পূর্ব কলকাতা: লেকটাউন, বারাসত
বারাসত
ভোগান্তির নিকাশি
দু’-এক ঘণ্টার বৃষ্টিতেই রাস্তায় হাঁটুজল। নর্দমা উপচে নোংরা জল ঢুকে পড়ে বাড়ির ভিতরেও। জল সরতে সময় লেগে যায় দু’-তিন দিন। সব মিলিয়ে বৃষ্টির ঘাটতিতেও বারাসতের বাসিন্দারা কিন্তু ভুগছেন জমা জলের সমস্যায়।
উত্তর ২৪ পরগনার জেলা সদর বারাসত। অথচ শহরটি নিকাশি সমস্যায় জর্জরিত। অধিকাংশ নর্দমাই কাঁচা এবং আগাছায় ভরা। কোথাও আবার নর্দমাটুকুও নেই। অভিযোগ, নর্দমায় জমে থাকা পলি, আগাছা সব সময়ে পরিষ্কার করা হয় না। এ ছাড়া, এলাকার সব শাখা-নর্দমাগুলির সঙ্গে প্রধান নর্দমার যোগ নেই। তাই সব এলাকা থেকে বৃষ্টির জল শাখা নর্দমা দিয়ে গিয়ে পুরসভার প্রধান নর্দমায় পড়তে পারে না। ফলে ৩২টি ওয়ার্ড নিয়ে গঠিত এই পুর-এলাকার বেশির ভাগ অংশে একটানা কয়েক ঘণ্টা বৃষ্টি হলেই জল জমে যায়। বাসিন্দাদের অভিযোগ, তৃণমূল পরিচালিত বারাসত পুরসভা এই সমস্যা মেটাতে এখনও উদ্যোগী হয়নি।
পুরসভার ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের মধ্য দিয়ে বাণীকণ্ঠ এবং সুতি খাল এসে পড়েছে মধ্যমগ্রামের নোয়াই খালে। বারাসত শহরের অধিকাংশ এলাকার জল এসে পড়ে এই দু’টি খালেই। কিন্তু নর্দমাগুলি আবর্জনা এবং পলিতে আটকে থাকায় নিকাশির ক্ষেত্রে সমস্যা হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় বাসিন্দা বিশাল সরকারের কথায়: “একটানা বৃষ্টিতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় ২৯ নম্বর ওয়ার্ডের সারদাপল্লি। প্লাবিত হয় চৈতন্যপাড়া, নিচু মাঠ, ঘোষপাড়ার কিছু অংশ। সে সময়ে এলাকার বেশির ভাগ বাসিন্দাকেই অন্যত্র আশ্রয় নিতে হয়।”
এ ছাড়া এই পুর-এলাকার নবপল্লি, নিবেদিতাপল্লি, বনমালিপুর, রামকৃষ্ণপুর, পালপাকুড়িয়া, আরদেবক, সুভাষপল্লি, উত্তর-পূর্ব, ন’পাড়া, রথতলা এলাকার বাসিন্দাদেরও বৃষ্টিতে জলবন্দি হয়েই কাটাতে হয়। নিবেদিতা পল্লির বাসিন্দা তন্ময় খান বলেন, “এই এলাকার সামনে রয়েছে রেলের খাল। বহু বছর সংস্কারের অভাবে খালটি আবর্জনায় ভরে যাওয়ায় জল আটকে থাকে। সামান্য বৃষ্টিতেই উপচে পড়ে জল। বারাসত পুরসভা রেলের সঙ্গে কথা বলে খালটির সংস্কার করলে এই সমস্যার সমাধান হতে পারে।” মধ্য বালুড়িয়ার বাসিন্দা রাহুল রায়েরও অভিযোগ, “নর্দমা কোথাও আছে, কোথাও নেই।
সাফাইও সর্বত্র হয় না। আবার নর্দমাগুলির সর্বত্র সংযোগও নেই। ফলে একটু বৃষ্টিতেই এলাকা ডুবে যায়।”
৩০ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা শৌভিক বিশ্বাসের কথায়: “এলাকার সর্বত্র নর্দমা সাফাই করা হয় না। কাউন্সিলরকে বহু বার বলেও কাজ হয়নি। উল্টে বড় পরিকল্পনার কথা শুনিয়ে আশ্বস্ত করে রাখা হয় এলাকাবাসীকে। ওই ওয়ার্ডের নির্দল কাউন্সিলর সমীর চট্টোপাধ্যায় অবশ্য বলেন, “সাফাইয়ের কাজ কেন ঠিক মতো হচ্ছে না, এলাকাবাসীর সঙ্গে কথা বলে সুপারভাইজারদের ডেকে তা জানতে চাইব। তবে অতীতে খেয়ালখুশি মতো নর্দমা তৈরি করা হয়েছে বলে এখন ভুগতে হচ্ছে। আমরা পরিকল্পিত ভাবে নর্দমা তৈরি করতে চাইছি। বাসিন্দাদের সেটাই বলা হয়েছে।”
বারাসত পুরসভার চেয়ারম্যান, তৃণমূলের সুনীল মুখোপাধ্যায় বলেন, “বারাসত পুরসভার প্রধান সমস্যা নিকাশি। পরিকল্পনাহীন ভাবে নর্দমা তৈরির ফলেই এই সমস্যা। আমরা বছরের বিভিন্ন সময়ে একাধিক বার নর্দমা সাফাই করি। তবে, এলাকাবাসী বাড়ির যাবতীয় আবর্জনা নর্দমায় ফেলায় দ্রুত নর্দমা ভরাট হয়ে যায়। বর্ষার মরসুমে জল যাতে দ্রুত সরতে পারে, তার জন্য নর্দমা পরিষ্কারের কাজ চলছে।”
এলাকাবাসীর আরও অভিযোগ, নর্দমার সংস্কার না করেই সাফাই করছে পুরসভা। এলাকার সর্বত্র পাকা নর্দমা তৈরি হয়নি। কাঁচা নর্দমা ভেঙে যাওয়ায় জল সরে না। ফলে জল জমে থাকায় ভোগান্তি বাড়ে। ভ্যানচালক প্রবীর মণ্ডল বলেন, “জলমগ্ন রাস্তায় ভ্যান চালাতে বেশ কষ্ট হয়। তখন আমরা বেশি ভাড়া নিই। এ ছাড়া, রাস্তাগুলো এবড়োখেবড়ো হওয়ায় এবং বিভিন্ন জায়গায় গর্ত থাকায় পাথরের টুকরোর আঘাতে ভ্যানের চাকা নষ্ট হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। পুরসভা নর্দমা বা রাস্তা কোনওটাই সময়মতো সংস্কার করে না।”
পুর চেয়ারম্যান অবশ্য এর দায় চাপাচ্ছেন কাউন্সিলরদের উপরেই। তাঁর বক্তব্য, “নর্দমা সাফাই এবং সংস্কারের জন্য পর্যাপ্ত টাকা বরাদ্দ করা হয় কাউন্সিলরদের। সদিচ্ছা থাকলে সেই টাকাতেই বছরভর নর্দমা সাফাই বা সংস্কার করা যায়। শহরের অধিকাংশ বড় নর্দমার উপরে দোকান থাকার দরুণ সাফাই করা যায় না। নর্দমা সাফাইয়ের উদ্দেশ্যে ওই সব দোকানদারদের অন্যত্র সরে যেতে বলেছি। এর পাশাপাশি স্থানীয় কাউন্সিলরদেরও বলব পুর এলাকার সমস্ত নর্দমা সাফাই ও সংস্কার করতে।”

ছবি: সুদীপ ঘোষ




অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.