উত্তর কলকাতা: পাইকপাড়া, ব্যারাকপুর
নর্দমা সাফাই
অবশেষে উদ্যোগ
ল্লিশ বছরে এই প্রথম!
বিটি রোডে ভূগর্ভস্থ নর্দমায় অবশেষে পলি তোলার কাজ শুরু করল কেএমডিএ। এর আগে বহু বার বলা সত্ত্বেও পুরসভা এ কাজ করেনি বলে বাসিন্দাদের অভিযোগ।
কাজ শুরু হয়েছে সিঁথির মোড়ের সার্কাস ময়দানের কাছ থেকে। ডানলপ মোড় হয়ে আলমবাজার বিএসএফ ক্যাম্প পর্যন্ত মাটির তলা দিয়ে গিয়েছে এই নর্দমা। ক্যাম্পের দেওয়াল ঘেঁষে নিবেদিতা সেতুর পাশেই গঙ্গার লকগেট। শেষ পর্যায়ের কাজ হবে এখানেই। পুরো কাজের ব্যয়বরাদ্দ হয়েছে ১ কোটি ২৭ লক্ষ ৪১ হাজার টাকা। টাকা দিচ্ছে রাজ্য পুর দফতর। কেএমডিএ টেন্ডার ডেকে কাজের দায়িত্ব দিয়েছে একটি সংস্থাকে।
বিটি রোডের উপরে পিট খুলে শ্রমিক নামিয়ে চলছে সাফাইয়ের কাজ। বহু বছর ধরে আবর্জনা জমে প্রায় বন্ধ হওয়ার মুখে ওই নর্দমা। তাই জল বেরোতে পারছিল না। কোনও কোনও মহল প্রশ্ন তুলেছে, সে ক্ষেত্রে পলি তোলার কাজে সাকশন যন্ত্র ব্যবহার করা হল না কেন? কেএমডিএ সূত্রে জানা গিয়েছে, সাকশন যন্ত্র জলীয় নরম আবর্জনা টানতে পারে। শক্ত বা বেশি জমাট বাঁধা ময়লা টানতে পারে না। তাই এই নর্দমাটির ক্ষেত্রে সাকশন যন্ত্র ব্যবহারে সমস্যা তৈরি হবে। নীচে কাজকরতে নামা শ্রমিকেরা জানান, কোথাও কোথাও পলি জমে পাথরের মতো শক্ত হয়ে গিয়েছে।
কাজের দায়িত্বে থাকা সংস্থার তরফে জানানো হয়েছে, মে মাসের শেষে কাজ শুরু হয়েছে। চলবে আগামী জানুয়ারী পর্যন্ত। বালির বস্তার বাঁধ দিয়ে পলি তুলে রাখা হচ্ছে বিটি রোডের ধারে। জল কিছুটা শুকোলে সেই পলি ডাম্পারে তুলে নিয়ে পুরসভার নির্দিষ্ট করা জায়গায় ফেলে আসা হচ্ছে। প্রয়োজনমাফিক তৈরি করা হচ্ছে পিট। প্রতিটি পিটে শ্রমিক ঢুকে পলি সাফাই করার কথা। তা না হলে এত দিনের জমা আবর্জনা সাফাই সম্ভব নয় বলে জানাচ্ছে কেএমডিএ এবং ওই সংস্থা, উভয়েই। জোয়ারের সময় বাদ দিয়ে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত চলছে কাজ।
বরাহনগরের বাসিন্দারা জানাচ্ছেন, বরাহনগর পুর এলাকায় মাটির নীচের এই নর্দমাটি তৈরি হয়েছে ১৯৭২ সালে। অভিযোগ, তৈরির পর থেকে এক বারের জন্যও তাতে পলি পরিষ্কার করা হয়নি। সে কথা স্বীকার করছেন বর্তমান পুরপ্রধান অপর্ণা মৌলিক। তাঁর কথায়: “বরাহনগরের জল জমার সমস্যা মেটাতে এই প্রকল্পের প্রয়োজন ছিল। স্থানীয় সাংসদ সৌগত রায়ের তত্ত্বাবধানে আমরা এই কাজের জন্য কেএমডিএ-র কাছে আবেদনও করেছিলাম।” বিরোধী দলনেতা, সিপিএমের অশোক রায় বলছেন, “গত চল্লিশ বছরে এই প্রথম একটা প্রকল্পের মাধ্যমে কাজ হচ্ছে। তবে আমরাও আশির দশকের মাঝামাঝি সময়ে চেষ্টা করেছিলাম। কেএমডিএ আমাদের কাছে এলাকার ম্যাপ চায়। আমরা দিতে পারিনি। তাই কাজও হয়নি। জমা জলের সমস্যা মেটাতে বিক্ষিপ্ত ভাবে শুধু কয়েকটা পিট পরিষ্কার করিয়েছিলাম।”
কেএমডিএ-র জনসংযোগ আধিকারিক সুশান্ত চট্টোপাধ্যায় বলছেন, “চল্লিশ বছরে প্রথম বার এই কাজ হচ্ছে। কেএমডিএ প্রকল্পের রূপায়ণ করে। কিন্তু রক্ষণাবেক্ষণ করা তাদের কাজ নয়। এই কাজের গুরুত্ব উপলব্ধি করে পুর ও নগরোন্নয়নমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম এ বিষয়ে আগ্রহী হন। তাঁর উদ্যোগ ও অনুমোদিত অর্থেই কাজ করা সম্ভব হচ্ছে। তবে ম্যাপের বিষয়টা আমার জানা নেই। খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।”
ভূগর্ভস্থ নর্দমার বেহাল দশার কারণে প্রতি বছর বর্ষায় ভাসে বরাহনগর ও সংলগ্ন এলাকা। ভোগান্তি সবচেয়ে বেশি ঘোষপাড়ার বাসিন্দাদের। ওই এলাকায় সামান্য বৃষ্টি কিংবা বৃষ্টি ছাড়াই জমে থাকে পচা জল। এই নিয়ে দীর্ঘ দিন ধরেই বাসিন্দাদের মধ্যে ক্ষোভ জমছিল। অবশেষে কাজ শুরু হওয়ায় প্রতি বছরের দুর্দশার চেনা ছবিটা বদলের আশা দেখছেন তাঁরা।
তবে দিনের ব্যস্ত সময়ে বিটি রোডের মতো গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় কাজ চলতে থাকায় পথচারী ও গাড়ি যাতায়াতের ক্ষেত্রে কিছুটা সমস্যা হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন স্থানীয় ব্যবসায়ী এবং বাসিন্দারা। যদিও সকলেই জানাচ্ছেন, উন্নয়নের কাজে এই ধরনের অসুবিধার মোকাবিলা করতে তাঁরা প্রস্তুত।

ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.