এফ আই আর নিয়ে প্রশ্ন, বেকসুর খালাস অভিযুক্তেরা
ভিযোগপত্রে ‘টিপসই’টি কার? থানার এফআইআরের বয়ানটাই বা কার লেখা? প্রশ্নের জবাব না-মেলায় পাঁচ বছর আগে দায়ের হওয়া বধূ-হত্যার মামলা ভেস্তে গেল। মৃতা বধূ চন্দনা মণ্ডলের স্বামী-শাশুড়ি-দেওর-ননদেরা আদালতের নির্দেশে বেকসুর খালাস পেলেন।
নদিয়ার চন্দনার সঙ্গে কসবার এক যুবকের বিয়ে হয় ২০০০ সালে। ২০০৬ সালের ২৪ জুলাই চন্দনা আগুনে পুড়ে মারা গিয়েছিলেন। যৌতুকের দাবিতে ওই বধূকে পুড়িয়ে মারার অভিযোগে তাঁর স্বামী, শাশুড়ি, দেওর এবং অবিবাহিতা ননদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়। মাসখানেক হাজত-বাসের পরে জামিনে ছাড়া পান অভিযুক্তেরা। ছ’বছর ধরে আদালতে মামলার সাক্ষ্যসাবুদও চলতে থাকে। কিন্তু আলিপুর অষ্টম ফাস্ট ট্র্যাক কোর্টে মূল অভিযোগটাই শেষ পর্যন্ত ধোপে টিকল না।
মৃতা বধূর পরিবারের কেউ নন, কসবা থানার পুলিশই এক ব্যক্তিকে দিয়ে ওই অভিযোগ লিখিয়েছে বলে আদালতে পুলিশের দিকে আঙুল উঠেছে। বিচার চলাকালীন মামলার অন্যতম সাক্ষী শতদল গুহ স্বীকার করেন, পুলিশের চাপে তিনি নিজেই অভিযোগের বয়ান লিখতে বাধ্য হয়েছিলেন। বিচারক গোপালকুমার ডালমিয়া মঙ্গলবার মৃতা বধূর স্বামী-সহ এই মামলার চার অভিযুক্তকে বেকসুর খালাস করে দিয়েছেন। এমনকী, সাক্ষ্যসাবুদ থেকে মৃতার বাপের বাড়ি ও শ্বশুরবাড়ির মধ্যে সদ্ভাবের অভাব দেখা যাচ্ছে না বলেও বিচারক তাঁর রায়ে জানিয়ে দিয়েছেন।
অভিযোগপত্রটি লেখা ছিল চন্দনার মা সত্তরোর্ধ্বা পারুলবালাদেবীর বয়ানে। মামলার অভিযোগকারী হিসেবে তাঁকেই দেখিয়েছিল পুলিশ। কিন্তু ঘটনাটি ঘটার সময় থেকেই তিনি অসুস্থ এবং শয্যাশায়ী। মৃতার দাদা, দিদি, জামাইবাবু ও আত্মীয়েরা সকলেই তাঁদের সাক্ষ্যে আদালতকে জানিয়েছেন, পারুলবালা কখনওই তাঁর মেয়ের মৃত্যুর বিষয়ে থানায় কোনও অভিযোগ জানাতে যাননি। পুলিশও তাঁর কাছে থেকে কখনও কোনও অভিযোগ নিতে আসেনি। সুতরাং অভিযোগপত্রের টিপসইটি আদৌ পারুলবালার কি না, তার সদুত্তর মেলেনি। ফলে, অভিযোগপত্রটিই মানতে চাননি বিচারক।
ঠিক কী ঘটেছিল মামলার সাক্ষ্যগ্রহণ-পর্বে? শতদল গুহ নামে এক যুবককে সাক্ষী হিসেবে আদালতে নিয়ে আসে পুলিশ। তখনই গোলযোগের সূত্রপাত। অভিযুক্তদের আইনজীবী শ্যামলকান্তি বন্দ্যোপাধ্যায়ের জেরায় শতদলবাবু বলেন, কসবার বধূ-মৃত্যুর এক মাস বাদে পুলিশই তাঁকে থানায় ডেকে একটি সাদা কাগজ এগিয়ে দিয়ে কয়েকটি কথা লিখতে বলে। না-লিখলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও শাসায় পুলিশ। শতদলবাবু দাবি করেন, পুলিশের ভয়েই তিনি মৃতা বধূর শ্বশুরবাড়ির লোকেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ লিখতে বাধ্য হন। থানায় বসে এই অভিযোগ লেখার সময় তিনি ও পুলিশ ছাড়া আর কেউ সেখানে ছিলেন না। অভিযোগ লেখার কাগজে কোনও টিপসই-ও তখন তাঁর চোখে পড়েনি। এই টিপসই নিয়ে সংশয়েই মামলাটি আদালতে ধোপে টিকল না। অথচ, এই মামলার জেরে চন্দনার শ্বশুরবাড়ির লোকেদের ছ’বছর ধরে ‘অপবাদ’ সহ্য করতে হয়েছে। চন্দনা যখন মারা যান, তখন তাঁর ছেলের বয়স ছিল তিন বছর। এখন বাবা-ঠাকুমাদের কাছে থেকেই সে স্কুলে পড়াশোনা করছে।
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.