পূর্ব কলকাতা
নয়া পার্কোম্যাট
হবে ঠাঁই
দুপুর দুটো। গাড়ি নিয়ে পাঁচ নম্বর সেক্টরের একটি অফিসে যাবেন টালিগঞ্জের বাসিন্দা গোপা পালিত। রাস্তার উপরে গাড়ি পার্ক করতেই ট্রাফিক কর্মী এসে জানালেন, সেখানে গাড়ি রাখা যাবে না। তা হলে গাড়ি কোথায় রাখা যাবে? শেষে একটি নির্মীয়মাণ অফিসের কেয়ারটেকারকে বলে সেখানেই গাড়ি রাখতে হল গোপাদেবীকে। এমন অভিজ্ঞতা তাঁর একার নয়। অফিসযাত্রীদের একটা বড় অংশই জানাচ্ছেন, গাড়ি পার্ক করার বিস্তর সমস্যা পাঁচ নম্বর সেক্টরে। কারণ, পাঁচ নম্বর সেক্টরে রাস্তা ১৭ কিলোমিটারের বেশি নয়। অথচ গাড়ির চাপ অনেক বেশি। আবার উল্টো অভিজ্ঞতাও হচ্ছে নিত্যযাত্রীদের। রাস্তার ধারে পার্কিংয়ের জেরে তথ্যপ্রযুক্তি শিল্পতালুকের বিভিন্ন রাস্তায় যানজট সামলাতে হিমশিম প্রশাসন।
যদিও গোপাদেবীদের এমন সমস্যায় আর বেশি দিন পড়তে হবে না বলেই দাবি পাঁচ নম্বর সেক্টরের প্রশাসনিক দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা নবদিগন্ত ইন্ডাস্ট্রিয়াল টাউনশিপ অথরিটির। কারণ, গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যা মেটাতে অবশেষে শুরু হয়েছে পার্কোম্যাট গড়ার কাজ। এ কিউ ব্লকে ১১ নম্বর প্লটে এক একর জায়গা জুড়ে গড়ে উঠছে সেই পাকোর্ম্যাট। সেখানে একসঙ্গে ১৭০টি গাড়ি রাখা যাবে বলে জানালেন সংস্থার এগজিকিউটিভ অফিসার বদ্রিনারায়ণ কর।
এর পাশাপাশি ইতিমধ্যেই পাঁচ নম্বর সেক্টরের এক প্রান্তে মুন্সীর ভেড়ির ধার বরাবর একটি রিং রোড তৈরি শুরু হয়েছে। সম্প্রতি সেই কাজের শিলান্যাস অনুষ্ঠানে সংস্থার চেয়ারম্যান আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘শিল্পতালুকে ফ্লোর এরিয়া রেশিও (এফএআর) বাড়ানো হয়েছিল। কিন্তু সেই তুলনায় প্রয়োজনীয় রাস্তা নেই। এর জেরেই সমস্যা হয়েছে। যে কারণে একইসঙ্গে রিং রোড ও পার্কিং প্লটের পরিকল্পনা করা হয়েছে।’’
পাঁচ নম্বর সেক্টরের উইপ্রো মোড় থেকে কলেজ মোড়ের দিকে এগোলেই টের পাওয়া যায় সমস্যাটা কতটা গভীরে। রাস্তার ধারে পার্কিংয়ের জেরে গাড়ি চলাচলের জায়গা গিয়েছে কমে। আরও খারাপ অবস্থা ওয়েবেল ইলেকট্রনিক্স কমপ্লেক্স এলাকায়। পাঁচ নম্বর সেক্টরের বিভিন্ন ব্লকের ভিতরের রাস্তায় পার্কিংয়ের জেরে অফিসে ঢুকতে-বেরোতে সমস্যা হয় বলে অভিযোগ গাড়িচালকদের। সমস্যার আরও একটি দিক হল রাস্তার আয়তন। যেমন, পাঁচ নম্বর সেক্টরের মূল রাস্তা রাজারহাট এক্সপ্রেসওয়ে-র তুলনায় শিল্পতালুকের অন্যান্য রাস্তা সরু। উপরন্তু যত্রতত্র পার্কিংয়ের জেরে রাস্তায় গাড়ি চলাচলের জায়গা গিয়েছে কমে। নিত্যযাত্রীদের অভিযোগ, বিভিন্ন সংস্থার অফিসের মধ্যে পার্কিং লটে গাড়ি না রেখে অফিসের সামনের রাস্তায় পার্ক করা হচ্ছে। তাঁদের আরও দাবি, একটি নয়, একাধিক পার্কোম্যাট কিংবা পার্কিং প্লেস করা হোক। নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষ জানান, ইতিমধ্যেই বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বলা হয়েছে। পদক্ষেপও করা হয়েছে।
নবদিগন্ত কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, সেক্টর ফাইভে গাড়ি পার্কিংয়ের সমস্যার মূল কারণ এতগুলি অফিস হলে একসঙ্গে কত গাড়ি রাখার প্রয়োজন হতে পারে, তা আগে বিবেচনায় রাখা হয়নি। এর পাশাপাশিই পাল্লা দিয়ে বেড়েছে গাড়ির সংখ্যা। তার ফলেই এই পরিস্থিতি। যদিও এই সমস্যা শুধু পাঁচ নম্বর সেক্টরেরই নয়, বিধাননগর-সহ গোটা কলকাতা জুড়েই গাড়ির সংখ্যা গত কয়েক বছরে বৃদ্ধি পেয়েছে। কলকাতাতেও নির্দিষ্ট পার্কিংয়ের জায়গা নির্ধারণ করা সত্ত্বেও সমস্যা মিটছে না। যত্রতত্র গাড়ি পার্কিংয়ের কারণে জেরে কলকাতার অনেক গুরুত্বপূর্ণ রাস্তায় যানজট একটি গুরুতর সমস্যা হয়ে দাঁড়িয়েছে।
রাজ্যের পুর ও নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে এই নিয়ে একটি কমিটি তৈরি হয়েছে। তাঁদের সুপারিশ অনুযায়ী শুধু পাঁচ নম্বর সেক্টরেই নয়, কলকাতাতেও একাধিক পার্কোম্যাট তৈরির পরিকল্পনা রয়েছে রাজ্য সরকারের।’’ পাঁচ নম্বর সেক্টরের সমস্যা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘‘অপরিকল্পিত ভাবে শিল্পতালুক গড়ে উঠেছে। বেশি করে আইটি সংস্থাকে জায়গা দিতে গিয়ে রাস্তা গিয়েছে কমে। কিন্তু এই শিল্পতালুক পরিপূর্ণ হলে কী হবে, তা বিবেচনায় রাখা হয়নি। রাতারাতি পরিকাঠামো বদলানো যাবে না। তবে মূল সমস্যা সমাধান করতে একাধিক পাকোর্ম্যাট তৈরির পরিকল্পনা করা হচ্ছে।”


ছবি: শৌভিক দে




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.