|
|
|
|
ধোনি ০-৮ থেকে বেকসুর খালাস হয়ে গেলেন |
গৌতম ভট্টাচার্য • কলকাতা |
চলচ্চিত্রের সাম্প্রতিক বক্স অফিস অনুযায়ী ভূতেদেরও ভবিষ্যৎ আছে! মহেন্দ্র সিংহ ধোনির নেতৃত্বে বর্তমান ভারতীয় ক্রিকেট দলের আছে কি? মুম্বইয়ে এ দিন জাতীয় নির্বাচক কমিটির দীর্ঘ বৈঠকের পর ক্রিকেটমহলে প্রশ্নটা উঠে পড়ল।
যুবরাজ-রূপকথার চাদরে, যুবরাজের প্রত্যাবর্তন ঘিরে দেশজ উন্মাদনায় ঢাকা পড়ে গেল অনেক ক্ষত। আরও নানান হাস্যকর বিচ্যুতি। এই প্রথম তিন ধরনের ক্রিকেটে ভারতের তিন সহ-অধিনায়ক। টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ দলে গৌতম গম্ভীর। বোঝা গেল কেকেআরের আইপিএল জেতা স্বীকৃতি পেল। প্রশ্ন হল, তা হলে ওয়ান ডে টিমে বিরাট কোহলিকে সহ-অধিনায়ক রেখে দেওয়া হল কেন? এটাও প্রশ্ন যে টেস্ট টিমের সহ-অধিনায়ক কে? জিজ্ঞেস করায় প্রভাবশালী নির্বাচক বললেন, “কেন সহবাগ!” ভারতীয় ক্রিকেট একই সিরিজে চারজন ক্যাপ্টেন দেখেছে। কিন্তু একই মরসুমে তিন ভাইস ক্যাপ্টেন দেখেনি।
মনোজ তিওয়ারি আর অশোক দিন্দা এ দিন টি-টোয়েন্টি দলে নির্বাচিত হলেন। কিন্তু টেস্ট দলে তাঁদের নেওয়ার কথা উঠতেই সভায় পেশ হল হাস্যকর সব চিত্র। ধোনি আর কোচ ডানকান ফ্লেচার ছিলেন ভিডিও কনফারেন্সে। তাঁরা বললেন, মনোজের শর্ট বল খেলায় সমস্যা। দ্রুত পূর্বাঞ্চল নির্বাচক ধরিয়ে দেন, সে তো রায়নারও বহুদিনকার সমস্যা। তখন ধোনি বলেন, রায়নার সুবিধে হল ও বাঁ-হাতি। আর তাই রায়না থাকলে ব্যাটিং অর্ডারে বৈচিত্র থাকে। এই ধরনের যুক্তি কোনও অধিনায়ক কখনও পেশ করেছেন কি না তর্কের বিষয়। যদিও এর পর টি-টোয়েন্টি দলে অজিঙ্ক রাহানে বনাম মনোজ তিওয়ারি তর্ক উঠলে ধোনিরা বঙ্গসন্তানকে বেছে নেন। দিন্দার কথা উঠলে নির্বাচকরা বলতে থাকেন, ইশান্ত শর্মাকে নিতেই হবে। ভবিষ্যৎ ভারতীয় বোলিংকে জাহিরের অনুপস্থিতিতে ও-ই নেতৃত্ব দেবে। দিন্দার অ্যাটিটিউড খুব ভাল। কিন্তু ইশান্তের আগে ও কী করে নেওয়া হবে? কারও হাতে নিশ্চয়ই গত অস্ট্রেলিয়া সিরিজের হিসেব ছিল না। যেখানে সবুজ গতিশীল উইকেটে ইশান্ত উইকেটপিছু ৯০ গড় নিয়ে ফিরেছেন। লক্ষ্মীপতি বালাজি অবশ্য ফিরলেন আইপিএলের পারফরম্যান্স দেখিয়ে। নির্বাচনী হরেকরকমবার মধ্যে প্রশ্ন উঠছে রোহিত শর্মাকে দলে রাখা নিয়েও। বলা হচ্ছে, আইপিএল ফাইভে রাহানে যখন ধারাবাহিক ভাবে রান পেয়েছেন, তা হলে তাঁর বদলে রোহিত কেন? |
|
যুবরাজ সিংহের সুস্থতা পরীক্ষায় বোর্ড কোনও অঙ্কোলজিস্টের সার্টিফিকেট জোগাড় করেনি যদি বা বোঝা গেল। কিন্তু অস্ট্রেলিয়া সিরিজের ওপর শ্রীকান্তের নির্বাচক কমিটিকে যে ন্যূনতম ময়নাতদন্ত করার নির্দেশ দিল না, তা অবিশ্বাস্য। প্রাক্তন জাতীয় ক্রিকেটারদের অনেকেই এ দিন বলছিলেন, ০-৮ টেস্ট ম্যাচ হার কি সত্যিই হয়েছিল? নাকি গোটা ব্যাপারটা বিভ্রম ছিল? সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায় বললেন, “আশ্চর্য লাগছে। ০-৪-এর পরেও সেই একই দল।”
জিজ্ঞেস করায় এক নির্বাচক বললেন, “এ সব নিয়ে কোনও আলোচনা হয়নি। আমরা শুনেছি শ্রীনিবাসন নাকি কোচ-ক্যাপ্টেনকে বলেছেন, আমাদের ফল উদ্বেগজনক।” অনেক কর্পোরেট সংস্থা যেমন বহুজাতিক উপদেষ্টা সংস্থা ম্যাককিন্সে-কে দিয়ে ভেতরকার পরিস্থিতি ‘স্ক্যান’ করায়। তেমনি এর অর্ধেক খারাপ পারফরম্যান্সে গত বছর ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া ডন আর্গাস নামক এক ব্যক্তিকে দিয়ে টিম পারফরম্যান্স রিভিউ করিয়েছিল। ক্রিকেটমহলে তা আর্গাস রিপোর্ট নামে সুপরিচিত। ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ডও বারবার দলের বিপর্যয়ের সময় প্রাক্তন অধিনায়কদের জড়ো করে উত্তর সন্ধান করতে চেয়েছে।
ভারতীয় বোর্ড সে সব করা দূরে থাক, বৈঠকি আলোচনার পর্যায়েও গেল না। অবসর নেওয়া রাহুল দ্রাবিড়কে বাদ দিলে অপরিবর্তিত রেখে দিল অস্ট্রেলিয়ার দল। আর মহেন্দ্র সিংহ ধোনি? কোনও ভারত অধিনায়ক আজ পর্যন্ত এই পরিস্থিতিতে বাঁচেনি। কিন্তু তিনি, ধোনি ০-৪ সিরিজ হেরে, ২০ ব্যাটিং গড় নিয়ে ফেরা ক্যাপ্টেন বেকসুর খালাস পেয়ে গেলেন। দ্বিতীয় উইকেটকিপার হিসেবে ঋদ্ধিমান সাহার নিউজিল্যান্ড সিরিজের দলে ঢোকার কথা। অ্যাডিলেডের শেষ টেস্ট ম্যাচে ঋদ্ধি চমৎকার ব্যাটও করেছিলেন। কিন্তু এনসিএ জানিয়েছে সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহ অবধি তাঁর চোট। ঋদ্ধিকে তাই দলে নেওয়া যায়নি।
উত্তেজিত ক্রিকেটমহল বারবার প্রশ্ন করছে, নির্বাচকেরা সরেজমিন যখন এ বার অস্ট্রেলিয়ায় হাজির ছিলেন, তাঁরা সফর নিয়ে কথা বললেন না কেন? অনেক সময় টিম অজুহাত দেয়, আপনারা টিভি দেখে বোঝেননি। পরিস্থিতি অন্য রকম ছিল। এখানে সেই অজুহাতেরও উপায় ছিল না। অথচ তাঁরা ভারতীয় ক্রিকেট ইতিহাসের শোচনীয়তম বিপর্যয় নিয়ে কোনও রকম কাটাছেঁড়ায় যাননি।
প্রধানত মোহিন্দর অমরনাথের উদ্যোগে এ দিন দলে ফিরলেন হরভজন সিংহ। কিন্তু টেস্ট দলে তাঁকে ফেরানোর ব্যাপারে আপত্তি তোলেন বাকি নির্বাচকেরা। বলেন অশ্বিন তো অস্ট্রেলিয়ায় ভাল বল করেছে। প্রসঙ্গত, অস্ট্রেলিয়ায় অশ্বিনের বোলিং গড় হল উইকেটপিছু ৬২ রান।
কোচ ডানকান ফ্লেচার কমিটিকে পরামর্শ দিয়েছিলেন, ভিভিএস লক্ষ্মণকে যদি বাদ দিতেই হয়, নিউজিল্যান্ড সিরিজ থেকেই যেন দেওয়া হয়। যাতে তাঁর জায়গায় যে আসবে সে যেন সহজ প্রতিদ্বন্দ্বীর বিরুদ্ধে দুটো টেস্ট ম্যাচ খেলে পরবর্তী দুই জবরদস্ত প্রতিদ্বন্দ্বী ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়ার জন্য তৈরি থাকতে পারে। যে কোনও বিচারে যথেষ্ট যুক্তিপূর্ণ পরামর্শ। কিন্তু নির্বাচকেরা সেটা মানতে পারেননি। নির্বাচক প্রধান নাকি অবসর প্রসঙ্গে কথা বলেছিলেন লক্ষ্মণের সঙ্গে। লক্ষ্মণ তাঁকে বলেছেন, ঘরের মাঠে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে দুটো টেস্ট খেলে অবসর নিতে চান।
তা হলে লক্ষ্মণের ক্রিকেট ভবিষ্যৎ কি ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়া দেশে ঢোকার আগেই শেষ হয়ে যাবে? এক নির্বাচক খানিকটা অসহায় ভাবে বললেন, “শ্রীকান্তকে তো ও সে রকমই বলেছে। তবে যদি আবার রান করে দেয়, তখন জানি না। তখন সেপ্টেম্বরে তো অন্য সিলেকশন কমিটি।”
শুক্রবারের নির্বাচনী সভার এ থেকে জেডবিচার করলে তুলনায় সত্যিই মনে হবে হ্যাঁ, ভূতেদেরও অন্তত ভবিষ্যৎ আছে।
|
টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দল |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (অধিনায়ক), গৌতম গম্ভীর (সহ-অধিনায়ক), বীরেন্দ্র সহবাগ, যুবরাজ সিংহ, বিরাট কোহলি, সুরেশ রায়না, মনোজ তিওয়ারি, রোহিত শর্মা, ইরফান পাঠান, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জাহির খান, লক্ষ্মীপতি বালাজি, পীযূষ চাওলা, হরভজন সিংহ, অশোক দিন্দা।
|
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে টেস্ট সিরিজের দল |
মহেন্দ্র সিংহ ধোনি (অধিনায়ক), বীরেন্দ্র সহবাগ, গৌতম গম্ভীর, সচিন তেন্ডুলকর, লক্ষ্মণ, চেতেশ্বর পূজারা, বিরাট কোহলি, রবিচন্দ্রন অশ্বিন, জাহির খান, প্রজ্ঞান ওঝা, উমেশ যাদব, অজিঙ্ক রাহানে, পীযূষ চাওলা, ইশান্ত শর্মা, সুরেশ রায়না। |
|
|
|
|
|
|