|
|
|
|
|
|
দক্ষিণ কলকাতা |
নয়া ট্রিটমেন্ট প্লান্ট |
তৃষ্ণা মেটার আশায় |
কৌশিক ঘোষ |
গার্ডেনরিচ জলপ্রকল্প অধিগ্রহণের এক বছরের মধ্যেই নতুন ট্রিটমেন্ট প্লান্ট নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিল কলকাতা পুরসভা। পরিকল্পনা অনুযায়ী, পাঁচ কোটি গ্যালন পরিশুদ্ধ পানীয় জল সরবরাহের লক্ষ্যে তৈরি করা হবে নতুন প্লান্টটি। বর্তমানে দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে পানীয় জলের সঙ্কটের পরিপ্রেক্ষিতেই এই সিদ্ধান্ত বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন।
কলকাতা পুরসভার মেয়র শোভন চট্টোপাধ্যায় বলেন, “দক্ষিণ কলকাতার বিস্তীর্ণ অংশে পানীয় জলের সঙ্কট মেটাতেই এই প্রকল্প। গার্ডেনরিচ জল-প্রকল্পের মধ্যেই এর জন্য জায়গা চিহ্নিত হয়েছে। চলতি বছরের শেষে কাজ শুরু করা হবে। এই প্রকল্পে প্রতি দিন পাঁচ কোটি গ্যালন জল পরিশোধিত হবে। এ ছাড়া, প্রত্যহ দেড় কোটি গ্যালন জল পরিশোধনের ক্ষমতাসম্পন্ন একটি ট্রিটমেন্ট প্লান্ট তৈরির কাজ এখানে ইতিমধ্যেই চলছে।”
|
|
নতুন প্রকল্প গড়তে ব্যয় হবে প্রায় ২১১ কোটি টাকা। পুরসভাই এই টাকা বরাদ্দ করবে। প্রকল্পের কাজ শেষ করতে প্রায় তিন বছর সময় লাগবে বলে শোভনবাবু জানান।
বর্তমানে গার্ডেনরিচ প্রকল্প থেকে দৈনিক প্রায় ১০ কোটি গ্যালন পানীয় জল পরিশোধিত হয়। অথচ, পরিশোধিত হওয়ার কথা ১২ কোটি গ্যালনের। দক্ষিণ কলকাতার বেহালা, যাদবপুর, গার্ডেনরিচ ছাড়াও গার্ডেনরিচের এই জল আশপাশের পুর-এলাকা পুজালি, বজবজ এবং মহেশতলায় সরবরাহ করা হয়। বিভিন্ন সমস্যায় মাঝেমধ্যেই জল সরবরাহ বিঘ্নিত হয়। তৃণমূল পরিচালিত নতুন বোর্ড ক্ষমতায় আসার পরে কলকাতা মেট্রোপলিটন ওয়াটার অ্যান্ড স্যানিটেশন অথরিটি-র (কেএমডব্লিউএসএ) কাছ থেকে গার্ডেনরিচ অধিগ্রহণ করে কলকাতা পুরসভা। পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, এই প্রকল্পের জলের বেশির ভাগ অংশই কলকাতা পুর-এলাকায় সরবরাহ করা হয়। এ ছাড়া, গার্ডেনরিচের বাইরে দক্ষিণ কলকাতার বিভিন্ন বরোতে বুস্টার পাম্পিং স্টেশন পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের নিয়ন্ত্রণেই থাকে। সেই কারণেই গার্ডেনরিচ প্রকল্প এবং পাম্পিং স্টেশন রক্ষণাবেক্ষণের জন্য অধিগ্রহণ করা হয়েছে বলে পুর-কর্তৃপক্ষ জানান।
|
|
গার্ডেনরিচ প্রকল্পে সমস্যা তৈরি হল কেন?
পুরসভা সূত্রে খবর, পরিশুদ্ধ পানীয় জল প্রস্তুত করার জন্য সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল গঙ্গা থেকে অপরিশোধিত পানীয় জলের ধারাবাহিক জোগান। সেই জল তোলার ক্ষেত্রেই মাঝেমধ্যে সমস্যা দেখা দেয়। গার্ডেনরিচ প্রকল্পে গঙ্গার অপরিশোধিত জল তোলার জন্য দু’টি পাম্পিং স্টেশন বা জেটি রয়েছে। তার মধ্যে একটি পাম্পিং স্টেশন পুরনো। তা ছাড়া কিছু প্রযুক্তিগত সমস্যা রয়েই গিয়েছে। ফলে জোয়ারের সময় ছাড়া অন্য সময়ে গঙ্গা থেকে জল তোলায় অসুবিধা হয়। গ্রীষ্মকালে গঙ্গার জলতল নেমে গেলে সমস্যা আরও প্রকট হয়। তবে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি, গার্ডেনরিচ পাম্পিং স্টেশন অধিগ্রহণের পরে পাম্প খারাপ হয়ে বসে যায়নি। ফলে চলতি বছরের গ্রীষ্মেও এখান থেকে জল সরবরাহ বন্ধ হয়নি।
কলকাতা পুরসভার জল সরবরাহ বিভাগের ডিরেক্টর বিভাস মাইতি অবশ্য জানান, পাম্পের ধারাবাহিক নজরদারি এবং রক্ষণাবেক্ষণের ফলে এই সমস্যা বর্তমানে আটকানো গিয়েছে ঠিকই। কিন্তু সমস্যার স্থায়ী সমাধান হয়নি। এর জন্য প্রয়োজন পুরনো জেটির বদলে নতুন জেটি নির্মাণ কিংবা পুরনো জেটির আমূল মেরামতি। কিন্তু তা করতে গেলে জেটি বন্ধ রাখতে হবে। ফলে টানা বেশ কয়েক দিন বন্ধ রাখতে হবে পানীয় জল সরবরাহ। নাগরিকদের অসুবিধার কথা ভেবে তা করা সম্ভব হচ্ছে না। |
|
নতুন ট্রিটমেন্ট প্লান্টটি নির্মাণের জন্য বহিরাগত সংস্থাকে দিয়ে গার্ডেনরিচে একটি সমীক্ষা করিয়েছে পুরসভা। এখানে ট্রিটমেন্ট প্লান্ট, জলাধার নির্মাণ ছাড়াও ১০ কোটি গ্যালন অপরিশোধিত জল তোলার জন্য একটি জেটি তৈরি হবে। সেই জেটির মাধ্যমেই পুরনো এবং নতুন ট্রিটমেন্ট প্লান্টে অপরিশোধিত জলের জোগান দেওয়ার কাজ চলবে। জেটি নির্মাণের কাজ শেষ হলে পুরনো জেটিটি খোলনলচে পাল্টে নতুন করে গড়া হবে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তী পর্যায়ে কলকাতা পুরসভার দু’টি নতুন জেটি থাকবে। কোনও কারণে একটিতে জল তোলার অসুবিধা হলে অন্যটির মাধ্যমে কাজ চালানো হবে। এর ফলে দক্ষিণে পানীয় জল সরবরাহের ক্ষেত্রে আর কোনও সমস্যা থাকবে না বলে পুর-কর্তৃপক্ষের দাবি।
|
ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য |
|
|
|
|
|