প্যারিস হিল্টন, সারা জেসিকা পার্কার, ভিক্টোরিয়া বেকহ্যাম তালিকা
প্রিয়াঙ্কা চোপড়া |
|
|
আগে |
পরে |
সহজে ফুরোবে না। মাইকেল জ্যাকসন এক বার বলেছিলেন, “হলিউডের যে তারকারা প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছেন তাঁরা সবাই একসঙ্গে ছুটি কাটাতে গেলে গোটা হলিউড খালি হয়ে যাবে।”
এ হল শো-বিজ ওয়ার্ল্ডের গপ্প।
চেহারা বদলাতে চাওয়ার কিস্সা তো এখন শুধু সেই গণ্ডিতে আটকে নেই। সাধারণ সচ্ছল বাড়ির ফিগার কনশাস মেয়েরা আকছার ‘বাটক’ বা ‘ব্রেস্ট’ ইমপ্ল্যান্ট করাচ্ছেন। সবচেয়ে যেটা নাড়া দেওয়ার মতো তা হল, ছাপ মারা ‘কনজারভেটিভ’ বাঙালি মধ্যবিত্ত কি না হুড়হুড় করে সেই গপ্পে জায়গা করে নিচ্ছে! প্লাস্টিক সার্জন মণীশমুকুল ঘোষ বলছিলেন, “একদম মধ্যবিত্ত পরিবারের কলেজে পরা প্রচুর ছেলে সেক্স চেঞ্জ করাতে আসছে রীতিমতো বাবা-মাকে জানিয়ে, তাঁদের কাছ থেকে টাকা এবং বন্ধুবান্ধবদের সমর্থন নিয়ে। ১০ বছর আগেও এটা ভাবা যেত না। এই ধরনের অপারেশনে ৩০ হাজার থেকে ৩ লক্ষ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়।”
মণীশ অদ্ভুত একটা কেস পেয়েছিলেন কিছু দিন আগে। নতুন বিয়ের পর এক দম্পতি এসেছিলেন ক্লিনিকে। যিনি স্ত্রী তিনি লিঙ্গ বদলে ছেলে হতে চান! সদ্য বিবাহিত স্বামীকে তিনি সেটা বলেছেন। এবং স্বামী তাঁকে সব রকম সাহায্য করতে রাজি হয়েছেন। মেয়েটির অপারেশন সফল হয়েছিল। সেক্স চেঞ্জ অপারেশনে প্লাস্টিক সার্জন ছাড়াও গাইনকোলজিস্ট, এন্ডোক্রিনোলজিস্ট, সাইকিয়াট্রিস্টের সাহায্য লাগে। মণীশই জানালেন, যৌনাঙ্গ গঠন, স্তন তৈরি, মুখে ছেলে বা মেয়ের আদল দেওয়ার মতো জিনিসগুলি তাঁরা করে দেন। আগে পুরুষাঙ্গ গঠন করা যেত না। এখন চিকিৎসাবিজ্ঞানের উন্নতিতে সেটাও করা সম্ভব।
প্লাস্টিক সার্জন অঞ্জনা মলহোত্রর কাছে একবার এক যুবক এসেছিলেন। অ্যাক্সিডেন্টে তাঁর যৌনাঙ্গ সম্পূর্ণ কেটে এসেছিল। ১০ ঘণ্টার অপারেশনে হাতের চামড়া নিয়ে সিলিকন প্রস্থেসিসে যৌনাঙ্গ পুনর্গঠন করা হয়। এখন সে এক বাচ্চার বাবা। অঞ্জনা বলছিলেন, “চোখের নীচে বয়সজনিত ‘ব্যাগ’ দূর করা থেকে শুরু করে মুখের পিগমেন্টেশন ওঠানো, সব কিছুর জন্য মানুষ আসেন। অনেক মেয়েরা ব্রেস্ট রিডাকশনের জন্য আসেন। আবার অনেক পুরুষের ব্রেস্ট মেয়েদের মতো উঁচু হয়। তাঁদের গায়নাকোমাস্টি অপারেশন করে ব্রেস্ট স্বাভাবিক করা হয়।”
|
ফেলুন কড়ি, হন সুন্দর |
রাইনোপ্লাস্টি (নাকে) |
৩০-৫০ হাজার টাকা |
লাইপোসাকশন |
৬০-৬৫ হাজার টাকা |
ফেস লিফট |
৭৫-৮০ হাজার টাকা |
ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট |
৬৫-৭০ হাজার টাকা |
হেয়ার ট্র্যান্সপ্ল্যান্ট |
৭০ টাকা ফলিকল প্রতি (এক ফলিকলে ৩টে চুল) |
কী ধরনের পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার আশঙ্কা থাকতে পারে |
• সংক্রমণ
• মেটাবলিক ডিসঅর্ডার
• ব্লাড ক্লট
• টিস্যু ডেথ
• অঙ্গের সাড় চলে যাওয়া
• পরবর্তী কালে একাধিক অস্ত্রোপচার দরকার হওয়া
• স্থায়ী ভাবে অংশবিশেষ অসাড় হয়ে যাওয়া বা প্যারালিসিস হওয়া |
|
মনোজ খন্নার কাছে গত ফেব্রুয়ারিতে দুই বন্ধু এসেছিলেন। দু’জনেরই ওজন ছিল ১০০ কেজির বেশি। একই দিনে দু’জনের লাইপোসাকশন হয়। এখন একজনের ওজন ২০ আর অন্যজনের প্রায় ২২ কেজি কমে গিয়েছে। প্লাস্টিক সার্জন রাজন টন্ডন অবশ্য বলছিলেন, ‘লাইপোসাকশন’ শব্দটা এখন ব্যাকডেটেড। এখন বলা হয়, ‘বডি কনট্যুরিং’, অর্থাৎ শুধু মেদ কমানো নয়, পুরো শরীরটাকে ছিপছিপে করা।
রাজনের কাছে বডি কনট্যুরিং করিয়েছেন এমন এক মহিলার কথায়, “বাচ্চা হওয়ার পর আমার ব্রেস্ট ঝুলে গিয়েছিল। পেট আর থাইয়ে প্রচুর মেদ জমেছিল। আমি একটা ফুল মেকওভার চাইছিলাম। অপারেশন করে আমার থাই, পেট, হাত, কোমর থেকে ফ্যাট কেটে নিয়ে ব্রেস্ট আর হিপে লাগানো হয়েছিল। চেহারা বদলাতেই আমার কনফিডেন্স দ্বিগুণ হয়ে গিয়েছে। যৌনজীবনেও দারুণ সুখী। যখন আধুনিক চিকিৎসা রয়েছে, আমি আর্থিক ভাবে সক্ষম, তখন সেই
হর্ষ ভোগলে |
|
|
আগে |
পরে |
সুবিধা নেব না কেন?” আরেক ভদ্রমহিলা চরম হীনমন্যতায় ব্লাউজে কাগজের বল ঢুকিয়ে রাখতেন। টানা ২১ বছর এই ভাবে কাটানোর পর অবশেষে ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করিয়ে ভদ্রমহিলা আনন্দে কেঁদে ফেলেছিলেন।
ইদানীং আবার বয়স্ক মহিলাদের মধ্যে সতীচ্ছদ জোড়া লাগানোর নতুন ট্রেন্ড দেখা দিচ্ছে। সম্প্রতি কলকাতার এক ক্লিনিকে এটা করিয়েছেন বছর ছাপ্পান্নর
এক মহিলা। তাঁর কথায়, “বিয়ের ২৫ বছর পূর্তি উপলক্ষে এটাই স্বামীকে আমার উপহার। এতে আবার মিলনের এক্সাইটমেন্ট প্রথম দিনগুলোর মতো হবে।” কলকাতায় এখন ‘ক্র্যমিও ফেসিয়াল সার্জারি’ নামে একটা অত্যাধুনিক প্লাস্টিক সার্জারিও হচ্ছে। জিনিসটা কী? অনেক শিশু বিকৃত মাথা ও মুখের গঠন নিয়ে জন্মায়। ছ’-সাত মাস বয়সে এই অপারেশনে তাদের মাথার খুলি খুলে ভিতরের হাড় বার করে এনে ল্যাবরেটরিতে সেই হাড় কেটে সঠিক আকার দিয়ে আবার খুলির মধ্যে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়। এতে মুখ ও মাথার চেহারা আমূল বদলে যায়। খরচ দেড় থেকে দু’লক্ষ টাকা।
এমনকী সিক্স প্যাকও তৈরি করা যায়, মাসল টোনিং করা যায় রিকনস্ট্রাকটিভ সার্জারির মাধ্যমে। “যাঁদের শরীর এমনই ছিপছিপে, তাঁদের পক্ষে অপারেশন করে সহজেই সিক্স বা এইট প্যাক, যা খু্শি করা যায়। তবে সেটাকে ধরে রাখতে জিমে যেতেই হবে। আর যাঁদের শরীর তেমন ছিপছিপে নয়, তাঁদের শরীর থেকে লাইপোসাকশনের মাধ্যমে ফ্যাট বের করে দেওয়া হলেও শরীর বানাতে জিমে যেতেই হবে,” জানাচ্ছেন রাজন টন্ডন। অর্থাৎ ডাক্তার আপনাকে সুঠাম শরীর দিতে পারেন, কিন্তু তা রাখতে আপনাকে ঘাম ঝরাতেই হবে।
এই যাবতীয় খোদকারি বৈপ্লবিক নিঃসন্দেহে, তবে এর বিশেষ কিছু বিধিবদ্ধ সতর্কীকরণ রয়েছে। প্রথমত, প্লাস্টিক সার্জারি নিয়ে ছড়িয়ে থাকা ‘মিথ’ ট্যাকল করতে গিয়ে চিকিৎসকেরা ক্লান্ত। একের পর এক টিভি সিরিয়ালে অ্যাক্সিডেন্টের পর প্লাস্টিক সার্জারিতে নায়ক-নায়িকার মুখ আগাপাস্তলা বদলে যাচ্ছে! বাস্তবে তো এটা হয় না। নাক-চোয়াল-গাল বদলালে মুখের বেশ কিছুটা পরিবর্তন হয়, কিন্তু মানুষের মুখ সম্পূর্ণ বদলায় না। মিডিয়ার দৌলতে এই সত্যিটা অনেকেই বুঝতে পারছেন না। এবং রাতারাতি তাঁকে করিনা কপূর বা সলমান খান করে দেওয়ার দাবি পেশ
শিল্পা শেঠি |
|
|
আগে |
পরে |
করছেন। মণীশমুকুলের কাছে তো একবার একজন আরও বিচিত্র ফরমায়েশ নিয়ে এসেছিলেন। তাঁর আঙুলের ছাপ বা ফিঙ্গার প্রিন্ট নাকি বদলে দিতে হবে! অবশ্যই পত্রপাঠ তাঁকে ফেরানো হয়েছিল।
দ্বিতীয় সমস্যা হল, ঠিকমতো চিকিৎসক বা ক্লিনিক বাছাই করতে না-পারা। যেখানে চাহিদা বেশি, সেখানে ধোঁকা দেওয়ার প্রবণতা আর আশঙ্কাও বেশি। ব্যাঙের ছাতার মতো ছোট-ছোট প্লাস্টিক সার্জারি ক্নিনিক গজিয়ে উঠেছে। কম টাকায় এরা চেহারার ভোল বদলের প্রতিশ্রুতি দিচ্ছে। তাতে ভুলে মানুষ যাচ্ছেন। তার পর অস্ত্রোপচারে চেহারা ভালর জায়গায় কুৎসিত হয়ে গেলে আর কিছু করার থাকছে না। অনেকেই সংক্রমণ, রক্ত জমাট বাঁধা, মেটাবলিক ডিসঅর্ডার, টিস্যু ডেথ, প্যারালিসিসের সম্মুখীন হচ্ছেন।
মণীশ-রাজনরা বলছেন, ডাক্তার বাছাইয়ের মতো রোগী বাছাই করা এবং অপারেশনের আগে তাঁদের সঙ্গে অন্তত তিন-চারবার বসে কথা বলা খুব জরুরি। রোগীকেও বাস্তববাদী হতে হবে। কতটা পরিবর্তন হতে পারে, কতটা তিনি চাইতে পারেন, কতটা করা উচিত, সেটা তাঁকে বুঝতে হবে। কেউ যদি ৮৬ বছরে অস্ত্রোপচার করে শাহিদ কপূর বা রণবীর কপূরের তারুণ্য চান, তা হলে তো সেটা ঘোর অবিমৃষ্যকারিতা। তা ছাড়া, অস্ত্রোপচারের পর চিকিৎসক যে ভাবে থাকতে বলছেন, খাবারে যা যা নিয়ন্ত্রণ করতে বলছেন, যে ব্যায়ামের পরামর্শ দিচ্ছেন, তা না-করলে কোনও অস্ত্রোপচারেই কিছু হওয়ার নয়।
এক তরুণীর ব্রেস্ট ইমপ্ল্যান্ট করেছিলেন রাজন টন্ডন। অন্তত তিন সপ্তাহ বেশি ঘোরাঘুরি, ভারি জিনিস তোলা, যৌন সম্পর্ক স্থাপন সব বন্ধ ছিল। এক সপ্তাহ পরে মেয়েটি তাঁর কাছে এল। ইমপ্ল্যান্ট খুলে এসেছে। স্তনে লাল-লাল দাগ। চেপে ধরতে মেয়েটি স্বীকার করেন, বয়ফ্রেন্ডের জোরাজুরিতে শারীরিক সম্পর্ক করতে গিয়েই এই কাণ্ড।
আরেক বৃদ্ধ ৭৫ বছর বয়সে প্রেমে পড়েছিলেন। তাঁর মনে হয়েছিল তাঁর ৪২ বছরের প্রেমিকার কাছে একটু তরুণ না-হলে চলছে না। চিকিৎসক তাঁকে কাউন্সেলিংয়ের সময় বার বার বলেছিলেন, তাঁর পার্সোন্যালিটির সঙ্গে তারুণ্য ব্যাপারটা যাবে না। তিনি যেমন আছেন, সেটাই ভাল। বৃদ্ধ শোনেননি। অস্ত্রোপচারের এক মাসের মধ্যে প্রেমিকা তাঁকে ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন। এমন অনেক ক্ষেত্রেই হয়েছে যখন প্লাস্টিক সার্জারি করাতে ইচ্ছুক মহিলা বা পুরুষটিকে সাইকিয়াট্রিস্টের কাছে পাঠানো হয়েছে। সামান্য কাউন্সেলিংয়ে তিনি হারানো আত্মবিশ্বাস ফিরে পেয়েছেন এবং প্লাস্টিক সার্জারি করার সিদ্ধান্ত থেকে ফিরে এসেছেন।
বিজ্ঞানের অগ্রগতিকে পাগলামি বা অসুস্থতার পর্যায়ে নিয়ে গিয়ে ব্যবহার করলে সারা জর্জ বা নীলিন নমিতার মতো দশা হওয়া অস্বাভাবিক নয়। সারা প্লে-বয় পত্রিকার মডেল। প্রায় সাড়ে আট লক্ষ ডলার খরচ করে ফেলে ১০০ বার দেহের বিভিন্ন অংশে প্লাস্টিক সার্জারি করিয়েছিলেন গিনেজ বুক অফ ওয়ার্ল্ড রেকর্ডে নাম তোলার জন্য। নীলিন আবার নিজেকে মিশরের রানি নেফেরতিতি বলে মনে করতেন। নেফারতিতির ছবির সঙ্গে মিল আনতে ৫১ বার অস্ত্রোপচার করিয়েছিলেন। ভুলভাল অস্ত্রোপচারে চেহারা কুৎসিত করেছেন বা অসুস্থ হয়েছেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রচুর। তাই চিকিৎসকদের অতি মূল্যবান পরামর্শ, “ভেবে বদলান, বদলে ভাববেন না।” |
|
|
|
|
|