উত্তর কলকাতা
জবরদখল
সৌন্দর্যায়নে বিলম্ব
রিকল্পনা বাস্তবায়িত হতে লেগে গেল দীর্ঘ দিন। কারণ, জবরদখল। এমনই ঘটেছে প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোডে খালধারে একটি পার্ক তৈরির সময়।
অনেক দিন আগেই শহর সাজাতে খালধারের সৌন্দর্যায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। কিন্তু অভিযোগ, খালপাড়ের জবরদখলের জন্য সেই কাজ অনেকটাই পিছিয়ে রয়েছে। যেমন, দু’বছর আগে প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোডে খালধারের পাশে একটি পার্ক তৈরি সিদ্ধান্ত নেয় কলকাতা পুরসভা। এলাকাটি কলকাতা পুরসভার ৬ নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্গত। সম্প্রতি, ঝুপড়ি সরিয়ে ৫০ মিটার দীর্ঘ একটি উদ্যান তৈরি করা সম্ভব হয়েছে। পাশেই ১০০ মিটার দীর্ঘ একটি পার্ক তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। কিন্তু সেখানও ঝুপড়ি রয়েছে।
কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ (উদ্যান) দেবাশিস কুমার বলেন, “অনেক ক্ষেত্রেই ঝুপড়ি থাকার জন্য খালধারের সৌন্দর্যায়নে অসুবিধা হচ্ছে। পুরসভা প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোডের খালপাড়ের ঝুপড়িবাসীদের সরিয়ে ইতিমধ্যেই একটি বাগান তৈরি করেছে। এর পাশেই ১০০ মিটার দীর্ঘ একটি উদ্যান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। সেখানেও ঝুপড়ি সরিয়েই কাজ করতে হবে।”
পুরসভার এক আধিকারিক জানান, প্রাণকৃষ্ণ রোডের এই পার্ক নির্মাণ করতে খরচ হয়েছে প্রায় ৮ লক্ষ টাকা। এ ক্ষেত্রে বড় সমস্যা ঝুপড়িবাসীদের সরানো। ফলে পরিকল্পনা রূপায়ণে দেরি হয়েছে। যেমন, প্রাণকৃষ্ণ মুখার্জি রোডে সদ্য তৈরি উদ্যানটির পাশেই আরও ১০০ মিটার জায়গা ঝুপড়ি থাকার জন্য কাজে অসুবিধা হচ্ছে।
পুরসভা সূত্রে খবর, ১০০ মিটার দীর্ঘ নতুন পার্ক নির্মাণের জন্য পুরসভা ইতিমধ্যেই দরপত্র চেয়েছে। জমিটি রাজ্য সেচ দফতরের। সেচ দফতরের অনুমতি নিয়েই পুরসভা এখানে পার্ক তৈরি করবে। পরবর্তী পর্যায়ে এই খালধার জুড়ে বাগান তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে। স্থানীয় কাউন্সিলর কংগ্রেসের সুমন সিংহ বলেন, “আমার ওয়ার্ডের খালপাড়ের সবুজায়নের জন্য পুরকর্তৃপক্ষকে বলেছি। সেই মতো কাজ হচ্ছে। আপাতত একটি অংশে কাজ হয়েছে। বাকি অংশের কাজ এখনও বাকি। আস্তে আস্তে সবুজায়ন হবে।”
পুরসভার এক নম্বর বরোর চেয়ারম্যান তৃণমূলের তরুণ সাহা বলেন, “খালধারে ঝুপড়ির জন্য কাজ করতে সমস্যা হচ্ছে। অনেক বার ঝুপড়ি তোলা হয়েছে। ফের ঝুপড়ি বসে গিয়েছে। প্রকল্প হাতে নিয়েও পিছিয়ে আসতে হয়েছে। খালধারের পাশ থেকে ঝুপড়ি না সরালে এই ধরনের সৌন্দর্যায়নের কাজ হওয়া সম্ভব নয়।”
পুরসভার উদ্যান বিভাগের এক আধিকারিক জানান, গ্যালিফ স্ট্রিটের খালধার বহু দিন জবরদখল হয়েছিল। পুরসভা সেখানে হকারদের পুনর্বাসনের বাড়ি তৈরি করে। তার পাশেই পুরসভা একটি সুন্দর পার্ক তৈরি করে।
২০০৩-’০৪-এ এই খালধার থেকে ঝুপড়ি উচ্ছেদ হয়। খালধার বাঁধানোও হয়। সেখানে আবার ঝুপড়ি তৈরি শুরু হয়েছে। পুরসভার দাবি, সেচ দফতরের এই জমি থেকে জবরদখলকারীদের সরানোর ব্যাপারে প্রধানত সেচ দফতরকেই উদ্যোগী হতে হবে। এই বিষয়ে তাদের জানানোও হয়েছে।
রাজ্যে সেচ দফতরের প্রতিমন্ত্রী শ্যামল মণ্ডল বলেন, “খালধারের পাশে সেচ দফতরের জমিতে সৌন্দর্যায়নের জন্য মূলত পুরসভাকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। অন্য সংস্থাও সেচ দফতরের অনুমতি নিয়ে সৌন্দর্যায়ন করতে পারে। তবে, খালধারে জবরদখলের জন্য অনেক কাজই করা যাচ্ছে না বলে অভিযোগ আসছে। এই নিয়ে দফতরে সম্প্রতি আলোচনাও হয়েছে। আপাতত সিদ্ধান্ত হয়েছে, একটি টাস্ক ফোর্স তৈরি হবে। এই টাস্ক ফোর্স কোন কোন অঞ্চলে জবরদখল রয়েছে তা খতিয়ে দেখবে। কী পদ্ধতিতে এবং কোথায় ঝুপড়িবাসীদের সরানো হবে সেই বিষয়ে এখনও কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি। এ নিয়ে আলোচনা হবে।”


ছবি: শুভাশিস ভট্টাচার্য




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.