আবেগ বনাম বাস্তবের কঠিন লড়াইয়ে মনে হচ্ছে আবেগই জিতে গেল।
যুবরাজ সিংহ সম্পূর্ণ সুস্থ থাকার সার্টিফিকেট পেয়ে গিয়েছে। তা-ও বলব, প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ ক্রিকেটে ওর প্রত্যাবর্তন ঘটছে খানিকটা আগেই। সামনেই টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। নিউজিল্যান্ড সিরিজ। যুবরাজ টিমের সঙ্গে থাকুক, কিন্তু মাঠে নেমে লড়াইয়ে যেন এখনই না ঢুকে পড়ে। আমি অন্তত এখনই জাতীয় দলের জার্সি গায়ে ব্যাট-বল হাতে নেমে পড়াটা পুরোপুরি সমর্থন করতে পারছি না।
যুবরাজ ‘ফিট সার্টিফিকেট’ পেয়েছে কারণ, ক্যানসারের কোনও উপসর্গ আর ওর শরীরে নেই। সেই সঙ্গে কেমোথেরাপির পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আর চোখে পড়ছে না। তবে এই ধরনের লম্বা কেমোথেরাপির মধ্যে দিয়ে যাদের যেতে হয়, তাদের শরীরে পরে নানা পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া দেখা দিতে পারে। যেমন এক, হাতে-পায়ে যথেষ্ট জোর না থাকা। দুই, ক্লান্তি। প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে তো খাটুনির পরিমাণ যথেষ্ট। তাই একটু বেশি পরিশ্রম করলেই ক্লান্ত হয়ে পড়তে পারে। আর তিন নম্বর হল, পেরিফেরাল নিউরোপ্যাথি। এতে শরীরের বাইরের দিকের অঙ্গপ্রত্যঙ্গগুলোতে স্নায়ুর এক ধরনের দুর্বলতা তৈরি হয়। ফলে হাত-পা ঝিনঝিন করে। এ জন্যই যে মেডিক্যাল বোর্ড যুবরাজকে ‘ফিট সার্টিফিকেট’ দিয়েছে সেই বোর্ডে এক জন ক্যানসার বিশেষজ্ঞ-র থাকা জরুরি ছিল।
যুবরাজকে যত দিন এই জার্ম সেল ক্যানসারের সঙ্গে লড়তে হয়েছে, বা যত দিন ওর কেমোথেরাপি চলেছে তাতে আমার মনে হয় আরও কয়েক মাস ওর মাঠের ধারে কাটানো উচিত ছিল। অন্তত আরও দু’-তিন মাস। মাঠের মধ্যে এখনই নেমে পড়ার মধ্যে কোথাও যেন নিজেকে সুস্থ প্রমাণ করার তাগিদটাই বেশি নজরে পড়ছে। তাতেই মনে হচ্ছে, আবেগকেই কি বেশি গুরুত্ব দিয়ে ফেলল যুবরাজ?
আমার মনে হয়, তাড়াহুড়ো না করলে ওর ক্রিকেটজীবন আরও লম্বা হত। আমি চাই ও অবশ্যই বেশি দিন খেলুক। সে জন্যই বারবার মনে হচ্ছে, ব্যাট হাতে টুর্নামেন্টে নামার আগে যদি আর একটু বেশি সময় ও মাঠের বাইরে কাটানোর সুযোগ পেত! ধীরে চলো নীতিটাই হয়তো ওকে বিজয়মুকুট পরাত।
(লেখক বিশিষ্ট ক্যানসার শল্য চিকিৎসক) |