স্কুলের বিরুদ্ধে মানবাধিকার কমিশনকে চিঠি কিশোরের
গোটা গোটা হরফে মানবাধিকার কমিশনের কাছে চিঠি লিখেছিল বারো বছরের ছেলেটি— ‘স্কুলে যেতে আমার খুব ভয় করছে। আমার ক্লাসের কিছু ছেলে আর কয়েক জন মাস্টারমশাই আমাকে খুব মারছেন। আমি কোনও দিন মরে যাব।’ শেষ পর্যন্ত গত মঙ্গলবার থেকে স্কুলে যাওয়া বন্ধ করে দিয়েছে শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের অষ্টম শ্রেণির ওই ছাত্র মানসকুমার বিশ্বাস। মানস ও তার মা শীলাদেবীর অভিযোগ, কয়েক জন সহপাঠী, তাদের অভিভাবক ও স্কুলের কয়েক জন শিক্ষক টানা পাঁচ মাস ধরে নানা ভাবে শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন চালিয়েছেন মানসের উপরে।
শুক্রবার দুপুরে সুকিয়া স্ট্রিটের কাছে জগন্নাথ দত্ত লেনে এক তলার অন্ধকার ঘুপচি ঘরের খাটে চুপ করে শুয়েছিল মানস। শরীরের একাধিক জায়গায় ক্ষত আর কালশিটে। চোখে-মুখে ভয়ের ছাপ। সে জানাল, গত ফেব্রুয়ারি মাসে কয়েক জন সহপাঠীর সঙ্গে ক্লাসে সামনের বেঞ্চে বসা নিয়ে তার ঝগড়া হয়। তার পর থেকেই যাবতীয় সমস্যার সূত্রপাত। মানবাধিকার কমিশনকে চিঠিতে সে লিখেছে, ‘ক্লাসেরই কয়েক জন আমাকে রোজ খুব মারে, গলা টিপে ধরে, বইখাতা ছিঁড়ে দেয়। হেডস্যারকে বললে উল্টে উনি আমাকে ওঁর ঘরে ডেকে নিয়ে মারেন।’
মানস জানিয়েছে, ফেব্রুয়ারি মাসেই রাজ্য মানবাধিকার কমিশনে চিঠি দিয়েছিল সে। মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান অশোককুমার গঙ্গোপাধ্যায় এ ব্যাপারে বলেন, “ফেব্রুয়ারিতে আমি দায়িত্বে ছিলাম না। তখন কেন বিষয়টি দেখা হয়নি, জানি না। তবে মানস এখন আমাদের কাছে এলে নিশ্চয়ই তদন্ত করে দেখব।”
নিজের বাড়িতে মানস। —নিজস্ব চিত্র
মানসের মা শীলাদেবীর অভিযোগ, শ্যামপুকুর থানায় গত ১২ জুলাই ও ৭ অগস্ট দু’বার ডায়েরি করার পরেও পুলিশের কাছ থেকে সহযোগিতা মেলেনি। ওই থানার ওসি শুভেন্দু বারিক অবশ্য বলেছেন, “এটা বাচ্চা ছেলেদের মারামারির ব্যাপার। আমরা কী করতে পারি? তবে, ওই মহিলা এখন এক বার এলে আমরা মিটমাট করানোর চেষ্টা করব।”
অন্য দিকে, শ্যামবাজার এ ভি স্কুলের ম্যানেজিং কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট দেবদাস গঙ্গোপাধ্যায় এ ব্যাপারে জানান, স্কুলে বাচ্চাদের মারা হয় কি না, সেটা তাঁদের দেখার কথা নয়। তিনি বলেন, “স্কুলের পড়াশোনা, আইনশৃঙ্খলা সবই প্রধান শিক্ষক দেখবেন। আমরা বাইরে থেকে নির্বাচিত সদস্য। আমাদের ও সব দেখার অধিকার নেই।” প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জনকুমার রফতান আবার সব শুনে ক্ষুব্ধ ভাবে মন্তব্য করেন, “মানস ছেলেটা ক্রিমিনাল। ওকে আমি জুভেনাইল বোর্ডে বিচারের জন্য দেব। ওর এত সাহস যে আমার বিরুদ্ধে থানায় যায়! আর আমার স্কুলে কোন বাচ্চার উপরে মানসিক নির্যাতন হচ্ছে, কে মার খাচ্ছে, তা নিয়ে সাংবাদিকদের এত মাথাব্যথা কেন?” মানসের কথায়, “ক্লাস এইটে কি আমাকে অন্য কোনও স্কুল নেবে? ওই স্কুলে গেলে তো আবার ওরা মারবে। আমি কি আর পড়াশুনো করতে পারব না?” তার মা-ও কেঁদে ফেলে বলেন, “এই ছেলে ছাড়া আমার কেউ নেই। ছেলেটা পড়াশোনায় এত ভাল। ভয়ে স্কুলে যাচ্ছে না। ওকে বাঁচান।”
 
 
 


First Page| Calcutta| State| Uttarbanga| Dakshinbanga| Bardhaman| Purulia | Murshidabad| Medinipur
National | Foreign| Business | Sports | Health| Environment | Editorial| Today
Crossword| Comics | Feedback | Archives | About Us | Advertisement Rates | Font Problem

অনুমতি ছাড়া এই ওয়েবসাইটের কোনও অংশ লেখা বা ছবি নকল করা বা অন্য কোথাও প্রকাশ করা বেআইনি
No part or content of this website may be copied or reproduced without permission.