দক্ষিণ কলকাতা: বেহালা
দৃষ্টান্ত পুজালিতে
অপচয় নয়
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ‘জল ধরো জল ভরো’ স্লোগান কার্যকর করার ব্যাপারে সরকারি ঘোষণা সত্ত্বেও এ পর্যন্ত তা রূপায়ণের উদ্যোগ সামান্যই। তবে বৃষ্টির জল ধরে তা ব্যবহার করার একটি সফল প্রকল্প দেখা গেল শহরতলির একটি হাসপাতালে।
শহর কলকাতা থেকে কয়েক কিলোমিটার দূরে পুজালি পুরসভা। এখানে বছর দু’য়েক আগে থেকেই শুরু হয়ে গিয়েছে জল ধরে রেখে তা পুরসভার হাসপাতালের বিভিন্ন প্রয়োজনে ব্যবহার করার কাজ। পুজালি পুরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডে পুরসভার ঠিক উল্টো দিকেই কয়েক পা দূরে পুরসভার হাসপাতাল মাতৃসদন। কুড়ি শয্যাবিশিষ্ট এই হাসপাতালে প্রতি দিন বহির্বিভাগেও চিকিৎসা চলে। কিন্তু এই হাসপাতালে পানীয় জল ছাড়া অন্য সব কাজই হয় ধরে রাখা বৃষ্টির জলে।
পুরসভা সূত্রে খবর, হাসপাতালের ভিতরে রয়েছে সিমেন্ট দিয়ে বাঁধানো দু’টি বড় জলাধার। হাসপাতালের ছাদে রয়েছে চ্যানেল। বৃষ্টির জল এই চ্যানেলের মধ্য দিয়ে এসে পড়ে পাইপলাইনে। পাইপলাইন দিয়ে সেই জল এসে জমা হয় জলাধার দু’টিতে। এক-একটি জলাধারে কুড়ি হাজার লিটার জল জমা হয়। এ ছাড়াও হাসপাতালের বাইরে রয়েছে একটি বড় জলাশয়। বৃষ্টির জল ধরে রাখার জন্য এটি কৃত্রিম উপায়ে মাটি কেটে তৈরি করেছে পুরসভা। এই জলাশয়টিতে প্রায় ৩০ লক্ষ লিটার জল ধরে বলে পুরসভা থেকে জানা গিয়েছে।
২০১০ সালে পুরসভার পক্ষ থেকে দু’টি জলাধার করতে মোট খরচ পড়ে এক লক্ষ ত্রিশ হাজার টাকা। বাইরের জলাধারটি মাটি কেটে তৈরি করতে খরচ হয়েছে চল্লিশ হাজার টাকা। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের বাস্তুকার সুজিত পাল বলেন, “মোট তিনটি জলাশয় থেকে হাসপাতালের ধোয়া, মোছা এবং অন্যান্য কাজ হয়ে যায়। পানীয় জলটাই শুধু আমাদের সরবরাহ করতে হয়।”
কিন্তু কোনও বছরে পর্যাপ্ত বৃষ্টি না হলে?
সুজিতবাবু বলেন, “তখন একটু সমস্যা হয়। পুরসভা তখন বাকি প্রয়োজনীয় জল সরবরাহ করে। হাসপাতালে পুরসভার জল সরবরাহের জন্য পাইপলাইন করা রয়েছে। কিন্তু বৃষ্টির জলটাও যাতে নষ্ট না হয়, তার জন্য পরীক্ষামূলক ভাবে আমরা এই পরিকল্পনা গ্রহণ করি। পরে দেখি তাতে বেশ কাজ হচ্ছে।”
পুজালির পুরপ্রধান কংগ্রেসের ফজলুল হক বলেন, “এই কাজটি যখন শুরু করি, তখন কী হবে জানতাম না। কিন্তু কাজটি করে সফল হওয়ার পরে আমরা অন্যান্য জায়গাতেও বৃষ্টির জল ধরে রাখার এই প্রকল্প গ্রহণ করব।” এই প্রকল্প চালু করার ফলে পাম্প চালিয়ে মাটির নীচের জল আর তুলতে হয় না। তাতে বিদ্যুতের সাশ্রয় হয় বলে পুরসভা সূত্রে জানা গিয়েছে। বৃষ্টির জল ধরে ব্যবহার করলে কেবল বিদ্যুতেরই সাশ্রয় হয় না, মাটির নীচের জলের ভাণ্ডারের উপরেও চাপ কমে।


ছবি: পিণ্টু মণ্ডল




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.