টিউশন নিতে বেরিয়ে আর বাড়ি ফেরেনি দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্রীটি। অবশেষে পরের দিন সকালে বাড়ি থেকে বেশ কিছুটা দূরে একটি পুকুর থেকে তার মৃতদেহ উদ্ধার করল পুলিশ। শুক্রবার ঘটনাটি ঘটেছে বরাহনগরের ডাক্তারবাগান এলাকায়। পুলিশ জানায়, ওই ছাত্রীর নাম পূজা সাউ (১৭)।
পুলিশ সূত্রের খবর, বরাহনগরের ১৮ নম্বর ওয়ার্ডের মেট্রো কলোনির বাসিন্দা পূজা বনহুগলি রামকৃষ্ণ সারদা বিদ্যামন্দিরের কলা বিভাগে পড়ত। দশ মাস বয়সে মা মারা যাওয়ার পর থেকে সে পিসির কাছে থাকত। তাই পিসি মীনা বেগম ও পিসেমশাই জাকির হোসেনকে মা-বাবা বলেই ডাকত পূজা। তার নিজের বাবা কিশোরী সাউ ট্যাংরার বাসিন্দা।
পূজার পরিবারের তরফে পুলিশকে জানানো হয়েছে, প্রতিদিন বিকেলে টবিন রোডের নেতাজি কলোনিতে পড়তে
|
পূজা সাউ |
যেত ওই কিশোরী। বৃহস্পতিবার বিকেলেও পড়তে বেরিয়েছিল সে। রাত দশটা বেজে গেলেও বাড়ি না ফেরায় প্রতিবেশীদের নিয়ে এলাকায় তাকে খুঁজতে বেরোন জাকির। তিনি জানান, পূজার শিক্ষকের সঙ্গে যোগাযোগ করলে জানা যায়, রাত সাড়ে আটটা নাগাদ কোচিং থেকে বেরিয়ে যায় পূজা।
এ দিন সকাল সাড়ে সাতটা নাগাদ জাকিরের মোবাইলে ফোন করে কেউ জানান, ডাক্তারবাগান এলাকায় রেললাইনের ধারে একটি পুকুরপাড়ে পূজার ব্যাগ পড়ে রয়েছে। খবর পেয়েই সেখানে ছুটে যান জাকিরেরা। গিয়ে দেখেন, পুকুরপাড়ে পূজার জুতোও পড়ে রয়েছে। ব্যাগের ভিতরে ওই ছাত্রীর হাতঘড়ি, টাকার ব্যাগ মেলে। কিন্তু পুকুরে কোনও দেহ ভাসতে দেখা যাচ্ছে না। বিষয়টি জানতে পেরে স্থানীয় তৃণমূল কাউন্সিলর সুনাথ বিশ্বাস বরাহনগর থানায় খবর দেন। পুলিশ সূত্রে খবর, এ দিন সকালে ডাক্তারবাগান এলাকার ওই পুকুরপাড়ে এসে ব্যাগটি দেখতে পেয়ে বাড়িতে নিয়ে যায় স্থানীয় এক বালক। ব্যাগের ভিতরে থাকা স্কুলের পরিচয়পত্র থেকে বাড়ির ফোন নম্বর পেয়ে জাকিরকে খবরটি জানিয়েছিলেন ওই বালকের পরিবারের লোকেরা।
পুলিশ জানায়, খবর পেয়েই ঘটনাস্থলে পুলিশ-কুকুর ও ডুবুরি নিয়ে যাওয়া হয়। শেষে দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ পুকুর থেকে পূজার দেহ উদ্ধার হয়। তবে দেহে আঘাতের চিহ্ন ছিল না। এ দিন ডাক্তারবাগান এলাকার ওই পুকুরপাড়ে গিয়ে দেখা যায়, শিয়ালদহ মেন শাখার পাশে বাগজোলা খাল। তার পাশেই রয়েছে পুকুরটি। মাঝে মাটির রাস্তায় পড়ে ছিল ব্যাগটি। স্থানীয় লোকেরা জানান, রাতের অন্ধকারে ওই রাস্তায় চলে বিভিন্ন সমাজবিরোধী কাজকর্ম। প্রাথমিক তদন্তে পুলিশ জানিয়েছে, ওই ছাত্রী আত্মহত্যা করেছে। অতিরিক্ত ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (বেলঘরিয়া) বিশ্বজিৎ ঘোষ বলেন, “প্রাথমিক ভাবে সমস্ত দিক খতিয়ে দেখে মনে হচ্ছে, ওই ছাত্রী আত্মহত্যাই করেছে। কিন্তু আমরা সমস্ত দিকই খতিয়ে দেখছি। ওই এলাকায় প্রায়ই অভিযান চালানো হয়।” তবে পূজার বাড়ির লোকেরা স্পষ্ট জানিয়ে দিয়েছেন, সে আত্মহত্যা করতে পারে না। এমনকী, নেতাজি কলোনি থেকে ওই পুকুরপাড় হয়ে সহজে বাড়ি ফেরা গেলেও পূজা কোনও দিনই তা করত না। তাই কেউ তাকে মেরে ওই পুকুরে ফেলে দিয়েছে বলেই মনে করছেন জাকিরেরা। যদিও তাঁরা এ বিষয়ে থানায় কোনও অভিযোগ করেননি। তবে, অত রাতে পূজা ওই পুকুরপাড়ে কী কারণে গিয়েছিল, তা তদন্ত করে দেখছে পুলিশ। |